রবিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

চারঘাটে আম বাগানের পরিচর্যায় ব্যস্ত আম চাষীরা


মিজানুর রহমান বিপ্লব, চারঘাট (রাজশাহী) প্রতিনিধি :: আসছে আমের মৌসুম। এর প্রমান মেলে আমের রাজধানী খ্যাত রাজশাহী অঞ্চলের গাছে গাছে আমের সমারোহে। ছোট-বড় সকল আমের গাছে আম ধরেছে। চারিদিকে শুধু আমের সমারোহ, গাছের কোন খানেই যেন আম ধরতে ভুল হয়নী। এই সময় আম চাষীরা আমের বাগানে স্প্রে করা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। আমের ফলন যাতে ভাল হয় সেই জন্য গাছে মুকুল আসার পর থেকেই আম বাগানের মালিকরা পরিচর্যা শুরু করে দেয়। উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী ও চাপাঁইনবাবগঞ্জ জেলা ছাড়া অন্যান্য জেলাগুলোতেও কম বেশী আম পাওয়া যায় তবে রাজশাহী ও চাপাঁইনবাবগঞ্জ জেলার আম খেতে সুসাধূ। আমের জন্য বিখ্যাত রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী ও চাপাঁইনবাবগঞ্জ জেলা। এই অঞ্চলে নাম না জানা হরেক রকমের আমের গাছ রয়েছে মাঠের পর মাঠ। এখানকার আম খেতে সুসাধূ ও মিষ্ঠি হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সখিন মানুষরা আসে রাজশাহীর আম কিনতে । আবার কেউ কেউ আমের টুকরির করে বিভিন্ন জায়গায় আত্মীয়- স্বজনদের বাড়িতে পাঠায়। দেশের বিভিন্ন কোম্পানী বিভিন্ন ধরনের আচার,বিভিন্ন ধরনের চাটনি ও জুস তৈরীর জন্য পাকা আম কিনে নিয়ে যায় এখান থেকে। এই অঞ্চলের মানুষরা আমের ব্যবসায় লাভ বেশী হওয়ায় অন্যান্য আবাদী জমিতেও আমের আবাদ শুরু করে ১৫/১৬ বছর পূর্বে থেকেই সেই সব আবাদী জমিগুলো এখন গাছ বড় হয়ে  জমি ছায়া হওয়ায় অন্য আবাদ হয়না। তাছাড়া যে জমিতে বছরে একটি ফসলে যে আয় আসবে তার থেকে অনেক লাভ আসবে আম বাগান করে। সেই থেকেই কৃষকরা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আবাদী জমিতেই আমের বাগান করতে শুরু করে। একটি বাগান বিক্রয় হয় ২০ লাখ থেকে ৮০/৯০ লাখ পযর্ন্ত। ঢাকা চট্রগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আম ব্যবসায়ীরা আমের মৌসুম আসার আগেই চলে আসে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী জেলার চারঘাট-বাঘা এলাকাতেগুলোতে। সেখান থেকেই ব্যবসায়ীরা আমের পাতা ক্রয় করে এবং পরিচর্যা শুরু করে। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেও আম ব্যবসা করে প্রচুর লাভবান হচ্ছে। রাজশাহীর চারঘাট -বাঘা উপজেলার পাশ দিয়ে যে কোন যানবাহনে ভ্রমন করলে দেখা যাবে চারিদিকে শুধু বিভিন্ন জাতের আমের বাগান কোন খানেই যেন কোন আবাদী জমি নেই । চারঘাট উপজেলার ভায়ালক্ষীপুর গ্রামের আজগর, চারঘাট মিয়াপুর গ্রামের মকুল ও ময়েন উদ্দিন, সলুয়া জাফরপুর গ্রামের শিপন, সাদিপুর গ্রামের জিল্লুর সহ স্থানীয় আম ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছরের তুলনায় এবার আমের মুকুল ভাল আসছে। সঠিক সময় মত ¯েপ্র অথবা পরিচর্যা করা হচ্ছে । যদি প্রাকৃতিক কোন বির্পযয় না হয় তাহলে আশা করছি আগের বছর গুলোর চেয়ে এবারের আমের ফলন ভালো হবে এবং ব্যবসায়ীরা ভাল লাভবান হবে। অনেকে অন্য ব্যবসায় পুজিঁ খাটানোর  চেয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার আমের পাতা কেনা রয়েছে ৩ বছর অথবা ৫ বছরের মেয়াদে। অনেক ব্যবসায়ী ৩ বছরের মেয়াদে বাগান ্ক্রয় করে যাতে প্রথম বছর ভাল ফলন না হলেও পরের বছর গুলোতে ভাল ফলন হবে এই আশায়। রাজশাহীতে আম পাওয়া যায়, নেংড়া,ফজলি, খেরসাপাত, হিমসাগর, কৃষানভোগ, মলি¬কা, গোপালভোগ, বিন্দাবন্দ, দুৎসার, রানি পছন্দ, লকèা, আষিনি আম ছাড়াও বিভিন্ন জাতের গুঠি আম এবং  নাম না জানা হরেক রকমের আম পাওয়া যায়। এদের মধ্যে নেংড়া ও ফজলি আম সবচাইতে বেশী সুসাধু ও মিষ্টি । কিছু কিছু আম আছে দেখতেও হলুদ রঙ্গের মিষ্টি গন্ধ এবং খেতেও মিষ্টি। এই আম কে কেন্দ্র করে  এলাকার হাজার হাজার মানুষের কর্মের সুযোগ হয়। অনেক এলাকায় পুরুষ ও মহিলারা এখন থেকেই আমের টুকরি বানানো শুরু করে দিয়েছে সময় এলেই আম ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রয় করবে। আম ব্যবসাকে পূজি করে এলাকার হাজার হাজার মানুষ দিনাতিপাত করছে। সারা বছর ধরে কোন কোন ব্যবসায়ী  আমের মৌসুম শেষ হলে শুধু আম গাছের পাতা কিনে, আবার পাতায় মুকুল আসার পর কিছু লাভ আসলেই বিক্রয় করে অন্য ব্যবসায়ীদের কাছে। আবার আম পুষ্ট হওয়ার পর আম গাছে থাকতেই অন্য ফরিদের কাছে বিক্রয় করে। এই ভাবে বছরের সব সময় আমের ব্যবসা চলে আসছে। চারঘাট-বাঘার সচেতন মহল মনে করে এলাকায় একটি আম রক্ষনাবেক্ষন করার জন্য একটি হিমাগার নির্মানের দাবী জানান । হিমাগার  নির্মান হলে ব্যবসায়ীরা এই হিমাগারে আম সংরক্ষন করতে পারবে। সেখান থেকে বিভিন্ন বাজার জাত করতে পারবে। হিমাগার না থাকায়  অনেক আম নষ্ট হয়ে য়ায় এবং ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষতির সম্মুক্ষিন হয়। এ ব্যপারে চারঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সালঅহ উদ্দিন সরদার জানান, আম বাগান পূর্বে ছিল ১৫৭৫ হেঃ বর্তমানে ১৬৬০ হেঃ জমিতে আমের বাগান রয়েছে।  এবার গত বছরের চেয়ে ভাল ফলন হবে। আবাহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবং পোকা ও রোগের আক্রমন কম থাকায়  এ বছর আমের ফলন ভাল হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

Ruby