বৃহস্পতিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১১

মামলা প্রত্যাহারের আশ্বাস পেলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান

বাঘা নিউজ ডটকম, ২৯ ডিসেম্বর : মহাজোট নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে মামলা প্রত্যাহারের আশ্বাস পেলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। সামনে সরকার পরিচালনার অন্যান্য ক্ষেত্রেও মূল্যায়নের আশ্বাস পেয়েছেন সাবেক এই প্রেসিডেন্ট। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি’র সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সূত্র জানায়, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মহাজোটকে শক্তিশালী করতে জাতীয় পার্টির সমর্থন চান। আগামী নির্বাচনগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে করার বিষয়েও প্রস্তাব দেয়া হয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে জাতীয় পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার অনুরোধ জানান আওয়ামী লীগ নেতারা। এ লক্ষ্যে আজকের শোডাউনে জাতীয় পার্টিকে অংশগ্রহণ করতে বলা হয়। বৈঠকে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে বলা হয়, আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই। এজন্য আমরা এককভাবে কর্মসূচি দেব। ১৪ দল বৃহস্পতিবার যে কর্মসূচি দিয়েছে, তাতে জাতীয় পার্টির প্রতিনিধি থাকবে। সার্বিকভাবে মহাজোটকে শক্তিশালী করতে সব ইস্যুতে জাতীয় পার্টি একসঙ্গে কাজ করবে কি-না তা পার্টির ফোরামে আলোচনা করে জানানো হবে বলে এরশাদ বৈঠকে উল্লেখ করেন। জাতীয় পার্টি সূত্র জানায়, এরশাদ বৈঠকের শুরুতেই টিপাইমুখ অভিমুখে লং মার্চের সফলতা তুলে ধরে সামনের তিস্তা অভিমুখে লং মার্চ করা হবে বলে প্রধানমন্ত্রীকে জানান। প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব শোনার পর জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এ এম এম আলম বলেন, মহাজোট সরকারের সাড়ে ৩ বছরে এই প্রথম আমাদেরকে এভাবে ডাকলেন। অতীতে কোন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে বা কোন সঙ্কট মোকাবিলায় জাতীয় পার্টির পরামর্শ নেননি। যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে সমাবেশ ডাকার আগেও আমাদের সঙ্গে আলাপ করা হয়নি। সর্বশেষ জেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগেও আমাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। আমরা সরকারের যথাযথ অংশীদারিত্ব পাচ্ছি না। এরশাদের মামলাগুলোও প্রত্যাহার করা হচ্ছে না। তাহলে আমরা কিভাবে আপনার সঙ্গে থাকব? এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পার্টির নেতাদের আশ্বস্ত করেন- এরপর থেকে আপনাদের মূল্যায়ন করা হবে। এরশাদ সাহেবের মামলাও প্রত্যাহার করা হবে। জেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগ ছিল অনির্বাচিত বিষয়। নির্বাচিত বিষয়গুলোতে আপনাদের প্রতিনিধিত্ব দেয়া হবে। বৈঠকে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, গোলাম হাবিব দুলাল ও ফিরোজ রশিদ। বৈঠকে জাতীয় পার্টির ২১ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দলের চেয়ারম্যান এরশাদ। আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, আবদুল জলিল, প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ প্রমুখ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় পার্টির প্রতিনিধি দলে ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশিদ, জি এম কাদের, এম এ সাত্তার, নাসিম ওসমান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, গোলাম হাবীব দুলাল, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন, কাজী মাহমুদ হাসান, এস এম আলম, গোলাম মসিহ, গোলাম রেজা, আতিকুর রহমান আতিক, তাজুল ইসলাম চৌধুরী ও সুনীল শুভ রায় প্রমুখ।
বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে মহাজোট গঠন করা হয়েছিল, তা বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধ থাকবে। বৃহস্পতিবার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে যে সমাবেশ হবে, তাতেও জাতীয় পার্টির প্রতিনিধিত্ব থাকবে। তিনি বলেন, বৈঠকে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, টিপাইমুখ বাঁধ ও তিস্তার পানি সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছেন জাতীয় পার্টির নেতারা।
এ সময় জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, বৈঠকে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। টিপাইমুখ বাঁধের বিরুদ্ধে জাতীয় পার্টি যে কর্মসূচি পালন করছে এবং তিস্তার পানি সমস্যা নিয়ে যে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে তা প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে। আমরা চাই স্বচ্ছতার সঙ্গে যেন এই বিচার হয় এবং অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়। জাতীয় পার্টি মহাজোটে থাকবে কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন আমরা মহাজোটে আছি। পাঁচ বছর শেষে কি হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। দল হিসেবে আমাদেরও তো একটি স্বতন্ত্র সত্তা আছে।
আমির হোসেন আমু বলেন, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে এবং জাতীয় ইস্যুতে একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
Ruby