রবিবার, ৪ মার্চ, ২০১২

সীমানা পেরিয়ে…..

একটু একটু করে লাইম লাইটে উঠে আসছেন অভিনেত্রী সীমানা। নিজেকে ছাড়িয়ে নতুন সীমানায় পৌছে যাওয়ায় তার এই সময়ের লক্ষ্য। ২০০৬ সালে লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার ইভেন্টের মধ্য দিয়ে সীমান মিডিয়ায় আসেন। প্রথমেই অভিনয় করলেন হুমায়ূন আহমেদের গল্প অবলম্বনে তৌকীর আহমেদ পরিচালিত ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ‘দারুচিনি দ্বীপ’ ছবিতে। এটি মুক্তি পাওয়ার আগেই গ্রামীণ ফোনের ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়ে বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপনের মডেল হন। এরপর সীমানাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয় নি।
লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া প্রসঙ্গে সীমানা বাংলানিউজকে বললেন, ‘বাসার কাউকে না জানিয়ে অনেকটা কৌতুহলের বশেই ছবি পাঠিয়ে দেই। তখন আমি ছিলাম ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্রী। মনে একটা সূক্ষ্ম আশা তো ছিলই, কিন্তু অডিশন রাউন্ডে ডাক পেয়ে যাব এতটা আত্মবিশ্বাস ছিল না। কিন্তু বাসায় তো কেউ কিছু জানে না। শেষে কোনো উপায় না পেয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি শুরু করলাম। মেয়ের আবদার আর চোখের জলকে উপেক্ষা পারেননি আম্মু। আমাকে নিয়ে রওনা দেন অডিশনের উদ্দেশ্যে।
২০০৬ সালে লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতায় সেরা দশে উঠে আসেন সীমানা তার সুন্দর হাসি দিয়ে। এখনও সেই হাসির মায়াজাল নিয়েই নিয়মিত কাজ করে চলেছেন টিভি মিডিয়ায়। যদিও লাক্স সুন্দরীদের খাতায় নাম লেখানোর পর পরই অভিনয়ের ডাক পান বড় পর্দা থেকে। তাও আবার হূমায়ুন আহমেদের ‘দারুচিনি দ্বীপ’ ছবির মাধ্যমে। অবশ্য নাচ জানতেন বলেই সীমানা ছবিতে অভিনয়ের জন্য নির্বাচিত হন। তার চরিত্রটি ছিল নৃত্যশিল্পীর। এ প্রসঙ্গে সীমানা বললেন,  ছেলেবেলায় নানুর উৎসাহে নাচ শিখেছিলাম। নাচ জানার কারণেই ছবিটিতে অভিনয়ের সুযোগ পাই । আর এ ছবিতে অভিনয়ই গড়ে তোলে আমার আজকের অবস্থানে আসার প্লাটফর্ম।
প্রথম অভিনয় বড়পর্দায়, পরবর্তীতে আপনাকে আর চলচ্চিত্রে পাওয়া গেল না কেন? উত্তরে সীমানা বললেন, ‘দারুচিনি দ্বীপ’-এ অভিনয়ের পরপরই একাধিক ছবিতে কাজ করার প্রস্তাব পাই। বেশ কজন বড় পরিচালকের কাছ থেকেও ডাক আসে তাদের ছবিতে অভিনয়ের জন্য। কিন্তু আমি তখনও নিজেকে মুলধারার চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রস্তুত বলে মনে করিনি। তাছাড়া হঠাৎ করে দু’দিনের জন্য লাইমলাইটে এসে হারিয়ে যাওয়ার পক্ষপাতিও আমি না। তাই নিজের অভিনয় দক্ষতা বাড়ানোর জন্য টিভিনাটকেই বেছে নিলাম। বেশ কয়েক বছর একটানা টিভিনাটকে অভিনয়ের পর আমার নিজের কাছে মনে হচ্ছে এখন চলচ্চিত্রে কাজ করা দরকার। আর ভালো গল্প পেলে অবশ্যই এখন কাজ করব।
সীমানা প্রথম টিভিনাটকে অভিনয় করেন ফেরদৌস হাসান রানার ‘নিলয়’ নামের একটি নাটকে। তবে দর্শকদের নজর কাড়েন সালাউদ্দিন লাভলুর ‘সাকিন সারি সুরি’ নাটকের মধ্য দিয়ে। তারপর একে একে অনেকগুলো নাটকে অভিনয় করে সীমানা অভিনেত্রী হিসেবে টিভিমিডিয়া পাকাপোক্তভাবে জায়গা করে নিয়েছেন। সীমানা অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটকের মধ্যে আছে সালাউদ্দিন লাভলুর ‘শাকিন সারি সুরি’, ‘কলেজ স্টুডেন্ট’, তাহের শিপনের ‘কাছে দূরে’, ইদ্রিস হায়দারের ‘আমাদের সংসার’, বিক্রম খানের ‘একটি আদর্শ মেস বাড়ি’,  দেবাশীষ বড়ুয়া দীপের পরিচালনায় ‘ঘটক বাকি ভাই প্রাইভেট লিমিটেড’, নিমা রহমানের ‘গুলশান এভিনিউ’ প্রভৃতি।
