বৃহস্পতিবার, ১২ এপ্রিল, ২০১২

বাংলা বর্ষবরণে ঢাকঢোল পেটানো হলেও হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী গরু-মহিষের গাড়ী লাঙ্গল ঢেঁকি হুক্কা বিলীন হয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ সব খেলা।

মোঃ আককাস আলী, নওগাঁ প্রতিনিধি :: প্রতিবছর বাংলা বর্ষবরণকে ঘিরে ঢাকঢোল পিটিয়ে পান্তা খাওয়াসহ নানা আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হয়ে থাকে। কিন্তুু এত শোরগলের সাথে ঢাকঢোল পেটানো হলেও গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী গরু-মহিষের গাড়ী, কাঠের লাঙ্গল, ঢেঁকি ও হুক্কা কালের আবর্তে হারিয়ে যেতে বসেছে। সেই সাথে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী অসংখ্য গ্রামীণ খেলা-ধুলা। বাংলা নববর্ষ এলেই এদেশের মানুষ নিজেদের বাঙ্গালী প্রমাণ করার জন্য গ্রামীণ জীবনের নানা অনুসঙ্গ নিয়ে মেতে উঠেন। এতকিছুর পরও গ্রাম-বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রধান প্রধান উপাদানগুলোর ব্যবহার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেগুলো বিলীন হয়ে যাচ্ছে। গ্রাম-বাংলার ওইসব ঐতিহ্যবাহী জিনিষের মধ্যে গরু-মহিষের গাড়ী, কাঠের লাঙ্গল, ঢেঁকি ও হুক্কাসহ গ্রামীণ জীবনযাপনে ব্যবহৃত অতিপরিচিত গৃহস্থালী সামগ্রীর অনেক কিছুই বিলীন হতে চলেছে। নিকট অতীতেও লক্ষ্য করা গেছে গরু-মহিষের গাড়ী ছাড়া বিয়ের কনে ও বরযাত্রীদের যাতায়াত কল্পনাই করা যেত না। বিয়েতে গরু-মহিষের গাড়ীর ব্যবহার গ্রাম-বাংলার একটি অন্যতম ঐতিহ্য। এ ছাড়াও হাটবাজারে নানান পণ্য বহনের জন্য এই গরু-মহিষের গাড়ীই সে সময় মানুষের একমাত্র ভরসা ছিল। সময়ের সাথে দ্রুত চলতে গিয়ে মানুষজন গরু-মহিষের গাড়ীর ব্যবহার বাদ দিয়ে এখন ওই একই কাজে ব্যবহার করছেন রিকসা, ভ্যান, মাইক্রো, কার, বাস, ট্রাকসহ ইঞ্জিনচালিত নানান বাহন। একইভাবে জমি চাষাবাদের জন্য সে সময় কাঠের লাঙ্গলই ছিল কৃষকদের একমাত্র ভরসা। এখন কৃষকরা কাঠের লাঙ্গলের ওই স্থানটিতে পাওয়ার টিলারসহ যান্ত্রিক লাঙ্গলকে স্থান করে দিয়েছেন। ওই সময়গুলোতে গ্রাম-গঞ্জের মানুষেরা চাল ছাঁটাইয়ের কাজে ঢেঁকি ব্যবহার করলেও ঢেঁকির সে স্থানে এখন চলে এসেছে সব অত্যাধুনিক রাইসমিল। আর কোন গ্রামে ঢেঁকির ধানভানা শব্দ শোনা যায়না। আবার কৃষক-শ্রমিক তাদের ধুমপানের চাহিদা মেটাতে সে সময় হুক্কা ব্যবহার করলেও এখন বিড়ি-সিগারেট দিয়েই সে চাহিদা তারা পূরণ করছেন। এছাড়া গ্রামের ঐতিহ্যবাহী হা-ডু-ডু খেলা, গাদল খেলা, মার্বেল খেলা, ডাংপান্টি খেলা, দড়ি খেলা, কিতকিত খেলা, গোল্লা ছুট খেলা, লাটিম খেলা ও ঘুড়ি উড়ানোসহ নানা খেলায় সারাবছরই মেতে থাকতো সব বয়সী ছেলে-মেয়ে। এসব খেলাকে কেন্দ্র করে গ্রামে-গঞ্জে অনেক সময় বসতো বড় বড় মেলা। এসব মেলায় নিখুঁতভাবে ফুটে তোলা হতো গ্রাম-বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্য। এ সময় গ্রামে গ্রামে বিরাজ করতো অন্যরকম খুশির জোয়ার। এখন এসব প্রবীণদের কাছে শুধুই স্মৃতি। দ্রুত বয়ে চলা সময়ের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে গ্রামীণ ঐতিহ্য ভুলে এখন গ্রাম-বাংলার মানুষজনও হয়ে যাচ্ছেন যান্ত্রিক। #






 
Ruby