বাঘা নিউজ ডটকম, জি এম মুজিবুর রহমান :: ‘অলস মস্তিস্ক শয়তানের বাসা’ প্রবাদটি মানুষের জীবনে খুবই তাৎপর্যবহ। কর্মহীন মানুষ কি করবে তা নির্ভর করে তার পারিপার্শ্বিকতার উপর। সঙ্গ ও পরিবেশ তাকে পরিচালিত করে থাকে। অসৎ সঙ্গ ও খারাব পরিবেশে মিশে গেলে তার থেকে ভালো কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। শয়তান তার সাহচর্যে এগিয়ে আসে। সাময়িক সুখের খোঁজে গদগদ হয়ে অপকর্মে লিপ্ত হয়ে থাকে। মন্দ চিন্তায় বিভোর হয়ে সময় কাটিয়ে দেয়। এভাবে এক পর্যায়ে তাদের মূল্যবান জীবটা নষ্ট হয়ে যায়। কথায় বলে ‘গাঁধার পিট খালি যায় না’- কোন না কোন মালামাল নিয়ে পশু গাঁধাকে যাত্রা করতে হয়। তেমনি মানুষের মস্তিস্কও খালি থাকেনা। মাথা নামের যন্ত্রটি সর্বদা ক্রিয়াশীল রাখতে হয়। যখন এটিকে সঠিক কাজে ব্যবহার করা হয় না, তখন শয়তান তার দখল নিতে চেষ্টা চালায়। শয়তানের পদার্পন ঘটলে মানুষের মাথায় মন্দ চিন্তা স্থান করে নেয়। মন্দ চিন্তা কখনও কল্যাণ বয়ে আনে না বরং তা অকল্যাণ বিলিয়ে জীবনকে বিষিয়ে তোলে। অন্যায়-অপকর্ম, হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি, ও শত্রুতা সৃষ্টি করে পারিবারিক বন্ধন ছিন্ন করে দেয়। ফলে ভ্রাতৃত্ববোধ ধ্বংস হয়ে যায়। মন্দ ধারণা পোষণকারী কূপ্রবৃত্তিতে প্রলুব্ধ হয়ে স্পষ্ট গুনাহে লিপ্ত হয়ে থাকে। একবার গুনাহের কাজ শুরু করলে একের পর এক গুনাহ করতে থাকে। এভাবে বিভিন্ন অন্যায়-অপরাধ ও পাপে জড়িয়ে পড়ে জীবনকে জলাঞ্জলী দিতে বাধ্য হয়।
পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা অধিক ধারণা থেকে দূরে থাক। কারণ অনুমান কোন কোন ক্ষেত্রে পাপ। আর তোমরা একে অপরের গোপনীয় বিষয় অনুসন্ধান করো না এবং একে অপরের পশ্চাতে নিন্দা বা গীবত করো না’’ (সূরা হুজরাত-১২)।
যখন মানুষের অন্তরে শয়তানের বাসা থাকে তখন মনে কূচিন্তা ও মন্দ বিষয় আস্তানা গাড়ে। ভালো চিন্তা করা ইবাদতের অংশ, ভালো কিছু নিয়ে ভাবলে সমাজের উপকারে আসতে পারে। কারো গোপনীয় বিষয় নিয়ে অহেতুক অনুসন্ধান চালানো এবং নিছক সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করতে সময় নষ্ট করা ইসলামে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। উপরোক্ত আয়াতে মুসলমানের ইজ্জত-আব্রু বিনষ্ট না করতে আদেশ দেওয়া হয়েছে। এক মুসলমানকে অন্য মুসলমানের প্রতি অনুমান ও মন্দ ধারণা পোষণ করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। এসব মানুষের মধ্যে ঘৃণ্য কর্মের সহযোগিতা দিয়ে থাকে। পরস্পরে ভালো ধারণা রাখা ও কারও বিরুদ্ধে সংশয়-সন্দেহ থেকে দূরে থাকা ভালো মানুষের লক্ষণ। কূচিন্তা বা মন্দ ধারণার বশবর্তী হয়ে কারও সম্পর্কে মন্তব্য করা উচিৎ নয়। বরং এমন অবস্থা সৃষ্টি হলে মুহুর্তের মধ্যে তা ঝেড়ে ফেলানো কর্তব্য। জিইয়ে রাখা হলে শয়তান দোসর হয়ে বিপদগামী করে থাকে। তখন ঈমান ধ্বংস হয়ে যায়। সমাজে বিশৃংখলার সৃষ্টি হয়।
রসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘‘তোমরা ধারণা থেকে বেঁচে থাকো। কারণ, ধারণাভিত্তিক কথা বড় মিথ্যা। তোমরা পরস্পরের দোষ অনুসন্ধান করো না আর পরস্পরের মধ্যে হিংসা ও বিদ্বেষ পোষণ করো না এবং পরস্পর শত্রুতা ও দুশমনি করো না; বরং হে আল্লাহর বান্দারা ভাই ভাই হয়ে থাকো’’ (বুখারি)।
কারো সম্পর্কে ধারণা করা নয় বরং প্রকাশ্য ও সত্য বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে। ধারণা করা কেবল মিথ্যাই নয় বরং বড় মিথ্যা, যা মানুষকে ঈমানহীন করতে সহায়তা করে। অন্যকে নিয়ে অনধিকার চর্চার প্রয়োজন নেই বরং আমাদেরকে আল্লাহর পথে চলতে এবং ঈমান রক্ষায় কাজ করতে হবে। কি ভাবে সত্য-সঠিক পথে চলতে পারবো, কি করলে ঈমান রক্ষা করা যাবে, হিংসা-বিদ্বেষ মুক্ত শান্তিময় সমাজ গঠন করা যাবে সেটিই আমাদের ভাবনার বিষয় হওয়া প্রয়োজন। সকল মুসলমান ভাই ভাই, ভাই হয়ে অন্য ভাইয়ের ক্ষতি করার মানসিকতা মুসলমানের থাকা উচিৎ নয়।
বাইবেল-এ বলা হয়েছে, ‘‘তুমি মন্দের দ্বারা পরাজিত হয়ো না, কিন্তু উত্তমের দ্বারা মন্দকে পরাজিত করো’’।
মন্দ চিন্তা মাথায় নিয়ে এবং খারাপ কাজ করে নিজের নৈতিক পরাজয় ডেকে আনলে জীবনের জন্য অনেক ক্ষতি হয়ে থাকে। আর তাই উত্তম কিছু দিয়ে মন্দকে দূরীভূত করার মধ্যেই রয়েছে কৃতিত্ব। খারাপ চিন্তা মাথায় চেপে ঘুরপাক না খেয়ে ভাল কিছু করার জন্য সময় ব্যয় করা মঙ্গলজনক। মানুষ অপর মানুষের ভালদিকটা বিবেচনা করবে, ভালকিছু পেলে তা নিয়ে ভাববে। ছিদ্র অন্বেষণ বা চক্রান্ত সৃষ্টির লক্ষ্যে একে অন্যের পশ্চাতধাবন করা যাবে না।
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘‘তোমাদের কেউ যখন তার মুসলিম ভাইয়ের কাছে যায় তখন যেন সে তার খাবার থেকে খায় ও পানীয় থেকে পান করে এবং অনুসন্ধান না করে’’ (বায়হাকী, মিশকাত)।
কারও প্রতি মন্দ ধারণা করা যাবে না। কেবল ধারণার উপর নির্ভর করে কাউকে হয়রানি করা বা সমাজে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করাকে ইসলাম সমর্থন করে না। সন্দেহের ভিত্তিতে কোনো কাজ করা ধর্ম ও আইন পরিপন্থী কাজ। মন্দ ধারণা কল্যাণ বয়ে আনে না বরং লাঞ্ছনা ও অনুশোচনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পারস্পরিক সম্পর্ক সুদৃঢ় রাখতে ইসলামী ভ্রাতৃত্ববোধ শক্ত করতে হবে। মানুষের প্রতি সুন্দর ধারণা ও সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। অন্যের সম্মন্ধে ভালো ও নিরপেক্ষ অনুভূতি জাগ্রত করতে হবে। এর ব্যাত্যয় হলে মন্দ চিন্তা ও শয়তানের অসওয়াসা কাঁধে চেপে বসবে। শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক বলেন, ‘‘তুমি কোথাও কোনো ভালো কাজ করো, উপকার করো, তবেই লোক তোমার বদনাম করবে। আমগাছে ফল ধরে বলে লোকে ঢিল মারে, ফজলি আম গাছে আরও বেশি মারে, শেওড়া গাছে কেউ ঢিল মারে না।’’ ভাল কাজের সমালোচনা বেশি হয়ে থাকে। ভালকিছুর খুঁৎ তালাস করার লোক ঢেড় পাওয়া যায়। ঢিল মারাটা একটা বদ অভ্যাস ও মন্দ কাজ। আম পাওয়ার লোভে এবং ভাল আম পেতে ঢিল মারা হয়, তেমনি ভাল মানুষের সম্পর্কে মন্দ ধারণা নিয়ে অন্যদের মাঝে কুৎসা ছড়ানোর কাজ বেশি হয়ে থাকে। শেওড়া গাছে ঢিল ছুড়ে যেমন লাভ নেই তেমনি বদ মানুষের কুকর্ম সম্পর্কে কথা বলে রটনাকারীরা কম মজা পায় বলে করতে চায় না।
আল্লাহ রববুল আলামীন বলেন, ‘‘যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান (জানাশোনা) নেই সে বিষয়ের পেছনে পড়ো না। নিশ্চয় কর্ণ, চক্ষু ও হৃদয়- তাদের প্রত্যেকের সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে’’ (সূরা বানী ইসরাঈল-৩৬)।
আমাদের মনে রাখা উচিৎ, সত্যবাদি, ন্যায়-নিষ্ঠ ও সৎকর্ম পরায়ন ব্যক্তি সম্পর্কে অন্যায় ধারণা পোষণ করা ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম বলে বিবেচিত হবে। আমাদের যে সম্পর্কে কোন জ্ঞান বা জনাশোনা নেই তা নিয়ে কুধারণা করার কোন সুযোগ নেই। পক্ষান্তরে কেউ যদি সুস্পষ্টভাবে মিথ্যাবাদি, হঠকারি, অন্যায়াচরী ও পাপ কর্মকারী হয় তবে তার সম্পর্কে মন্দ ধারণা পোষণ করা হারাম হবে না। বরং তার চতুরতায় ও সংস্পর্শে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য তার মন্দ দিক সতর্কতার সাথে মানুষকে অবহিত করা উচিৎ। তা না করলে হয়তো তার কারণে সমাজের অনেকে বিপদগ্রস্ত হতে পারে, শয়তানের অনুপ্রেরণায় অনেক ভালোজনও পাপাচারে লিপ্ত হতে পারে। মন্দ ও বদ স্বভাবের মানুষ সুযোগ পেলে সমাজে অনেক ভিতরে প্রবিষ্ট হয়ে তার কর্মপরিধি বাড়িয়ে সমাজকে অস্থিতিশীল ও কুকর্মের রাজ্যে পরিণত করতে চেষ্টা করে।
চাণক্য পন্ডিত বলেন, ‘‘খল আর মশকেতে/ ভেদ কোথা হয়?
প্রথমে পড়িবে পায়ে,/ তার পরে পিঠে কামড়ায়।
কানের নিকট করি/ কত না গুঞ্জন
ফাঁক বুঝি অতর্কিতে/ হুলটি ফুটায়।’’
আসুন আমরা ভালো কিছুর অনুসরণ করি, ভালো মানুষের পিছনে কুধারণা নিয়ে অনুসন্ধান করা থেকে বিরত থাকি। নিছক কুধারনা পোষণ পরিহার করি।
লেখকঃ সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক।
পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা অধিক ধারণা থেকে দূরে থাক। কারণ অনুমান কোন কোন ক্ষেত্রে পাপ। আর তোমরা একে অপরের গোপনীয় বিষয় অনুসন্ধান করো না এবং একে অপরের পশ্চাতে নিন্দা বা গীবত করো না’’ (সূরা হুজরাত-১২)।
