শনিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১২

জীবনের কঠিন সময়েও হাল ছাড়েনী সংগ্রামী নারী ডাক্তার আলেয়া

undefinedএম এম মামুন, মোহনপুর, রাজশাহী) :: আলেয়া বেগম বাস্তবমূখী সংগ্রামী এক নারী। জীবনে অনেক বাধা অতিক্রম করে আজ সমাজে নিজেকে সু-প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে। যে পেশা থেকে আয় করার পাশাপাশি গরীব ও দু:খি মানুষের সেবা করা সম্ভব। নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার পার এনায়েতপুর গ্রামের সেফাতুল্লা আলীর মেয়ে আলেয়া বেগম। বাবার অর্থ সংকট সংসারে তার লেখাপড়ার খরচ জোগাড়ে কঠিন বেগ পেতে হত। তাই নিজ এলাকার একটি উচ্চ বিদ্যালয় হতে মাধ্যমিক পাশ করার পর আরো বড় প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করে ডাক্তার হওয়ার বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে গত ১২ বছর পূর্বে নিজ এলাকা ছেড়ে রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট পৌরসভার রায়ঘাটি গ্রামের আব্দুল জব্বার আলীর বাড়ীতে লজিং থেকে স্থানীয় মহিলা কলেজে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে পড়ালেখা শুরু করতে থাকে। পড়াশোনার পাশাপাশি আয়ের সন্ধান করতে থাকে আলেয়া। তার এক শিক্ষকের পরামর্শে রাজশাহীতে পল্লী চিকিৎসক প্রশিক্ষণে ভর্তি হয়। প্রশিক্ষণ চলা অবস্থায় ২০০৪ সনে সে এইচ.এস.সি পরীক্ষায় অংশ নেন । পল্লী চিকিৎসার প্রশিক্ষণে সময় দেওয়ায় পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়। এরি মধ্যে আলেয়া বাগমারা এলাকার এক যুবকের সাথে বিয়ের পিড়িতে বসে। সংসার জীবনে আলেয়া একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়। পরে স্বামীর সাথে মনোমালিন্য হওয়ায় তাকে রেখে অন্যথায় চলে যায় স্বামী। ভীষণ ভাবে ভেঙ্গে পড়ে সে। নিরূপায় হয়ে  পড়াশোনা বাদ দিতে বাধ্য হয়। মনোযোগী হয়ে পল্লী চিকিৎসকের প্রশিক্ষণ শেষ করে ঝুকে পড়ে ডাক্তারী পেশায়। মানুষের সেবার মধ্য দিয়ে আয় করে আলেয়া। এ থেকে তাকে আর পিছনে ফিরতে হয়নি। বর্তমানে এলাকার  গরীব নারীদের কাছে আলেয়া একজন প্রিয় মুখ। আলেয়া জানান,অভাবী পিতার ঘরে জন্ম নিয়ে জীবনে অনেক কষ্ট করেছি। মনে অনেক স্বপ্ন ছিল ডাক্তারী পাস করে দুঃখি ও অসহায় মানুষের সেবা করবো। কিন্তু অর্থের অভাবে সেটি হয়নি। তবে স্বপ্ন  অনেকটাই পুরণ হয়েছে। পল্লী চিকিৎসক টেনিং শেষে মানুষের সেবা করে অর্থ আয় করে একটি বাইক কিনেছি এবং কেশরহাট পৌরসভা বাজারে অনেক টাকা এ্যাভান্স দিয়ে একটি দোকান ভাড়া নিয়েছি। প্রতিদিন সকালে এলাকার বিভিন্ন গ্রামে নিজে বাইক চালিয়ে রোগী দেখে এস চেম্বারে বসি। ডা: আলেয়া জানান,আমি নারী হওয়ার জন্য আমার অধিকাংশ রোগী মহিলা । কারণ পুরুষ ডাক্তাদের কাছে মহিলা রোগীর গোপন সমস্যা বলতে লজ্জাবত করে। কিন্তু আমার কাছে সব কিছু খুলে বলতে পারে।  আমার প্রতি মাসে সব খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ১৫/২০ হাজার আয় হয়ে থাকে। পৌর বাজারের পাসে ৬ শতক জমি কিনে পাকা টিনসেট বাড়ী করেছি। সংসার জীবনে একটি ছেলে জন্ম হওয়ার পর স্বামী চলে গেছে। আর বিয়ে করার ইচ্ছে নাই। নিজে ডাক্তারী পড়তে পারিনী তাই একমাত্র ছেলেকে বড় ডাক্তার করার জীবনের বড় স্বপ্ন। রাজশাহী অঞ্চলে বহুবিবাহ বিবাহ বিচ্ছেদের প্রথা অনেক কাল থেকে বিদ্যমান। স্বামী ডির্ভোসকৃত নারীরা পেটের দায়ে অনেক খারাপ পেশা পর্যন্ত বেছে নিতে বাধ্য হয়। সেই জায়গা হতে আলেয়া বেগম মত নারী দারিদ্রতার সাথে লড়াই করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তাই আলেয়ার মত সমাজের অবহেলিত নারীরা পরিশ্রমী ও সাহসী হলে অসহায় নারীর সংখ্যা কমে যাবে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করে।
Ruby