রবিবার, ১ জানুয়ারী, ২০১২

চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে ভূয়া জ্যোতিষীদের উপদ্রব বৃদ্ধি : প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ জনগণ

বাঘা নিউজ ডটকম, হাটহাজারী ০১ জানুয়ারি : আপনার শত্রুকে জিন চালান দিয়ে ধ্বংস করে দেয়া হবে অথবা আপনার স্বামীকে বশ করার জন্য এই তাবিজটা পানিতে ডুবিয়ে খাওয়াতে হবে এসমস্ত কথা বলে গ্রামের সহজ সরল মানুষের অন্ধ বিশ্বাসকে পুজিঁ করে আংটি, পাথর, তাবিজ, বান-টোনা ও ঝাড়- ফুঁ এর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলার চারিয়া গ্রামের দশজন জ্যোতিষী।
কোনধরণের শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়াই পারিবারিক ঐতিহ্যর কথা বলে নিজেদের জ্যোতিষী পরিচয় দিয়ে তারা হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা আর প্রতারিত হচ্ছে গ্রামের সহজ সরল অসহায় লোকজন। স্থানীয় কিছু দালাল এবং প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তির সহায়তায় তারা এই প্রতারণামুলক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন অনেক ভুক্তভোগী।
সরেজমিনে চারিয়া বোর্ড স্কুল এর পশ্চিম পাশে আচার্য পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, অফিস সাজিয়ে ও সাইনবোর্ড টাংগিয়ে ঝাড়ফুক, পানিপড়া, তাবিজ কবজ, বান টোনা ও জিন চালান এর কথা বলে চিকিৎসা দিচ্ছে এসব কবিরাজ। আর তাদের অফিসে গ্রাম্য মহিলাদের ভিড় লক্ষ্যণীয়। বিভিন্ন শারিরীক ও মানসিক সমস্যা বা শত্রু বিনাশের জন্য তারা এসব জ্যোতিষীদের কাছে আসছে। আর জ্যোতিষীরা আগত মহিলাদের সমস্যা ও আথির্ক অবস্থা বুঝে ৫০০ থেকে পাচঁ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করছে। বিনিময়ে তাদেরকে পাথর, আংটি, তাবিজ ও পানি পড়া, দিয়ে সেগুলো খেতে কিংবা হাতে গলায় বা মাটিতে পুতে রাখার পরামর্শ দিচ্ছে।
বাবুল আচার্যের কাছে পরিবারের আয় উন্নতির জন্য তাবিজ আনার জন্য গিয়েছিলেন মির্জাপুর ইউনিয়নের সাধন দাশ। তিনি সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন তাবিজ এর জন্য ৬০০ টাকা দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সে তাবিজে কোন ফল পাননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ভূক্তভোগী জানান সে এক  মেয়েকে ভালবাসতো। সে মেয়েকে পাওয়ার জন্য আংটি দিয়েছিল ভুপাল আচার্য। বিনিময়ে নিয়েছিল ২৫০০ টাকা। আংটি নেয়ার পরেও মেয়েটিকে বসে আনতে পারেনি ভূক্তভোগী সে যুবক। বর্তমানে সে মেয়ের অন্যত্র বিয়ে হয়ে যায়।
সূত্রে জানা যায়, ললিত মোহন বাবুল আশ্চার্য্য, সাধন আশ্চার্য্য, ভুপাল আশ্চার্য্য, গোপাল আশ্চার্য্য, কালাবাশী আশ্চার্য্য, রাখাল আশ্চার্য্য, কর“নাময় ভট্টাচায্য ও মাহবুব আলম সহ প্রায় দশ জন জ্যোতিষ এভাবেই প্রতারিত করছে গ্রাম্য জনসাধারণকে। মুলত নবগ্রহ জ্যোতিষ, কুষ্টি লিখা ও পুজা অর্চনার কথা বললেও তাদের মুল ব্যবসা হলো আংটি, পাথর, তাবিজ ও জাদুটোনা করা। জ্যোতিষ শাস্ত্রে কোনধরণের শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়াই তারা এসব ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের এসব চিকিৎসায় কোন ফল না পেয়ে আর্থিক ও মানষিক তির সম্মুখিন হয়ে আফসোস করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।
জ্যোতিষী সাধন আশ্চার্য্য জাদু টোনা কিংবা পাথর এর কথা অস্বীকার করে বলেন, তিনি মুলত নবগ্রহ তাবিজ লিখেন এবং কুষ্টি লিখেন। কিন্তু সাংবাদিকদের সামনেই কয়েকজন রোগিকে জিন চালান কিংবা বশীকরণ তাবিজ দেয়ার কথা বললেও তিনি পরে এসব কথা এমনি এমনি বলেছেন বলে জানান।
ভুপাল আশ্চার্য্য জানান, পারিবারিক বাপ দাদার পেশার সুত্র ধরেই তিনি এই পেশায় আসেন। তিনি এর আগে কাটমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করলেও পরে এই পেশায় কেন এলেন বা তার শিক্ষাগত যোগ্যতা কতটুকু সে প্রশ্নের জবাব তিনি দিতে পারেননি।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সেকান্দর চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, আমি শুনেছি তবে দেখি নাই । তবে তিনি সাধারন জনগনকে এসব ভূয়া জ্যোতিষীদের কাছ থেকে দূরে থাকার উপদেশ দেন।
এ ব্যাপারে হাটহাজারী মেডিকেলের আবাসিক অফিসার ডা: শেখ ফজলে রাব্বির কাছে জানতে চাইলে তিনি সিডি নিউজ২৪.কমকে জানান , এ ধরনের ভূয়া জ্যোতিষীদের উপদ্রব যত্রতত্র বেড়ে চলেছে আর তাদের হাতে প্রতারিত হচ্ছে সাধারন মানুষ। তবে ডাক্তারী মতে এসব জ্যোতিষীদের কোন প্রকার ভিত্তি নেই ।
Ruby