বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

নওগাঁয় দোররা মারার ঘটনায় মামলা, মওলানাসহ গ্রেপ্তার ২


মো আককাস আলী, নওগাঁ প্রতিনিধি :: নওগাঁর রানীনগর উপজেলার মিরাট উত্তরপাড়া গ্রামে দুশ্চরিত্র আখ্যা দিয়ে এক গৃহবধূকে তওবা পড়িয়ে ১০১টি দোররা ও ৫০০ টাকা জরিমানার ঘটনায় গত বুধবার গৃহবধূ আকলিমা বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেছে। পুলিশ মওলানা নূরে আলম ও আফজাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে। মামলায় অন্য আসামিরা হলোÑ এচাহাক মেম্বার, শুকুর মেম্বার, মোফাজ্জল, আজিজুল, আছাব আলী, কাদের, আজাদ, শফিকুল, ফজল ও ছটু।
গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একই গ্রামের মেছের আলীর ছেলে আব্দুল মতিন (২৫) প্রতিবেশী ভ্যানচালক খোরশেদ আলমের অনুপস্থিতিতে শয়ন ঘরে ঢুকে খোরশেদের স্ত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। এ সময় গৃহবধূ চিৎকার দিলে পাশের বাড়ির লোকজন ছুটে এসে মতিনকে আটক করে। খবর পেয়ে গ্রামের লোকজন জড়ো হয়ে রাতভর একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে মতিনকে। শুক্রবার সকালে গ্রামবাসী মতিনের বিচার দাবি করলে গ্রামের মাতব্বর আফজাল হোসেন, আজিজুল ইসলাম, তোফাজ্জল হোসেনসহ কয়েকজন বিচার করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কৌশলে মতিনকে ছেড়ে দিয়ে সটকে পড়েন। বিকালে গ্রামবাসীর মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) মেম্বার
ইছাহাক আলীর নেতৃত্বে ওইদিন রাতেই মাতব্বররা গ্রাম্য সালিসে বসেন। ভ্যানচালক আনোয়ার অভিযোগ করে সাংবাদিকদের বলেন, সালিস বৈঠকে মাতব্বররা গৃহবধূকে দায়ী করে তওবা পড়ানোসহ ১০১টি দোররা মারার রায় দেন। একই সঙ্গে গ্রামের লোকজনকে এক বেলা খাওয়ানোর জন্য গৃহবধূর কাছ থেকে ৫০০ টাকা ও মতিনের কাছ থেকে ৪ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। তওবা পড়ানো ও দোররা মারার দায়িত্ব দেয়া হয় মিরাট নুরানী হাফেজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক মওলানা নূরে আলমকে। তিনি আরো জানান, শনিবার সকালে মেম্বার ও মাতব্বরদের উপস্থিতিতে মওলানা নূরে আলম গৃহবধূকে তওবা পড়িয়ে ও ১০১টি দোররা মেরে সালিস বৈঠকের রায় কার্যকর করেন।
এ বিষয়ে কথা হলে ওই গৃহবধূ সাংবাদিকদের বলেন, দোররা মারার পর অসুস্থ হয়ে পড়লেও তাকে এখন পর্যন্ত কোনো চিকিৎসা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়নি। ঘটনার পর থেকে লোক লজ্জায় ঘরের বাইরে বের হননি। অন্যায়ভাবে তাকে নির্যাতন করা হলেও গ্রামের মাতব্বরদের ভয়ে তিনি কিংবা তার স্বামী এ ঘটনার বিচার চাইতে সাহস পাচ্ছেন না। গতকাল বুধবার পুলিশের সহযোগিতায় গৃহবধূ আকলিমা থানায় এসে ১২ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করলে পুলিশ মওলানা নূরে আলম ও আফজাল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে।
এ বিষয়ে মিরাট ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ইছাহাক আলী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, অপরাধীদের শরিয়ত মোতাবেক বিচার করা হয়েছে। গ্রাম্য সালিসে এ ধরনের বিচার করার এখতিয়ার আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি নিয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। মিরাট নুরানী হাফেজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক মওলানা নূরে আলমের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ইউপি সদস্য ও মাতব্বরদের নির্দেশেই ওই গৃহবধূকে তওবা পড়িয়ে শাস্তি দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে রানীনগর থানার পরিদর্শক (ওসি) শাহরিয়ার খান বলেন, মামলা হয়েছে। পুলিশ ২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। অন্যদের গ্রেপ্তারের জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
Ruby