যখন মানুষের অন্তরে শয়তানের বাসা থাকে তখন মনে কূচিন্তা ও মন্দ বিষয় আস্তানা গাড়ে। ভালো চিন্তা করা ইবাদতের অংশ, ভালো কিছু নিয়ে ভাবলে সমাজের উপকারে আসতে পারে। কারো গোপনীয় বিষয় নিয়ে অহেতুক অনুসন্ধান চালানো এবং নিছক সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করতে সময় নষ্ট করা ইসলামে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। উপরোক্ত আয়াতে মুসলমানের ইজ্জত-আব্রু বিনষ্ট না করতে আদেশ দেওয়া হয়েছে। এক মুসলমানকে অন্য মুসলমানের প্রতি অনুমান ও মন্দ ধারণা পোষণ করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। এসব মানুষের মধ্যে ঘৃণ্য কর্মের সহযোগিতা দিয়ে থাকে। পরস্পরে ভালো ধারণা রাখা ও কারও বিরুদ্ধে সংশয়-সন্দেহ থেকে দূরে থাকা ভালো মানুষের লক্ষণ। কূচিন্তা বা মন্দ ধারণার বশবর্তী হয়ে কারও সম্পর্কে মন্তব্য করা উচিৎ নয়। বরং এমন অবস্থা সৃষ্টি হলে মুহুর্তের মধ্যে তা ঝেড়ে ফেলানো কর্তব্য। জিইয়ে রাখা হলে শয়তান দোসর হয়ে বিপদগামী করে থাকে। তখন ঈমান ধ্বংস হয়ে যায়। সমাজে বিশৃংখলার সৃষ্টি হয়।
রসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘‘তোমরা ধারণা থেকে বেঁচে থাকো। কারণ, ধারণাভিত্তিক কথা বড় মিথ্যা। তোমরা পরস্পরের দোষ অনুসন্ধান করো না আর পরস্পরের মধ্যে হিংসা ও বিদ্বেষ পোষণ করো না এবং পরস্পর শত্রুতা ও দুশমনি করো না; বরং হে আল্লাহর বান্দারা ভাই ভাই হয়ে থাকো’’ (বুখারি)।
কারো সম্পর্কে ধারণা করা নয় বরং প্রকাশ্য ও সত্য বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে। ধারণা করা কেবল মিথ্যাই নয় বরং বড় মিথ্যা, যা মানুষকে ঈমানহীন করতে সহায়তা করে। অন্যকে নিয়ে অনধিকার চর্চার প্রয়োজন নেই বরং আমাদেরকে আল্লাহর পথে চলতে এবং ঈমান রক্ষায় কাজ করতে হবে। কি ভাবে সত্য-সঠিক পথে চলতে পারবো, কি করলে ঈমান রক্ষা করা যাবে, হিংসা-বিদ্বেষ মুক্ত শান্তিময় সমাজ গঠন করা যাবে সেটিই আমাদের ভাবনার বিষয় হওয়া প্রয়োজন। সকল মুসলমান ভাই ভাই, ভাই হয়ে অন্য ভাইয়ের ক্ষতি করার মানসিকতা মুসলমানের থাকা উচিৎ নয়।
বাইবেল-এ বলা হয়েছে, ‘‘তুমি মন্দের দ্বারা পরাজিত হয়ো না, কিন্তু উত্তমের দ্বারা মন্দকে পরাজিত করো’’।
মন্দ চিন্তা মাথায় নিয়ে এবং খারাপ কাজ করে নিজের নৈতিক পরাজয় ডেকে আনলে জীবনের জন্য অনেক ক্ষতি হয়ে থাকে। আর তাই উত্তম কিছু দিয়ে মন্দকে দূরীভূত করার মধ্যেই রয়েছে কৃতিত্ব। খারাপ চিন্তা মাথায় চেপে ঘুরপাক না খেয়ে ভাল কিছু করার জন্য সময় ব্যয় করা মঙ্গলজনক। মানুষ অপর মানুষের ভালদিকটা বিবেচনা করবে, ভালকিছু পেলে তা নিয়ে ভাববে। ছিদ্র অন্বেষণ বা চক্রান্ত সৃষ্টির লক্ষ্যে একে অন্যের পশ্চাতধাবন করা যাবে না।
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘‘তোমাদের কেউ যখন তার মুসলিম ভাইয়ের কাছে যায় তখন যেন সে তার খাবার থেকে খায় ও পানীয় থেকে পান করে এবং অনুসন্ধান না করে’’ (বায়হাকী, মিশকাত)।
