সোমবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১২

বাঘা থানাকে মাদক মুক্ত করে ছাড়বেন ওসি আলী আহম্মেদ হাশমী

মোঃ কামরুল হাসান :: রাজশাহীর বাঘা উপজেলাকে মাদক মুক্ত করে সূধী সমাজে পরিণত করার নিমিত্বে মিডিয়া সহ সর্ব মহলকে প্রতিশ্র“তি দিয়েছেন বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা আলী আহম্মেদ হাশমী।
তিনি সাংবাদিকদের জানান, বর্তমানে মরণনেশা ফেন্সিডিল, হেরোইন, গাজা ও মদ পানে আসক্তের সংখ্যা অন্যান্য মাদক আসক্তি জেলা উপজেলার চেয়ে কোন অংশে কম নেই। দিন গেলে বেড়েই চলেছে মাদক ব্যাবসী ও মাদক আসক্তির সংখ্যা।  বর্তমানে এ উপজেলায় মাদকাসক্তের সংখ্যা হাজার হাজার। এর মধ্যে নিয়োমিত হিরোইন সেবনকরী ব্যাক্তির সংখ্যাও অনেক ।
ওসি আলী আহম্মেদ হাশমী বাঘা থানায় যোগদান করেছেন মাত্র ছয় মাস পূর্বে। যোগদান করেই দেখতে পান বাঘা উপজেলায় মাদকের নানাবিধ চিত্র। বাঘা একটি সীমান্তবর্তী উপজেলা। এই এলাকায় এক শ্রেণীর লোক আছে যারা চোরাচালান বানিজ্যের সাথে বহুদিন ধরে সম্পৃক্ত। আর কিছু মানুষ আছে যারা নেশা করে অভ্যাস্ত। এই দুই শ্রেনীর লোকদের সাথে কিছু উচ্চ মহলও জড়িত আছে বলে জানান। এদের কিছুতেই ভাল পথে ফেরানো সম্ভব হয়ে উঠেনি। তাই তিনি এই থানাতে যোগদান করার পর মাদকের সাথে জড়িত লোকদের চিহ্নিত করে বিভিন্ন সময়ে আইনি ব্যাবস্থা নিতে শুরু করেছেন। তিনি এই থানাতে যোগদানের পর এমন কোন মাস নেই যে, দুই-চার জনকে গ্রেফতার করেননি। ওসি আলী আহম্মেদ হাশমি এই থানায় আসার পর বাঘা উপজেলা থেকে মাদকসেবী ও মদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার সংখ্যা  এবং উদ্ধারকৃত ফ্রেন্সিডিল, মদ, গাজা ও তরল ফ্রেন্সিডিলের পরিমান সম্পর্কে জানান, ২০১১ইং সালের ডিসেম্বর মাসে ৯ দিনের ব্যবধানে ২২৯ বোতল ফেন্সিডিল, ১৪০ লিটার মদ, ২০ কেজি গাজাসহ ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। ২০১২ ইং সালের জানয়ারী মাসে ৬০১ বোতল ফেন্সিডিল, সাড়ে ৬১ লিটার মদ ও ১০ কেজি গাজাসহ ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়। ফেব্র“য়ারী মাসে ৩৩ বোতল ফেন্সিডিল, ১ লিটার মদ ও ১ কেজি গাজাসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। মার্চ মাসে ২৭৩ বোতল ফেন্সিডিল, ৯’শ গ্রাম গাজা ও ১১ লিটার মদসহ ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়।  এপ্রিল মাসে ১৫৭ বোতল ফেন্সিডিল, ৮’শ গ্রাম গাজা ও ১৯২ লিটার মদসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি আসার পর ২৫ টি ফেন্সিডিল মামলায় ৩৬ জনকে গ্রেফতার সহ ১২৯৩ বোতল ফেন্সিডিল ও সাড়ে ৩ লিটার তরল ফেন্সিডিল উদ্ধার হয়েছে। যার সর্বমোট মূল্য ৬ লক্ষ ৬২ হাজার ৫’শত টাকা। ৮ টি গাজার মামলায় ৯ জনকে গ্রেফতার সহ ৩৩ কেজি ১৪০ গ্রাম গাজা উদ্ধার হয়েছে। যার সর্বমোট মূল্য ৯৬ হাজার টাকা। ৭ টি চোলাই মদের মামলায় ৭ জনকে গ্রেফতার সহ ৪০২ লিটার মদ উদ্ধার করা হয়েছে। যার মূল্য ৮০ হাজার ৪’শত টাকা।  এদের গ্রেফতার করে ভ্রাম্যমান আদালতে বিভিন্ন মেয়াদের সাজা দেওয়া  হয়েছে। এর পরেও তারা জেল/হাজত থেকে ফিরে সবার চোখে ফাঁকি দিয়ে রাতের আধারে ভারতীয় মরণ নেশা ফেন্সিডিল ও হেরোইন আমদানি করে যাচ্ছে। তবে তাদের কেউ চিহ্নিত করে আইনি জরুরী ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা চালাচ্ছেন বলে জানান। বর্তমানে প্রেক্ষাপটে এর প্রবনতা অনেকাংশেই কমেছে বলে তিনি দাবি করেন।
মাদকাসক্তের অত্যাচারে অসংখ্য সুখী সংসার ভেঙ্গে দুঃখের কিনারে। আসক্ত সন্তানের দাবি মেটাতে না পেরে পিতা-মাতাকে নানাবিধ অশান্তির মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে। একাধিকবার জেল-হাজতে  পাঠিয়েও এদের সংশোধন করা যায়নি বলে জানা যায়। এছাড়াও নেশার টাকা জোগাড় করতে এমন দু’একজন ব্যাক্তি রয়েছে যারা টিউবয়েরের হ্যান্ডেল থেকে শুরু করে গ্রামের মানুষের বাড়িতে যা পাচ্ছে তাই চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। এমন অভিযোগও দুই-চারটা পাওয়া গেছে। যাদের অত্যাচারে অনেকের রাতের ঘুম হারাম হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
তিনি আরো জানান, উপজেলার সীমান্ত এলাকা আলাইপুর, হরিরাম পুর, কলিগ্রাম, পাকুড়িয়া, চক ছাতারী, নারায়নপুর ও মিলিক বাঘা গ্রামে হেরোইন ও ফেন্সিডিল আসক্ত ও ব্যবসায়ীর সংখ্যা বেশি।
তথ্য প্রদানের শেষ পর্যায় ওসি আলী আহম্মেদ হাশমি বর্তমান সমাজের উদ্দেশ্যে সাংবাদিকদের বলেন, মাদক একবারে নির্মূল করতে পুলিশের পাশা-পাশি বর্তামানে সমাজের ভূমিকা অনেক বেশি। কেননা পুলিশ প্রতিনিয়ত মাদকের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াধের সাজা প্রদান করছেন। কিন্তু তাতেও মাদক মুক্ত হচ্ছে না পরিবেশ। এর জন্য একান্ত প্রয়োজন সামাজিক সহযোগীতা। কারণ মাদক সেবনকারী ও ব্যবসায়ীরা পুলিশ প্রসাশনের আড়াল হলেও সমাজের আড়াল হয়ে থাকতে পারে না। তাই সকল সুধী সমাজকে পুলিশের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে এক সাথে কাজ করার জন্য আহব্বান করেণ।
Ruby