মঙ্গলবার, ১০ এপ্রিল, ২০১২

টাঙ্গাইলে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত: পাইলট নিহত

undefined টাঙ্গাইল ও মধুপুর থেকে প্রতিনিধি :: টাঙ্গাইলের মধুপুরে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট শরিফ রেজা নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত অবস্থায় ঘাটাইল সিএমএইচে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। গত রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মধুপুর উপজেলার আউশনারা ইউনিয়নের মহিষমারা গ্রামে এ বিমান দুর্ঘটনা ঘটে। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিমানটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটনে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুর্ঘটনার পরপরই সেনা ও বিমানবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। মধুপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিরুল ইসলাম দেওয়ান ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান (এফ-৩ এএমজি) একটি পতিত জমিতে পড়ে বিধ্বস্ত হয়। আকাশেই বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিধ্বস্ত হওয়ার আগে বিমানটি থেকে প্রচণ্ড ধোঁয়া বের হচ্ছিল। আকাশে কয়েকবার চক্কর দিয়েই বিমানটি মাটিতে আছড়ে পড়ে। দুর্ঘটনার আগে বিমানের একজন ক্রু প্যারাসুট ব্যবহার করে অবতরণ করতে পারলেও শরিফ রেজা বিমানের ভেতর আটকা পড়েন।
নিহত শরিফ রেজা ৬১তম লংকোর্সের ক্যাডেট ছিলেন। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কাঁটাসুর ঢাকা রিয়েল এস্টেটের ৩ নং রোডের ৬৫/বি নম্বর বাড়িতে তার পরিবারের সদস্যরা বাস করেন। গতকাল ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় ফ্ল্যাট তালাবন্ধ। নিহতের চাচা, জসিমউদ্দীন মোল্লা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, রেজা খুবই মেধাবী ছাত্র ছিল। সে চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ থেকে পাস করে কয়েক বছর আগে বিমানবাহিনীতে যোগ দিয়েছিল। কিছুদিন আগে তার ফায়ারিং প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিধ্বস্ত বিমানটি সজোরে মাটিতে ছিটকে পড়ে দুমড়ে মুচড়ে যায়। বিমানের স্কোয়াড্রন লিডার (ইন্সট্রাকটর) মামুন প্যারাস্যুটের সাহায্যে অবতরণ করেন। কিন্তু ফ্লাইং অফিসার রেজা শরিফ বিমানের ভেতরে আটকা পড়েন। প্রত্যক্ষদর্শী আনিস জানান, তিনি জমিতে কাজ করছিলেন। হঠাৎ একটি বিমান মাটিতে আছড়ে পড়ে। এর কিছুক্ষণ পরই একজন পাইলট প্যারাসুট দিয়ে নিচে নেমে আসে। আনিস বলেন, আমি কাছে গেলে প্যারাসুট দিয়ে নেমে আসা পাইলট আমার হাতে একটি ওয়ারলেস সেট দিয়ে বলেন, পাইলট শরিফকে বাঁচান। তার অবস্থা খুব খারাপ। পরে বিমানের কাঁচ ভেঙে রেজা শরিফকে বের করা হয়। মহিষমারা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত বিমানবাহিনীর সার্জেন্ট দেলোয়ার হোসেন জানান, তিনি তার জমিতে কাজ করছিলেন। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বিমানটি মাটিতে আছড়ে পড়ে।
মধুপুর থানা পুলিশ জানায়, গুরুতর আহত অবস্থায় শরিফ রেজাকে উদ্ধার করে প্রথমে মধুপুর থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে ঘাটাইল সিএমএইচ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট শরিফ রেজা মারা যান। এদিকে প্রত্যক্ষদর্শী মহিষমারা গ্রামের সানোয়ার হোসেন ও সেলিম মিয়া জানান, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিমানটি আকাশে কয়েকবার চক্কর দেয়। এ সময় বিমান থেকে ধোঁয়া নির্গত হতে দেখা যায়। এর অল্পক্ষণ পরেই বিমানটি বিকট শব্দে একটি পতিত জমিতে আছড়ে পড়ে। আশপাশের লোকজন প্রথমে ভয়ে বিধ্বস্ত বিমানের কাছে যেতে পারেনি। এর প্রায় ৪০-৫০ মিনিট পরে সেনাবাহিনীর লোকজন ঘটনাস্থলে আসে। বিমানবাহিনীর সহকারী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল আবু এসরার, গ্রুপ ক্যাপ্টেন সাকিল, টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক এম বজলুল করিম চৌধুরী ও পুলিশ সুপার একেএম হাফিজ আক্তার দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। শরিফ রেজার চাচা জসিম উদ্দীন মোল্লা জানান, দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে শরিফ ছিল সবার ছোট। তার বড় ভাই মাজহারুল রেজা সুমন ব্যাংক কর্মকর্তা। তার পিতার নাম ফজলুল হক। তিনি পিডব্লিউডি’র সাব এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার লাঙ্গলকোটে।
Ruby