শনিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১২

ঠাকুরগাঁওয়ে আদিবাসীদের দূর্বিসহ জীবন


আল মাহামুদুল হাসান বাপ্পী, ঠাকুরগাঁও :: ঠাকুরগাঁও জেলার ১৫ হাজার আদিবাসীদের জীবন সংসার চলে অভাব অনটন ও কষ্টের মধ্যে দিয়ে। খাল-বিলের শালুক ও শামুক খেয়ে কোন মতে বেঁচে থাকতে হয় তাদের। সরকার আসে সরকার যায়, কিন্তু কোন সরকার তাদের খোঁজ-খবর রাখেনা। তাই তাদের সারা বছরই খাদ্য কষ্টের সাথে সংগ্রাম করে জীবন চালাতে হয়।
জেলার হরিপুর উপজেলার আদিবাসীদের কয়েকটি গ্রাম সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার আদিবাসীরা অর্থের অভাবে অনেকেই নিজ ধর্ম ত্যাগ করে অন্য ধর্মে ধর্মান্তরিত হচ্ছে। আদিবাসী নারী-পুরুষ উভয়েই খুব পরিশ্রমী হলেও নিজের কোন জায়গা জমি না থাকায় অন্যের  বাড়িতে দিন মজুর করে জীবন চালাতে হয় তাদের। সরকারি রিলিফ, ভিজিডি, ভিজিএফ, বয়স্ক ও বিধবা ভাতার কার্ড তাদের ভাগ্যে কখনও জোটেনা। দু-একজন পেলেও অধিকাংশ আদিবাসীরা সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। অর্থাভাবে শিক্ষা ক্ষেত্রে সুফল বয়ে আনতে পারছেনা আদিবাসী সম্প্রদায়ের ছেলে মেয়েরা। যে বয়সে শিশুদের স্কুল যাওয়ার কথা সে বয়সে আদিবাসীদের ছেলে-মেয়েরা নিজের ও পরিবারের জীবন বাঁচাতে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে হয়। শিক্ষা ক্ষেত্রে অদক্ষ হওয়ার ফলে আদিবাসীরা মদ, গাঁজা, চুঁয়ানিসহ বিভিন্ন মরণ নেশা জাতীয়দ্রব্য পান করে থাকেন।
দামোল গ্রামের মঙ্গল মাড্ডী জানান, ছেলে-মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে এই বৃদ্ধ বয়সে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে মাঠে-ঘাটে কাজ করি। গত ভোটের সময় মাঠের মধ্যে এসে বড় বড় কথা বলেন নেতারা ভোট চাইলো, ভোটও দিলাম। কিন্তু ভোট হওয়া অনেক দিন চলে গেলেও আর ঐসব নেতাদের দেখা মেলেনি। তাই আমাদের ভাগ্যের উপর নির্ভর করে জীবন-সংসার চলছে।
কামারপুকুর গ্রামের রাধা রানী নামে এক আদিবাসী নারী বলেন, ক্ষেত-খামারে পুরুষের সঙ্গে সমানভাবে কাজ করি। কিন্তু মজুরি পায় পুরুষের চেয়ে অর্ধেক। এর প্রতিবাদ করলে তারপরের দিন আর কেউ কাজে ডাকে না। তখন বসে থাকতে হয় আর বসে থাকলে ছেলে-মেয়ে নিয়ে করতে হয় উপোস। তাই নির্বিকারভাবে মজুরির বৈষ্যমের মধ্যেও কাজ করে থাকি।
এ ব্যাপারে হরিপুর উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম শামীম ফেরদৌস টগর জানান, আদিবাসীদের মুল জনগোষ্ঠি থেকে আলাদা ভাবে দেখা হয়না। সরকারি সুযোগ সুবিধা তাদেরকেও দেওয়া হয়। এবং কি তাদের জন্য এ উপজেলায় শিরিপুর আদিবাসী একটি বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেখানে তাদের ভাষা সম্পর্কে পাঠদান দেওয়া হয়। আর যদি ইতিপূর্বে হয়ে থাকে তাহলে বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখব।
অপরদিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার হারুন অর রশিদ জানান, শিক্ষার ক্ষেত্রে আদিবাসীদের জন্য এখানে একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তবে তাদের জন্য প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষ সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়।
জেলা শিক্ষা অফিসার এসএম তৌফিকুজ্জামান জানান, জেলার আদিবাসীদের শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ সুযোগ সুবিধা রয়েছে। কিন্তু তারা নিয়োমিত স্কুলে আসেনা।
Ruby