বুধবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১১

আজ শোকাবহ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস

বাঘা নিউজ ডটকম, ১৪ ডিসেম্বর : শোকাবহ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও যথাযোগ্য মর্যাদা ও শোকের আবহে পালিত হচ্ছে দিনটি। দিবসটি উপলক্ষে দেশব্যাপী বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নিয়েছে নানা কর্মসূচি।এতে রয়েছে শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, আলোচনা সভা, গান, আবৃত্তি, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী এবং চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা।দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলের নেতা ও বিএনপি  চেয়ারপার্সন  বেগম খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন।আজ ভোর থেকেই শোকাহত মানুষের ঢল নামবে সেদিনের হত্যাযজ্ঞের স্মৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্মৃতিস্তম্ভের সামনে। সেখানে অর্পণ করা হবে পুষ্পার্ঘ্য। শোকাহত মানুষ গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের।দিবসটি উপলক্ষে দেশের সর্বত্রই আজ জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। শোকের প্রতীক কালো পতাকাও ওড়ানো হবে দেশব্যাপী।
কর্মসূচি:
আওয়ামী লীগ : সকাল ৬ টা ৩৭ মিনিটে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন, জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত করা হবে। একই সময় মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে দলের পক্ষ থেকে পুষ্পার্ঘ্য  নিবেদন করা হবে।
এদিন সকাল সোয়া ৭ টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ও সকাল ৮ টায় রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করা হবে।
দিবসটি উপলক্ষে বিকেল ৩ টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা আয়োজন করেছে আওয়ামী লীগ। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিএনপি: সকাল সাড়ে ৫ টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত করা হবে। উত্তলন করা হবে কালো পতাকা।
সকাল ৮ টায় মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে দলের পক্ষে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন বেগম খালেদা জিয়া। বিকেল ৩ টায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজন করা হবে আলোচনা সভা।
সিপিবি: শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) বিস্তারিত কর্মসূচি নিয়েছে। সকাল ৮ টায় মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ও ৯ টায় রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হবে।
সকাল সাড়ে ৫ টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত করা হবে। উত্তোলন করা হবে কালো পতাকা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: সকাল সাড়ে ৭ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হল ও উপাচার্য ভবনসহ প্রধান প্রধান ভবনে কালো পতাকা উত্তোলন, সকাল ৮ টায় বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণের কবরস্থান, জগন্নাথ হল প্রাঙ্গণের স্মৃতিসৌধ, বিভিন্ন আবাসিক এলাকার স্মৃতিসৌধ ও মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে।
প্রেক্ষাপট: ১৯৭১ সালের এই দিনে দীর্ঘ ৯ মাস স্বশস্ত্র সংগ্রামের পর বিজয় যখন আসি আসি করছে। বিভিন্ন জায়গায় পাক হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের খবরে উত্তাল-উদ্বেল যখন পুরো দেশ। ঠিক সেই সময় জাতীয় জীবনে আসে আরেকটি ‘কাল’ দিন। হেমন্তের স্নিগ্ধ সকালে খবর আসে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান নিধনের। দুঃখের দরিয়ায় ভেসে যায় মুক্তিযোদ্ধাদের কষ্টস্নাত অর্জন। মুহূর্তের মধ্যে শোকে পাথর হয়ে যায় গোটা জাতি।
চূড়ান্ত বিজয়ের ঠিক একদিন আগে একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনীর দোসর এদেশীয় নরঘাতক রাজাকার, আলবদর ও আলশামস হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান নিধনযজ্ঞে।
পরাজয় নিশ্চিত জেনে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করতে ১৪ ডিসেম্বর রাতেই তালিকা ধরে ঘরে ঘরে তল্লাসী চালিয়ে চোখ বেঁধে টেনেহিঁচড়ে বের করে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা শহরের বিশিষ্ট শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক, সংস্কৃতিসেবী ও উঁচ্চ পদস্থ সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পেশার কৃতী সন্তানদের। হত্যা করে ফেলে রাখা হয় নিস্তব্ধ ভুতুড়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন বধ্যভূমিতে।
পরবর্তী সময়ে মিরপুরের ডোবা-নালা ও রায়েরবাজার ইটভাটায় বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে থাকতে  দেখা যায় বুলেটবিদ্ধ তাঁদের নিথর দেহ, পেছনে হাত বাঁধা, ক্ষতচিহ্ন শরীরজুড়ে।
একাত্তরের ডিসেম্বরে হত্যাযজ্ঞের শিকার শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রকৃত সংখ্যা এখনও নিরূপণ করা যায়নি।
প্রাপ্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বাংলাপিডিয়ায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের যে সংখ্যা দাঁড় করানো হয়েছে, সে অনুযায়ী একাত্তরে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ছিলেন ৯৯১ জন শিক্ষাবিদ, ১৩ জন সাংবাদিক, ৪৯ জন চিকিৎসক, ৪২ জন আইনজীবী ও ১৬ জন শিল্পী-কবি-সাহিত্যিক ও  প্রকৌশলী।
এদের মধ্যে ছিলেন ড. জিসি দেব, অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, সন্তোষ চন্দ্র ভট্টাচার্য, ড. মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, অধ্যাপক মনিরুজ্জামান, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা, অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, ডা. ফজলে রাব্বী, ডা. আলীম চৌধুরী, ড. গোলাম মোর্তজা, ড. মোহাম্মদ শফি, শহীদুল্লাহ কায়সার, সিরাজউদ্দিন হোসেন, নিজামুদ্দিন আহমদ, খন্দকার আবু তালেব, আ.ন.ম. গোলাম মোস্তাফা, শহীদ সাবের, নাজমুল হক, আলতাফ মাহমুদ, আরপি সাহা, আবুল খায়ের, রশীদুল হাসান, সিরাজুল হক খান, আবুল বাশার, ড. মুক্তাদির, ফজলুল মাহী, ড. সাদেক, ড. আমিনুদ্দিন, সায়ীদুল হাসান, হাবিবুর রহমান, মেহেরুন্নেসা, সেলিনা পারভীনসহ অনেকে।
Ruby