রবিবার, ১ এপ্রিল, ২০১২

আজ সিন্দুরমতি দিঘীতে পূর্ণস্নান ॥ লাখ মানুষের ঢল

প্রহলাদ মন্ডল সৈকত, কুড়িগ্রাম থেকে :: আজ রোববার প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তীর্থক্ষেত্র সিন্দুরমতী মেলা। প্রতিবছর চৈত্র মাসের রাম নবমী তিথিতে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। দেশ বিদেশ থেকে আগত লাখ লাখ পূর্ণার্থীরা সিন্দুরমতী দিঘীতে পূণ্যসলিলে  øান করে দেবী সিন্দুরমতী মন্দিরে ফুল, ফল-মূল, বাতাসা নিবেদন করে মানত করেন। নব দম্পতিরা তাদের জিবনে সুখ-শান্তি কামনার্থে উভয় বস্ত্রে গাট দিয়ে যুগল øান সম্পন্ন করেন। লাখ লাখ পূনার্থীর আগমনে এলাকার ৩ কিলোমিটার পর্যন্ত সরগম হয়ে উঠবে। আজ রোববার ভোর থেকে ওই দিঘীতে স্নান শুরু হবে। কথিতে আছে, বাসন্তী পূজার অষ্টমী তিথিতে চিলমারী ব্রক্ষপুত্র নদে স্নান শেষে পূনার্থীরা সিন্দুমতী দিঘীতে স্নান সম্পন্ন করলে তবেই হিন্দুধর্মাবলম্বী ভক্তদের পাপমোচন হয়। একারনে যুগ যুগ ধরে চিলমারী ব্রক্ষপুত্র নদে অষ্টমীর স্নানের পরদিন সিন্দুরমতী দিঘীতে দেশ-বিদেশী থেকে আসা প্রায় লক্ষাধিক পূনার্থীভক্ত স্নান সম্পন্ন করে থাকেন। এই দিনটি উপলক্ষ্যে দিঘীর চারদিকে প্রায় ১ কিলোমিটার জুড়ে বিরাট মেলা বসেছে। মেলায় হাড়ি-পাতিল, খেলনা, দই-দুধ, মিষ্টি, হোটেল, ১০টি ছোট-বড় সাকার্স, পুতুল নাচ সহ হরেক রকমের জিনিসপত্র উঠে। এখানে লক্ষাধিক পুরুষ ও মহিলা দর্শনার্থী মিলন ঘটে। শ্রী শ্রী সিন্দুরমতী পরিচালনা কমিটির কোষাধ্যক্ষ ইন্দ্র কমল রায় জানান, কথিতে আছে- প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে শ্রী রাজ নারায়ন নামে এক জমিদার ছিল। সে সময় পানীয় জলের ভিষন অভাব দেখা যায়। প্রজা হিতৈষী রাজার পানীয় জলের অভাব মোচনে প্রায় ১৫ একর জমির উপর একটি পুকুর খনন করেন। কিন্তু বড়ই আচার্য্যর ব্যাপার এত বড় পুকুর খনন করে এক ফোটা জল পাওয়া যায়নি। অবশেষে এক রাতে রাজার উপর স্বপ্নাদেশ হলো যে, তোর দুই কন্যা সিন্দুর ও মতী কে দিয়ে পুকুরের মধ্যস্থলে পূজা দিলে তবেই জলে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে পুকুরটি। স্বপ্নাদেশ মতে রাজা পর দিন ঢাক-ঢোল পিটিয়ে পূজার আয়োজন করেন। কিশোরী সিন্দুর ও মতীকে অপূর্বরুপে সাজিয়ে পুকুরের মধ্যস্থলে আনয়ন করা হয়। পুজার সময় মনে হলো তুলসী আনা হয়নি। রাজা তুলসী নিয়ে আসতে গেলে আকস্মিকভাবে পুকুরের তলদেশে হতে শতসহস্র জল রাশিতে পুকুরটি ভরে যায়। এসময় পুরোহিত, পূজারী, বাদ্যকারগণ সাঁতারদিয়ে তীরে উঠলেও সিন্দুর আর মতী  উঠতে পারেনি। পুকুরের জলে তাদের দু বোনের সলিল সমাধি হয়। চারদিকে হাহাকার পড়ে গেল। রাজা-রানী শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়ল। সাতদিন অতিবাহিত হওয়ার পর সিন্দুর ও মতী রাজাকে দেখা দেন এবং তারা মারা যাননি, মানবী থেকে দেবত্ব প্রাপ্ত হয়েছে। রাজারকে আরো জানানো হয় যে, প্রতিবছর চৈত্রমাসের রাম নবমী তিথিতে সিন্দুরমতী পুকুরে  øান করলে সকল মনের আশা পূণ্য হবে। সে থেকে এই  øান মেলার প্রচলন হয়ে আসছে।#
Ruby