বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

নাটোরে খবরের কাগজ হকারের রহস্যজনক মৃত্যু তিন দিনেও লাশের ময়না তদন্ত শেষ হয়নি : মামলা তুলতে হুমকি


আকতার হোসেন অপূর্ব নাটোর প্রতিনিধি :: নাটোরের খবরের কাগজ হকার আল মামুনের রহস্যজনক মৃত্যুর তিন দিন পরেও তার লাশের ময়না তদন্ত শেষ হয়নি। মামলা তুলে নিতে বাদীকে হুমকি দেয়া হচ্ছে। পরিবার ও প্রতিবেশীদের অভিযোগ তার স্ত্রী রেশমা বেগম দুই যুবককে দিয়ে নিজ ঘরে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করিয়েছে। নাটোর থানা ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, আল্ মামুন (৩৭) নাটোর শহরের তেবাড়িয়া মহল¬ার মৃত সামছুল হকের ছেলে কৃষি কাজের পাশাপাশি খবরের কাগজ বিক্রি করতো। গত মঙ্গলবার দুপুরে অপরিচিত দুই যুবক তার বাড়ি থেকে বের হওয়ার পরপরই স্ত্রী রেশমা বেগম (৩০) পাশের বাড়ির লোকজনকে জানায় তার স্বামী আল্ আমিন ঘুমের বড়ি খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। স্থানীয় লোকজন ছুটে এসে দেখেন যে, আল্ আমিনের গলায় ফাঁসের দাগ। তখন তার স্ত্রী জানায়, তার স্বামী গলায় ফাঁস দিয়েছিল। সে তার বড় মেয়েকে সাথে নিয়ে স্বামীকে নামিয়ে বারান্দায় রেখেছে। এ অবস্থায় ঘরের মেঝেতে নাইলোনের এক খন্ড দড়িও দেখতে পাওয়া যায়। অসুস্থতার কথা শুনে প্রতিবেশী আল্ আমিনের বড় ভাইয়ের শ্বশুর দুলু মিয়া সহ অনেকেই আল্ আমিনকে হাসপাতালে নিতে ভ্যান ডেকে আনলে স্ত্রী রেশমা তাদের বাধা দেয়। এর প্রায় আধা ঘন্টার মধ্যে বিনা চিকিৎসায় আল মামুন মারা যায়। এ ব্যাপারে ওই দিন বিকেলে নিহতের ভাই শরিফুল হক নাটোর সদর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সুরতহাল করে ময়না তদন্তের জন্য লাশ নাটোর সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। বুধবার বিকেল তিনটা পর্যন্ত লাশ সদর হাসপাতাল মর্গে রাখার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক লাশের ময়না তদন্ত করতে অপারগতা জানান। হাসাপাতালের আবাসিক চিকিৎসক আব্দুল গণি বলেন, মারা যাওয়ার বর্ণনা শুনে আমরা নিশ্চিত হয়েছি এখানে ময়না তদন্ত করা হলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন করা সম্ভব হবেনা তাই ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য লাশটি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহতের মামা গাফফার খান চৌধুরী জানান, বৃহষ্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আল আমিনের লাশের ময়না তদন্ত করেননি। লাশ সেখানের মর্গেই পড়ে ছিল। নিহতের আর এক ভাই শহিদুল হক বলেন, আমার ভাই আল আমিন পারিবারিক জীবনে খুবই অসুখী ছিল। আল আমিনের স্ত্রী রেশমা বেগম বেপরোয়া জীবনযাপন করে। তাকে নিয়ে বহুবার বিচার-শালিস এবং মামলা-মোকর্দ্দমা হয়েছে। ঘটনার দিন সে শহরের কানাইখালী এলাকা থেকে দুই সন্ত্রাসীকে বাড়িতে ডেকে এনেছিল। আমাদের ধারণা সে তাদের দিয়েই শ্বাসরোধ করে আল্ আমিনকে হত্যা করেছে। তিনি বলেন নীচু ওই ছাপড়া ঘরে কোন ভাবেই ফাঁস দেয়া সম্ভব না। মামলার বাদী নিহতের ভাই শরিফুল হক জানান মামলা করার পর দিনই নিহত ভাই এর স্ত্রী রেশমা বেগম তার বাড়িতে গিয়ে মামলা করার কারণে তাকে শাষিয়ে এসেছে। এখন মামলা তোলার জন্য তাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে। নিহতের স্ত্রী রেশমা বেগম এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার স্বামী নিজেই নিজ ঘরে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তার উপস্থিতিতে কিভাবে ফাঁস লাগালো সে ব্যাপারে তিনি কোন মন্তব্য করেননি। নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল¬াহ আল্ মামুন বলেন, মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে সুস্পষ্ট তথ্য প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। ময়না তদন্তের ফলাফল হাতে এলেই বলা যাবে এটা হত্যা না আত্মহত্যা । আপাততঃ একটি অপমৃত্যুর মামলা নেওয়া হয়েছে। তদন্ত করে অপরাধীদের সনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Ruby