মঙ্গলবার, ১ মে, ২০১২

আজ মহান মে দিবস

বাঘা নিউজ ডটকম, ডেস্ক :: আজ পহেলা মে। বিশ্বব্যাপী শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের আন্তর্জাতিক সংহতি প্রকাশের এক ঐতিহাসিক গৌরবময় দিন। আজ থেকে ১২৬ বছর আগে ১৮৮৬ সালের পহেলা মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটে শ্রমের উপযুক্ত মূল্য এবং দৈনিক আট ঘন্টা কাজের দাবিতে শ্রমিকরা ধর্মঘট আহ্বান করে। এতে প্রায় তিন লাখ মেহনতি মানুষ অংশ নেয়। আন্দোলনরত ক্ষুদ্ধ শ্রমিকদের রুখতে মিছিলে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে পুলিশ। দাবি আদায়ের জন্য সেদিন শ্রমিকদের বুকের তাজা রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল শিকাগোর রাজপথ। আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার অপরাধে গ্রেফতারকৃত ৬ শ্রমিককে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। কারাগারে বন্দিদশায় আ�হননও করেন এক শ্রমিক নেতা।
শ্রমিকদের এই আত্নত্যাগ ও রক্তাক্ত ঘটনার মধ্য দিয়ে দৈনিক কাজের সময় আট ঘন্টা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের ঐতিহাসিক বিজয় হয়। এই আত্নত্যাগের বিনিময়েই সেদিন মালিকরা স্বীকার করে নিয়েছিল শ্রমিকরাও মানুষ। তারা যন্ত্র নয়, তাদেরও বিশ্রাম ও বিনোদনের প্রয়োজন আছে। ১৮৮৯ সালে প্যারিসে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে দিবসটিকে মে দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়। সেই থেকে বিশ্বব্যাপী দিনটি মহান মে দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
বিশ্বের সকল দেশেই আজ পালিত হচ্ছে মহান মে দিবস। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশেও নেয়া হয়েছে ব্যাপক কর্মসূচি। আজ সরকারি ছুটির দিন। সংবাদপত্র অফিসও বন্ধ থাকবে। মে দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে সংবাদপত্রগুলো বিশেষ নিবন্ধ, সম্পাদকীয় ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। বেতারসহ বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে প্রচার হচ্ছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। মে দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেত্রীর বাণী
মহান মে দিবসের বাণীতে রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান শিল্প-শ্রমিক ব্যবস্থাপনা সহায়ক পরিবেশ এবং শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্ক বজায় রাখতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। মে দিবস পালনের মাধ্যমে শ্রমজীবী মানুষের ভূমিকাকে শ্রদ্ধা ও সম্মান জানানোর প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, যে কোন দেশের মজবুত অর্থনৈতিক ভিত গড়তে শ্রমজীবী ও মেহনতি মানুষের অবদান সবচেয়ে বেশি।
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান সরকার দেশের শ্রমজীবী মানুষের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল মেহনতি মানুষকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার শ্রমিকদের সার্বিক কল্যাণ এবং ন্যায়সঙ্গত অধিকার সংরক্ষণ ও নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। এ লক্ষ্যে শ্রমিকদের অবসর গ্রহণের বয়সসীমা ৫৭ থেকে ৬০ বছরে উন্নীত করা হয়েছে। এছাড়া শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করতে বন্ধ ২টি পাটকল চালু করা হয়েছে। অবশিষ্ট বন্ধ মিল-কারখানাও চালু করা হবে। প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, শ্রমজীবী মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য বাংলাদেশ শ্রম আইন যুগোপযোগী করা হচ্ছে। তিনি দেশের সার্বিক উন্নয়নে মহান মে দিবসের আদর্শ সমুন্নত রেখে শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেন।
বাণীতে বিএনপির চেয়ারপার্সন ও জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, তার দল শ্রমিকদের ন্যায্য দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল। শ্রমিক সমাজের সার্বিক কল্যাণের লক্ষ্যে তারা সবসময় আপোষহীন সংগ্রাম করে গেছে এবং আগামীতেও তা অব্যাহত থাকবে। খালেদা জিয়া বলেন, শ্রমজীবী মানুষের রক্তঝরা ঘামেই বিশ্ব সভ্যতার বিকাশ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। আজও বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বঞ্চিত নিপীড়িত শ্রমিকের হাহাকার শোনা যায়। বিএনপি চেয়ারপার্সন শ্রমজীবী মানুষের উত্তরোত্তর সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি এবং মহান মে দিবসের সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।
মে দিবস উপলক্ষে জাতীয় শ্রমিক লীগ, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল, জাতীয় শ্রমিক জোট, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি , সিপিবি, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন, জাসদ, গণফোরাম, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ও পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠন, ঢাকা মহানগর ট্যাক্সিক্যাব চালক ইউনিয়ন, টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন পৃথকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
Ruby