বৃহস্পতিবার, ১২ এপ্রিল, ২০১২

আগামীকাল ১৩ এপ্রিল চারঘাটের গনহত্যা দিবস। চারঘাটে মুক্তিযোদ্ধে শহীদদের বধ্য ভূমি আজোও কাঁধে

মিজানুর রহমান বিপ্লব, চারঘাট(রাজশাহী) থেকে :: আগামীকাল ১৩ই এপ্রিল চারঘাটের সারদা থানাপাড়া গনহত্যা দিবস। প্রতি বছর এই ১৩ই এপ্রিল সারদা থানাপাড়া বিভিন্ন কর্মসুচীর মাধ্যমে শোখ দিবস হিসাবে পালন করে আসছে। ১৯৭১ এর ১৩ ই এপ্রিল চৈত্রের কাটফাটা দুপুওে এলাকার শান্তি প্রিয় মানুষ চৈত্রের হাড়ভাঙ্গা খাটুনি শেষে শরীর একটু জিড়িয়ে নেওয়ার জন্য বিছানা ছুই ছুই ভাব। ঠিকসে সময় খবব এলো পাক হায়েনার দল ধেয়ে আসছে চারঘাটের দিকে। এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে  পড়ার পর মানুষ প্রান ভয়ে ছুটাছুটি শুরু করল। এ সময় আর একটি খবর এল পাক বাহিনীরা বানেশ্বও মোড় অতিক্রম করে চারঘাটের দিকে এগিয়ে আসছে। বেলা প্রায় আড়াইটার দিকে পাক সেনারা সারদার দিকে আসার সময় মোক্তারপুর ট্রাফিক মোড়ের নিকট মুক্তিবাহিনীর সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। সেখানে ভিকু, ইউসুফ সহ বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়। সেখান থেকে গুলি করতে করতে পাক সেনারা সারদা পুলিশ একাডেমীতে প্রবেশ করে। গুলির বিকট শব্দে আতংকিত হয় এলাকাবাসী। ঐ সময় সারদা থানাপাড়া গ্রামের নারী- পুরুষ সবাই আশ্রয় নেয় পদ্মার চরে। পাক সেনারা সারদা পুলিশ একাডেমীতে ঢুকে পড়ে এবং পুলিশ একাডেমীর মধ্যে ধ্বংসলীলা চালিয়ে একাডেমী প্যারেড গ্রাউন্ডের দক্ষিন দিকে গিয়ে দেখেতে পায় পদ্মার চওে আশ্রয় নেওয়া সারদা থানাপাড়া গ্রামের নীরিহ মানুষদের। তারপর ঝাপিয়ে পড়ে পাক হায়েনার দল। পদ্মার চরে আশ্রয় নেওয়া মানুষের প্রান থর থর কেঁপে উঠে। নারী ও দশ বছরের নীচে বয়সের শিশুদেও বাছাই করে দুরে তারিয়ে দিয়ে পুরুষদের লাইন করে দাড়িয়ে দিয়ে পাক হায়েনারা নির্বিচাওে মেশিন গানের গুলি চালায়। চোখের পলকে ঝওে যায় প্রায় ৫ শত তাজা প্রান। পাকসেনারা এখানেই ক্ষ্যান্ত হয়নি। লাশ গুলো একত্রিত কওে পেট্রোল ঢেলে আগুন জালিয়ে দেয়। তারপর পাকসেনারা রওনা হয় চারঘাট বাজারের দিকে বড়াল পাড়ে পৌঁছা মাত্রই চারঘাট বাজার ঘাটে মুক্তি বাহিনীর সাথে মুখোমুখি গোলা গুলি হয়। প্রায়  ১ ঘন্টা গুলি বিনিময়ের পর মুক্তিবাহিনীর গোলাবারুদ ফুরিয়ে গেলে তারা পিছু হটে যায়। এ সুযোগে পাক সেনারা চারঘাট বাজাওে ঢুকে পেট্রোল ডেলে বেশ কয়েকটি দোকান পুড়িয়ে দেয়। তারপর গ্রামের মধ্যে ঢুকে পে ড় এলোপাতাড়ী গুলি চালায়। এতে প্রায় এলাকার অর্ধশত মানুষ নিহত হয়। গুলির শব্দে এলাকার মানুষ প্রান ভয়ে দক্ষিন পূর্ব দিকে নিভৃত পল্লী এলাকায় চলে যায়। এখনো সারদা থানাপাড়া গ্রামে এলে মনে হয় স্বামী হারা, সন্তানহারা ও স্বজনহারাদেও কান্নার রোল শোনা যায়। এখনো থানাপাড়া গ্রামের শতাধিক নারী অসহায় জীবন যাপন করছে। দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধেও পর দেশ স্বাধীন হলো । ১৯৭২ সালে জাতির জনক বঙ্গঁবন্ধু শেখ মজিবর রহমান সারদা পুলিশ একাডেমী মাঠে এলেন স্বচক্ষে দেখলেন সারদা থানাপাড় করুন দৃশ্য। ঐ সময় শেখ মজিবকে দেখার জন্য এলাকার হাজার হাজার মানুষ একাডেমী মাঠে সমবেত হয়েছিলেন। আর শেখ মজিবকে দেখার সাথে সাথে সারদা থানা পাড়ার মানুষ কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছিল। ঐ সময় জাতির জনক বঙ্গঁবন্ধু শেখ মজিব শান্তনা দিয়েছিলেন। কিন্তু বিধিবাম ৭৫ এর ১৫ ই আগষ্ট বঙ্গঁবন্ধুকে স্বপরিবাওে হত্যা করা হলো। তবে তার দেওয়া প্রতিশ্র“তি কিছুটা বাস্তবায়ন হয়েছে। আজও সারদা থানাপাড়া ও চারঘাটবাসী ১৩ ই এপ্রিলে শোক দিবস পালন করে। ১৩ ই এপ্রিলে মসজিদে মসজিদে মিলাদ মাহফিল মোনাযাত কবর জিয়ারত সহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে ১৩ই এপ্রিল দিন ভোর শোক দিবস পালন করে।

 
Ruby