মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১১

আজ লালপুর ও কাহালু মুক্ত দিবস

বাঘা নিউজ ডটকম,এ কে আজাদ সেন্টু/মুনসুর রহমান তানসেন,  লালপুর ( নাটোর০)/কাহালু (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ আজ ১৩ ডিসেম্বর নাটোরের  লালপুর ও বগুড়ার কাহালু উপজেলা হানাদার মুক্ত দিবস। এই দিনে পরাজিত পাক হানাদার বাহিনী লালপুর থেকে বিতাড়িত হয়। ২৫ মার্চ থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাক বাহিনী  দেশীয় দালাল ও রাজাকারদের সহায়তায় লালপুরের বিভিন্ন এলাকায় হত্যা, নির্যাতন, অগ্নিকান্ড ও লুটতরাজ চালায়।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে রাজশাহীর ২৫ নম্বর পাঞ্জাব রেজিমেন্টের অধিনায়ক কর্ণেল বালুচ এবং টুওয়াইসি মেজর রাজা আসলামের নেতৃত্বে পাকবাহিনীর বর্বরতায় শহীদ হন লালপুরের এমএনএ নাজমুল হক সরকার, অবাঙ্গালী হাফিজ সাত্তার, বীরেণ সরকার উকিল, শিল্প ব্যাংকের ম্যানেজার সাইদুর রহমানসহ আরও অনেক সাধারণ জনগণ। ১৭ এপ্রিল দুয়ারিয়া ইউনিয়নের রামকান্তপুর গ্রামে পাকবাহিনী হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ১৮ জনকে হত্যা করে। ৩০ মার্চ ময়নায় সম্মুখ যুদ্ধে মুক্তি সেনারা হানাদারদের ২৫ নং রেজিমেন্ট ধ্বংস করে দেয়। সেদিন প্রায় ৮০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও ৩২ জন আহত হন। ঐদিনই পাক সেনাদের ছোড়া একটি সেলে চামটিয়া গ্রামে ৩ জন শহীদ হন। ১২ এপ্রিল ধানাইদহ ব্রিজের নিকট প্রতিরোধ যুদ্ধে ১০/১২ জন শহীদ হন। নাটোর জেলার যে কয়েকটি স্থানে পাক হানাদাররা নৃশংস হত্যা চালায় তার মধ্যে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের গণহত্যা ছিল সবচেয়ে নির্মম ও হৃদয় বিদারক।  ৫ মে পাক হানাদার বাহিনী সমস্ত চিনিকল এলাকা ঘেরাও করে মিলের তৎকালিন প্রসাশক লে: আনোয়ারুল আজিম সহ কর্মরত প্রায় অর্ধশত শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাকে চিনিকলের অফির্সাস কলোনীর পুকুর পাড়ে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে। ঐ দিনই গোপালপুর বাজারে ৭ জনকে হত্যা করে এবং গোপালপুর-লালপুর রাস্তার আরও ৫ জন টমটম আরোহীকে গুলি করে হত্যা করে। ২৯ মে খান সেনাদের একটি দল চংধুপইলের পয়তারপাড়া গ্রামে নদীর পাড়ে ধরে এনে ৫০ জনেরও অধিক নিরীহ লোকজনকে গুলি করে হত্যা করে। ২৫ জুলাই গোপালপুর থেকে ধরে এনে ২২ জনকে লালপুর নীলকুঠির নিকটে হত্যা করা হয় এবং ২৬ জুলাই একই স্থানে ৪ জনকে জীবন্ত কবর দেওয়া হয়। ২০ জুলাই রামকৃষ্ণপুর গ্রামে অগ্নিসংযোগ ও ৫ জনকে হত্যা করে। ৩০ জুলাই বিলমাড়িয়া হাট ঘেরাও করে বেপরোয়া গুলি বর্ষন করে ৫০ জনেরও অধিক লোককে হত্যা করে। ৮ ডিসেম্বর পাঞ্জাব পুলিশ ও খানসেনারা থানা ত্যাগ করে। ৯ তারিখে অধিকাংশ রাজাকারও থানা ত্যাগ করে। ১০ই ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী থানা দখল করে । জনতা সেদিন উল­াসে মেতে উঠে। কিন্তু হঠাৎ ১৩ ডিসেম্বর বর্বর খান সেনারা ঝটিকা আক্রমন করে মহেশপুর গ্রামে ৩৬ জনকে গুলি করে পালিয়ে যায় । এই দিনে লালপুরবাসী আনন্দ উলস্নাস করে লালপুরকে মুক্ত ঘোষনা করেন।
১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ২৪ ডিসেম্বর লালপুর এস এস পাইলট হাই স্কুল মাঠে এক বিজয় উৎসব, আলোচনা সভা ও শহীদদের আত্নার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের পর আনুষ্ঠানিকভাবে লালপুরে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়।
লালপুর মুক্ত দিবস উপলক্ষে লালপুর পাবলিক লাইব্রেরীর উদ্যোগে আজ ১৩ ডিসেম্বর বিকেল ৩ টায় বিজয় র‌্যালী শেষে লালপুর পাইলট হাইস্কুল মাঠে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
আজ কাহালু উপজেলা হানাদার মুক্ত দিবস
আজ ১৩ ডিসেম্বর বগুড়ার কাহালু উপজেলায় পালিত হচ্ছে হানাদার মুক্ত দিবস। দীর্ঘ ৯ মাস যাবত শক্তিশালী পাকসেনাদের সাথে মরনপন লড়াই করে ১৭৯১ সালের এই দিনে এখানকার বীরসেনারা অত্র উপজেলা হানাদার মুক্ত করেন।
স্থানীয় মক্তিযোদ্ধারা জানান ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাস থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত অত্র উপজেলার বামুজা, জয়তুল, নশিরপাড়া, বীরপাল­াসহ বিভিন্ন স্থানে খানসেনাদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ ও খন্ড খন্ড যুদ্ধ হয়। এরপর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে বগুড়ার বিভিন্ন অঞ্চলে পাকসেনারা দিশেহারা হয়ে পড়ে। অবশেষে মেজর জাকির, কর্নেল তোজাম্মেলসহ প্রায় ১৬ জন পাকসেনা ১৩ ডিসেম্বর সকালে বগুড়া থেকে পালিয়ে এসে কাহালু চার মাথায় যুদ্ধকালীন মুজিব বাহিনীর কমান্ডার অধ্যক্ষ হোসেন আলীর কাছে অস্ত্রসহ আত্ন সমর্পন করেন।
বিগত ৪ বছর ধরে এখানকার মুক্তিযোদ্ধারা আনুষ্ঠানিক ভাবে হানাদার মুক্ত দিবস এখানে পালন করে আসছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও হানাদার মুক্ত দিবস উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে নানা কর্মসুচী নেয়া হয়েছে। কর্মসুচীর মধ্যে রয়েছে সকালে জাতীয় ও সাংগঠনিক পতাকা উত্তোলন, র‌্যালী ও দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরার জন্য আলোচনা সভা।
এছাড়াও হানাদার মুক্ত দিবসের কর্মসুচীতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কর্মসুচীর সাথে সম্পৃক্ত হবে কাহালু থিয়েটার, মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের সংগঠন প্রজন্ম ৭১ সহ বিভিন্ন সংগঠন।
Ruby