অনেক নির্মাতার নাটকে অভিনয় করলেও সালাউদ্দিন লাভলুকে সীমানা তার ক্যারিয়ার গঠনের পথপ্রদর্শক হিসেবে মনে করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, লাক্সের আসরে আমাদের গ্রুমিং সেশনে ছিলেন সালাউদ্দিন লাভলু। সেই থেকে তার সঙ্গে আমার যোগাযোগ। তিনিই আমাকে হাতে ধরে শিখিয়েছেন আসলে অভিনয় কী জিনিস! টিভিনাটকে অভিনয়ের হাতেখড়িটাও লাভলু ভাইয়ের নাটক দিয়েই। উনার নাটকের মাধ্যমেই দর্শকদের কাছে পরিচিতি পাই। এজন্য লাভলু ভাইয়ের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তিনি অভিনয়টা বের করে নিতে জানেন। যার জন্য আমার অভিনয় যতটুকু আয়ত্ব করতে পেরেছি তার অনেকটা লাভলু ভাইর অবদান।
অভিনয়ের পাশাপাশি সীমানাকে মডেলিংয়েও বেশ ঝলমলে ভঙ্গিতে দেখা গেছে। এ পযন্ত মডেল হয়েছেন গ্রামীন ফোন, বাংলালিংক, প্রাণ, অটবী, ফেয়ার এন্ড লাভলী প্রভৃতি নামি প্রডাক্টের। সীমানার কাছে মডেলিং সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বললেন,  বিজ্ঞাপনের ব্যাপারে আমি একটু খুতখুত। ভালো প্রডাক্ট আর ভালো নির্মাতা না হলে আমি কাজ করতে চাই না। তাই এখন বিজ্ঞাপনের কাজ খুব বেশি করা হচ্ছে না। পুরোপুরি নাটক নিয়েই আছি। শেষ ২০০৯ সালে ফেয়ার অ্যান্ড লাভলির বিজ্ঞাপন করেছিলাম। এখন আর তেমন একটা বিজ্ঞাপনে কাজ করা হচ্ছে না। কারণ হলো ব্যাটে-বলে ঠিক মিলছে না।’
simanaসম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধের একটি একক নাটকে অভিনয় করলেন  মডেল-টিভি অভিনেত্রী সীমানা। তরুণ নির্মাতা রাফা রাব্বি পরিচালিত ‘ডাকু-সর্দার’ নামের এ নাটকটির শুটিং সম্প্রতি শেষ হয়েছে। এতে ভিন্নধর্মী একটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন সীমানা। নাটকটির কাহিনী গড়ে উঠেছে ১৯৭১ সালের যুদ্ধকালীন সময়ে একটি গ্রামকে কেন্দ্র করে। সেই গ্রামেরই মেয়ে থাকেন সীমানা। নাটকটি আসছে স্বাধীনতা দিবসে প্রচারিত হবে একটি চ্যানেলে। এছাড়াও নতুন একটি ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করছেন সীমানা। দেবাশীষ বড়ুয়া দ্বীপ পরিচালিত ‘হাউজ নাম্বার ৭৭৭’ নামক নতুন ধারাবাহিকের শুটিংয়ে বর্তমানে অংশ নিচ্ছেন তিনি। বর্তমানে সীমানা অভিনীত ‘গুলশান এভিনিউ’, ‘রঙের সংসার’, ‘সবুজ সংকেত’, ‘আমাদের সংসার’ এবং  ‘বংশাল টু বারিধারা’ ধারাবাহিকগুলো বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচার হচ্ছে।
এদিকে শোবিজে একের পর এক গড়ে উঠা ‘প্রেমিক-প্রেমিকা’ জুটির তালিকায় সম্প্রতি একজন গায়কের সঙ্গে উঠে এসেছে সীমানা নাম। সুফীধর্মী এই সঙ্গীতশিল্পীর নাম পারভেজ। সংগীতের মানুষ হলেও ইতিমধ্যে একটি টেলিফিল্মে অভিনয় করেছেন পারভেজ। লাভগুরু রাজিব সরকার পরিচালিত ‘অতিমানব’ নামের এই টেলিফিল্মের শুটিং করতে গিয়েই সীমানার সঙ্গে গায়ক পারভেজের গড়ে উঠে ঘনিষ্ঠতা। টেলিফিল্মটির বেশিরভাগ অংশের শুটিং হয়েছিল জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে। সেই থেকে শোনা যাচ্ছে সংগীতশিল্পী পারভেজের সঙ্গে মডেল-অভিনেত্রী সীমানার প্রেমের গুঞ্জন। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে সীমানা বললেন, গায়ক পারভেজের সঙ্গে আমার  ভাল সম্পর্ক এটা ঠিক। আমরা একে অপরের সঙ্গও বেশ উপভোগ করি। নিজেদের বিভিন্ন বিষয় আমরা এক অন্যের সঙ্গে শেয়ার করি। তাকে আমি আমার খুব কাছের বন্ধু বলবো। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার বলার নেই।
পারভেজ-সীমানার একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, তাদের সম্পর্কটা বেশ গভীর। তবে অন্যদের মতো তারা বেপরোয়া হয়ে যেনতেনভাবে বিয়ে করতে রাজি নন। পারিবারিকভাবেই তাদের বিয়ের কাজটি সম্পন্ন করার চেষ্টাই করছেন পারভেজ ও সীমানা। পালিয়ে নয়, পরিবারের সম্মতিতেই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।
Ruby