বৃহস্পতিবার, ৮ মার্চ, ২০১২

‘সৌদি কূটনীতিক হত্যা : হত্যাকারীরা পরিচিত’

সৌদি কূটনীতিক হত্যায় শুধু ঢাকা নয়, তামাম দুনিয়ায় প্রতিক্রিয়া হয়েছে। হত্যার নানা কারণ, যুক্তি ও বিশ্লেষণ আসছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে। যদিও সৌদি আরব সরাসরি কিছু বলেনি। তবে বাহরাইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ খালিদ বিন আহমদ আল খালিফা বলেছেন, হত্যাকারীরা চিহ্নিত। সামাজিক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক টুইটারে বাহরাইনের মন্ত্রী লিখেছেন, অশুভ ও দুর্বৃত্ত শক্তির হাতেই খুন হয়েছেন সৌদি কূটনীতিক খালাফ আল আলি (৪৫)।এ বিষয়টি আর বিশদ না করে তিনি লিখেছেন, এটা প্রকাশ্য যুদ্ধ, আর হত্যাকারী পরিচিত। এদিকে সৌদি আরবে বসবাসরত খালাফ আল আলি’র ভাই দেশটির গণমাধ্যম ‘সবক’কে জানিয়েছেন, সোমবার টেলিফোনে ভাইবোন এবং একমাত্র সন্তান নাসের (২৪)-এর খোঁজখবর নিয়েছেন খালাফ। ভাই সম্পর্কে খালিদ বলেন, বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর ৯ ভাই বোনের সংসারে খালাফ ছিলেন আমাদের পিতৃপ্রতিম অভিভাবক। খালিদ বলেন, তার জানা মতে খালাফের কোন শত্রু নেই, কারও সঙ্গে তার বিরোধও ছিল না। তিনি জানান, জর্ডানের রাজধানী আম্মানেAdd an Image বদলির আদেশাধীন খালাফের এ মাসেই ঢাকা ছেড়ে নতুন কর্মস্থলে যোগ দেয়ার কথা ছিল। দু’বছর ধরে ঢাকায় কর্মরত খালাফ আগে একটানা ৭ বছর আজারবাইজানে কাজ করেছেন। সৌদি কূটনীতিককে হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। দেশটির স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনোয়ার মোহাম্মদ গরগাশ এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে কূটনীতিক হত্যার নিন্দা জানাই। বাংলাদেশ সরকার মর্মান্তিক এ হত্যাকাণ্ডের তদন্তে উদ্যোগ নিয়েছে জানিয়ে আরব নিউজ লিখেছে, সৌদি সরকার বাংলাদেশ সরকারের কাছে এ ঘটনার দ্রুত তদন্ত দাবি করেছে। একই সঙ্গে ঢাকায় তাদের দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রক্ষায় নিরাপত্তা জোরদার করতে বলেছে। ওই নিউজ এজেন্সি জানায়, সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স সাউদ আল ফয়সল এবং প্রতিমন্ত্রী নিজার বিন ওবাইদ মাদানীর পক্ষ থেকে নিহতের ভাইয়ের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করা হয়েছে।
ওদিকে আরব নিউজ গতকাল এপি’র বরাতে বলেছে, গত বছর মার্কিন সরকার যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূতকে হত্যার ব্যর্থ চেষ্টার সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে ইরানীয় এজেন্টদের দায়ী করেছিল। অন্যদিকে চলতি বছরেই ভারত, থাইল্যান্ড ও জর্জিয়ায় নিযুক্ত কূটনীতিকদের ওপর হামলা বা হামলার চেষ্টা চালানোর জন্য ইসরাইল অভিযুক্ত করেছিল ইরানকে। ২০১১ সালের মে মাসে পাকিস্তানের করাচিতে বন্দুকধারীরা একজন সৌদি কূটনীতিককে হত্যা করেছিল। পাকিস্তানি পুলিশ বলেছে, বাহরাইনে সৈন্য পাঠানোর সৌদি সরকারের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে ওই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল। বাহরাইনে সংখ্যাগরিষ্ঠ শিয়া ক্ষমতাসীন সুন্নি রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। বাংলাদেশ সৌদি আরবের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। বাংলাদেশী শ্রমিকদের কাছে সৌদি আরব এক আকর্ষণীয় গন্তব্য।
ঢাকা থেকে মৃতদেহ সৌদি আরবে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলেও খালাফ আল আলি’র পরিবারকে আশ্বস্ত করা হয়েছে। কুয়েতের গণমাধ্যমে প্রচারিত খবরে বলা হয়েছে, ঢাকাস্থ সৌদি দূতাবাসের কনস্যুলার বিভাগের সেকেন্ড সেক্রেটারি খালাফ আল আলির খুনের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে কুয়েত। দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী শেখ সাবাহ আল খালিদ আল সাবা এক প্রতিক্রিয়ায় এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তারে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন।
