বুধবার, ৭ মার্চ, ২০১২

আজ ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ

undefinedঐতিহাসিক ৭ মার্চ। বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে এক অনন্য সাধারণ ও অবিস্মরণীয় দিন। এই দিনই বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের চুড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানান।
৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু তার গগন বিদায়ি কণ্ঠে উচ্চারণ করেছিলেন, ‘‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। … তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে …।’’
বঙ্গবন্ধু তার এই বজ্রকণ্ঠের ভাষণের মধ্য দিয়েই জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের দিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
১৯৭১ সালের এই দিনে তদানীন্তন রেসকোর্স ময়দানে(বর্তমানের সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) সমবেত জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে
ঔপনিবেশিক পাকিস্তানের জুলুম, অত্যাচার, শোষণ নির্যাতনের হাত থেকে মুক্তির জন্য সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

তিনি মুক্তিকামি বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘‘প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্ল¬ায়, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোল। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাক। মনে রাখবাঃ রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেবÑ এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল¬াহ।”
বঙ্গবন্ধুর তেজদীপ্ত কণ্ঠের এই ভাষণ ও দিক নির্দেশনা নিয়ে শতাব্দীর পর শতাব্দীর পরাধীনতার গ্ল¬ানি মোচনে বাঙালি জাতি স্বাধীনতার জন্য  মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করে।
১৯৪৭ সালে তথাকথিত ধর্মভিত্তিক ভ্রান্ত দ্বি-জাতিতত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান নাম অসম রাষ্ট্রের জন্ম হয়। সেই সঙ্গে এই ধর্মভিত্তিক, সাম্প্রদায়িক পাকিস্তান রাষ্টের শাসন-শোষণ-নির্যাতন অসাম্প্রদায়িক বঙালির উপর চাপিয়ে দেয়া হয়।
এর বিরুদ্ধে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ধাপে ধাপে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিসত্তা ও জাতিগত চেতনার উন্মেষ ঘটিয়েছিলেন।
স্বাধীনতা সংগ্রামের চুড়ান্ত পর্বে এই দিন বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানিদের শাসন-শোষণ-পীড়ন থেকে নিজেদের মুক্ত করে জাতীয় স্বাধীনতা অর্জনের চুড়ান্ত দিক-নির্দেশনা প্রদান করেছিলেন।
পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ২৩ বছরের নিরবচ্ছিন্ন বাঙালি জাতির রক্তঝরা সংগ্রামে প্রাণপুরুষ ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই দিনে তিনি স্বাধীনতা লাভের অদম্য স্পৃহায় মুক্তিকামী জনতার আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পৌছানোর নির্দেশনাই দিয়েছিলেন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে দেশ জুড়ে সূচিত অসহযোগ আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিরস্ত্র বাঙালির উপর ২৫ মার্চের কালোরাতে পাক হানাদার বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে।
এর পর পরই তিনি পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিন্ন করে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পেরিয়ে ২৬ মার্চ রাতের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে সমগ্র বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে ৯ মাসের বীরত্বপূর্ণ সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্মহুতি ও ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করে বিজয় ছিনিয়ে আনে।
২৫ মার্চ রাতেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে বাংলার মানুষ। মুক্তিকামি নিরস্ত্র মানুষ একটি আধুনিক অন্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত বাহিনীর বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর মনোবল, সাহস ও প্রস্তুতি তারা নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের দিক নির্দেশনা থেকেই।
Ruby