শনিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১২

হাসির রাজা চার্লি

দীপক রায়, ভারত থেকে :: এই এপ্রিল মাসে ইংলন্ডের লন্ডন শহরে জন্ম নিয়ে খুবই অভাবের মধ্যে বেড়ে উঠে সারা দুনিয়াকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন যে মানুষটি, তার নাম চার্লি চ্যাপলিন। তার আসল নাম ছিল চার্লস স্পেন্সার চ্যাপলিন। সেটাই পরে কেটেছেটে সংক্ষেপে হয়ে গিয়েছে চার্লি চ্যাপলিন। ছেলেবেলায় অভাবের মধ্যে দিয়ে বেড়ে উঠলেও, চার্লির বাবা ছিলেন বেশ নামডাকওলা ধনী লোক। কিন্তু তার মা-বাবার মধ্যে বিচ্ছেদ তাদের পরিবারে অভাবের কারন হয়ে দাড়িয়েছিল। চার্লির মা থিয়েটারে অভিনয় করে, সেলাইয়ের কাজ করে কোনমতে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু তাতেও যখন সমস্যা মিটল না, তখন বাধ্য হয়ে চলে গেলেন অনাথ আশ্রমে। আর সেখানেই চার্লির বড় হওয়া। কিন্তু সেখানেও দুঃখের শেষ ছিল না চার্লির। তার মা শেষ জীবনে হয়ে গেলেন উন্মাদ। তবুও মাত্র চার বছর বয়সেই চার্লি মা-বাবার অভিনয় আয়ত্ত করে ফেলেছিলেন। লন্ডনের বিভিন্ন ভাটিখানা, রাস্তাঘাটে, পার্কে, হোটেলে অঙ্গভঙ্গী নকল করে, অভিনয় করে পয়সা উপার্জন করতে শুরু করেন। কখনো কোন ভিখারীর সাথে গান-বাজনা করেছেন, আবার কখনো বা নেচেছেন। তাতেও যখন সমস্যা মেটেনি তখন ফুল বিক্রি করতে নেমে পড়েন। ফলে একসময় অনাথ আশ্রম আর স্কুলের পড়াশোনা লাটে তুলে দিয়ে বেরিয়ে পড়লেন কাজের খোজে। এরপরে চার্লি একটি মুদির দোকানেও কিছুদিন কাজ করেছিলেন। সেখানে কাজ চলে যাবার পরে কাজ নিয়েছিলেন একটি ডাক্তারখানায়। সেখানে কাজ চলে যাবার পরে লোকের বাড়ির বাসন মাজার কাজে লেগে পড়েন চার্লি। সেখানেও বেশিদিন স্থায়ী হল না সেই কাজ। এরপরে একের পর এক কাচের কারখানা, রঙের দোকান, লোহার দোকান, ছাপাখানা, খেলনা কারখানা, কাঠচেরাই কল, কাগজ বিক্রি ইত্যাদি নানা কাজের মধ্যে তিনি যুক্ত হয়ে পড়েছিলেন।
এত কাজের মধ্যে থাকলেও চার্লির মনের মধ্যে অভিনেতা হবার স্বপ্ন কিন্তু ছিলই। ফলে তিনি এবার কাজ নিলেন ল্যাঙ্কশায়ারের একটি অভিনয়ের দলে। সেই শুরু, এরপর ডাক এলো এক থিয়েটার কোম্পানী থেকে। তখন তার বয়স মাত্র বারো। সেখানে শার্লক হোমস নাটকে চাকরের চরিত্রে অভিনয় করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। এরপরে আর তাকে কখনো পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। কিন্তু সেই সব কিছুকে ছাপিয়ে যায় চার্লি যখন ২৫ বছর বয়সে ১৯১৪ সালে প্রথম সিনেমাতে অভিনয় করলেন। মেকিং এ লিভিং ও কট ইন দ্য রেইন নামে দুটি ছবি তিনি সেই একই বছরে করেছিলেন। তবে এর আরো অনেক পরে ১৯২১ সালে ৩২ বছর বয়সে দ্য কিড ছবিতে অভিনয় তাকে খ্যাতির চূড়ায় নিয়ে যায়। অবশ্য দ্য কিড ছবির গল্পটিও চার্লিরই লেখা ছিল। এরপরে দ্য আইডল ক্লাস, গোল্ড রাশ, সিটি লাইটস, দ্য গ্রেট ডিক্টেটর ইত্যাদি মোট ৮৫ টি ছবিতে অভিনয় করেন। কিন্তু দ্য গ্রেট ডিক্টেটর ছবিটিতে হিটলারের মতো টুপি-গোফ তাকে সারা দুনিয়ায় বিখ্যাত করে তোলে। আর সেটাই হয়ে ওঠে চার্লির মার্কিং সিম্বল।
যেই চার্লির জীবনে বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ অভাব সৃষ্টি করেছিল, সেই চার্লিও নিজের জীবনে বিচ্ছেদের কবলে পড়েছিলেন। তার প্রথমা স্ত্রী মিল্ড্রেড হ্যারিসের সাথে বিবাহিত জীবন ছিল মাত্র ৬ বছরের। তারপরে দ্বীতীয় স্ত্রী লিটা গ্রের সাথেও সম্পর্ক ছিল মাত্র ৩ বছরের। তবে তিনি নিজের সন্তানদের কখনো কষ্টের ভাগীদার হতে দেননি। আর নিজেও সারজীবন অভিনয়ের পাশাপাশি সাধারন মানুষের কথা বলে গিয়েছিলেন। একটা নতুন সাম্যবাদী সমাজের স্বপ্ন দেখতেন তিনি। আর সেই কাজে বক্তা হিসাবেও ছিলেন তিনি তুখোড়। এমনকি ইংলন্ডের অধীশ্বর চার্চিলও তার বক্তৃতার গুনগ্রাহী ছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তার ভূমিকা ছিল একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিকের মতো। যুদ্ধের বিরুদ্ধে তিনি বই লিখলেন, সিনেমা করলেন, বক্তৃতাও দিলেন। সেই সময় তার সখ্যতা বাড়লো কমিউনিষ্টদের সাথে। তখন তিনি করেছিলেন সেই বিখ্যাত উক্তি, 'মানুষকে ভালোবাসার জন্য যদি আমাকে কমিউনিষ্ট বলা হয়, তো আমি কমিউনিষ্ট'। নানা বৈচিত্রপূরন এই মানুষটি ১৯৭৭ সালে সুইজারল্যন্ডে ৮৮ বছর বয়সে এক বড়দিনের রাতে প্রয়াত হন।

Ruby