কারও প্রতি মন্দ ধারণা করা যাবে না। কেবল ধারণার উপর নির্ভর করে কাউকে হয়রানি করা বা সমাজে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করাকে ইসলাম সমর্থন করে না। সন্দেহের ভিত্তিতে কোনো কাজ করা ধর্ম ও আইন পরিপন্থী কাজ। মন্দ ধারণা কল্যাণ বয়ে আনে না বরং লাঞ্ছনা ও অনুশোচনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পারস্পরিক সম্পর্ক সুদৃঢ় রাখতে ইসলামী ভ্রাতৃত্ববোধ শক্ত করতে হবে। মানুষের প্রতি সুন্দর ধারণা ও সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। অন্যের সম্মন্ধে ভালো ও নিরপেক্ষ অনুভূতি জাগ্রত করতে হবে। এর ব্যাত্যয় হলে মন্দ চিন্তা ও শয়তানের অসওয়াসা কাঁধে চেপে বসবে। শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক বলেন, ‘‘তুমি কোথাও কোনো ভালো কাজ করো, উপকার করো, তবেই লোক তোমার বদনাম করবে। আমগাছে ফল ধরে বলে লোকে ঢিল মারে, ফজলি আম গাছে আরও বেশি মারে, শেওড়া গাছে কেউ ঢিল মারে না।’’ ভাল কাজের সমালোচনা বেশি হয়ে থাকে। ভালকিছুর খুঁৎ তালাস করার লোক ঢেড় পাওয়া যায়। ঢিল মারাটা একটা বদ অভ্যাস ও মন্দ কাজ। আম পাওয়ার লোভে এবং ভাল আম পেতে ঢিল মারা হয়, তেমনি ভাল মানুষের সম্পর্কে মন্দ ধারণা নিয়ে অন্যদের মাঝে কুৎসা ছড়ানোর কাজ বেশি হয়ে থাকে। শেওড়া গাছে ঢিল ছুড়ে যেমন লাভ নেই তেমনি বদ মানুষের কুকর্ম সম্পর্কে কথা বলে রটনাকারীরা কম মজা পায় বলে করতে চায় না।
আল্লাহ রববুল আলামীন বলেন, ‘‘যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান (জানাশোনা) নেই সে বিষয়ের পেছনে পড়ো না। নিশ্চয় কর্ণ, চক্ষু ও হৃদয়- তাদের প্রত্যেকের সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে’’ (সূরা বানী ইসরাঈল-৩৬)।
আমাদের মনে রাখা উচিৎ, সত্যবাদি, ন্যায়-নিষ্ঠ ও সৎকর্ম পরায়ন ব্যক্তি সম্পর্কে অন্যায় ধারণা পোষণ করা ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম বলে বিবেচিত হবে। আমাদের যে সম্পর্কে কোন জ্ঞান বা জনাশোনা নেই তা নিয়ে কুধারণা করার কোন সুযোগ নেই। পক্ষান্তরে কেউ যদি সুস্পষ্টভাবে মিথ্যাবাদি, হঠকারি, অন্যায়াচরী ও পাপ কর্মকারী হয় তবে তার সম্পর্কে মন্দ ধারণা পোষণ করা হারাম হবে না। বরং তার চতুরতায় ও সংস্পর্শে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য তার মন্দ দিক সতর্কতার সাথে মানুষকে অবহিত করা উচিৎ। তা না করলে হয়তো তার কারণে সমাজের অনেকে বিপদগ্রস্ত হতে পারে, শয়তানের অনুপ্রেরণায় অনেক ভালোজনও পাপাচারে লিপ্ত হতে পারে। মন্দ ও বদ স্বভাবের মানুষ সুযোগ পেলে সমাজে অনেক ভিতরে প্রবিষ্ট হয়ে তার কর্মপরিধি বাড়িয়ে সমাজকে অস্থিতিশীল ও কুকর্মের রাজ্যে পরিণত করতে চেষ্টা করে।
চাণক্য পন্ডিত বলেন, ‘‘খল আর মশকেতে/ ভেদ কোথা হয়?
প্রথমে পড়িবে পায়ে,/ তার পরে পিঠে কামড়ায়।
কানের নিকট করি/ কত না গুঞ্জন
ফাঁক বুঝি অতর্কিতে/ হুলটি ফুটায়।’’
আসুন আমরা ভালো কিছুর অনুসরণ করি, ভালো মানুষের পিছনে কুধারণা নিয়ে অনুসন্ধান করা থেকে বিরত থাকি। নিছক কুধারনা পোষণ পরিহার করি।
লেখকঃ সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক।