গালফ নিউজের সম্পাদকীয়: বাংলাদেশকে অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হবে। সেখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এমনই অবনতি হয়েছে যে, জনগণ এখন অনিরাপদ অনুভব করছে। আজ প্রকাশিত অনলাইন গালফ নিউজের এক সম্পাদকীয়তে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, সোমবার বাংলাদেশে সৌদি আরবের কূটনীতিক ও গত মাসে এক সাংবাদিক দম্পতি খুন হন। এতে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী এজেন্সিগুলোর সক্ষমতা নিয়ে। যদিও বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, সাংবাদিক দম্পতি খুনিদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আটক করা হবে- কিন্তু তিন সপ্তাহের বেশি সময় পার হয়েছে কোন ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি। এখন ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ আছে। কয়েক মাস আগে, একটি জেলা শহরের জনপ্রিয় এক মেয়রকে নিজেদের প্রতিপক্ষ গ্রুপ হত্যা করে। ওই ঘটনায় মন্ত্রিপরিষদের এক সদস্যের ভাই জড়িত বলে সন্দেহ করা হয়। সোমবার সৌদি আরবের উচ্চপদস্থ এক কূটনীতিককে হত্যা করা হয়, কিন্তু সরকার যদি কার্যকর ব্যবস্থা না নেয় তাহলে এটাই শেষ হত্যা নয়। যখন রাজনৈতিক বিরোধীদের গ্রেপ্তারের বিষয় আসে তখন পুলিশ বাহিনী সুপার কার্যক্ষমতা দেখায়। আইনশৃঙ্খলার ক্ষেত্রে এজন্যই সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন জাগিয়ে তুলেছে। বাংলাদেশ যদি স্থিতিশীল গণতন্ত্র চায়, তাহলে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত প্রতিষ্ঠান নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। এ ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই।
সৌদি কর্মকর্তার হত্যাকারী সাজা পাবে: মজিনা
ওদিকে পটুয়াখালী ও কলাপাড়া প্রতিনিধি জানান, সৌদি কর্মকর্তার হত্যাকারীকে খুঁজে বের করে সরকার শাস্তির আওতায় আনতে সক্ষম হবে বলে আশাবাদী ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা। গতকাল পটুয়াখালী সফরে গেলে তিনি সাংবাদিকদের কাছে এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এ সময় মার্কিন দূত বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কার্যকর সংলাপের এখনই সময়। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার আগে তিনি প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে উপকূলবাসীর সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পাখিমারায় প্রফুল্ল  ভৌমিক মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত দুর্যোগ প্রস্তুতি মহড়া পরিদর্শন করেন। বাংলাদেশের দুর্যোগ  মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র সব সময় পাশে থাকবে বলে জানান তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে বাংলাদেশে ৫৪৭টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মিত হয়েছে জানিয়ে ড্যান মজিনা বলেন, আরও ১১৮টি আশ্রয়কেন্দ্র  তৈরি হচ্ছে। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা বলেন, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হচ্ছে দেশের মধ্যে সবচেয়ে দুর্যোগপূর্ণ এলাকা। এ অঞ্চলের মানুষ যাতে দুর্যোগকালে সমূহ বিপদ মোকাবিলা করতে পারে, সেজন্য সব সময় প্রস্তুতি রাখতে হবে। বাংলাদেশ সফররত উপসহকারী মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ড. জেমস এ শিয়ার এ সময় উপস্থিত ছিলেন। সঙ্গে ছিলেন খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আসলাম আলম, ইউএসএ আইডি’র বাংলাদেশ মিশন প্রধান ড. রিচার্ড গ্রিন প্রমুখ। (
বিজয় নিউজ ২৪ ডটকম)
Ruby