বুধবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১১

আলীকদমে ড্রেনে পাওয়া মৃত নবজাতকের ঘটনার মানবাধিকার তথ্যানুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ

বাঘক নিউজ ডটকম, মমতাজ উদ্দিন আহমদ, আলীকদম (বান্দরবান) : বান্দরবানের জেলার আলীকদম উপজেলা পরিষদ সড়কে ড্রেনে পাওয়া মৃত নবজাতকের ঘটনার মানাবাধিকার তথ্যানুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন, বান্দরবান জেলা শাখার পক্ষ থেকে এ তদমত্ম রিপোর্ট মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) প্রকাশ করা হয়েছে। জেলা মানবাধিকার কমিশনের সাধারণ সম্পাদক রম্নহুল আমিন জানান, তারা বিগত একমাস ধরে তদমেত্মর মাধ্যমে ঘটনার অনুপুঙ্খ বিবরণ তদমত্ম রিপোর্টে তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছেন।
তথ্যানুসন্ধানী তদমত্ম প্রতিবেদনে ৮টি মতামত ও ৮টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। নিমেণ তদমত্ম রিপোর্ট অবিকল তুলে ধরা হলো-
ঘটনার বিবরণ :
বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলায় বিগত ১৭/১১/২০১১ ইং, সকাল অনুমান ৮.০০ ঘটিকার সময় আলীকদম উপজেলা পরিষদ সড়কের ড্রেনে একটি মৃত নবজাতক দেখতে পায় সেখানে খেলারত ৪/৫ জন শিশু। যেখানে নবজাতকের লাশ পাওয়া যায় সেটির অবস্থান আলীকদম উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালামের বাড়ি ভিটা ঘেঁষে নির্মিত একটি সরকারী ড্রেন। এ খবরটি উপজেলা চেয়ারম্যান অবগত হলে সঙ্গে সঙ্গে তিনি প্রশাসনের লোকজন ও স্থানীয় সাংবাদিকদের খবর দেন। ঘটনাস্থলে পুলিশ, ইউ.পি চেয়ারম্যান, মেম্বার ও স্থানীয় জনগণ জড়ো হয়। ড্রেন থেকে নবজাতকের লাশটি পুলিশ উদ্ধার করে। পরে ইউ.পি চেয়ারম্যান মো. জামাল উদ্দিনের তত্ত্বাবধানে লাশটি আমতলী এলাকার একটি কবরস্থানে দাফন করা হয়। যা ইউ.পি চেয়ারম্যান মো. জামাল উদ্দিনের উদ্বৃতি দিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় ১৮/১১/২০১১ ইং তারিখে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর এন.জেড একতা মহিলা সমিতির নির্বাহী পরিচালক আনোয়ারা বেগম,  নারী পক্ষ দুর্বার নেটওয়ার্ক এর চট্টগ্রাম অঞ্চলের নেত্রী শেফালিকা ত্রিপুরা, কক্সবাজার জেলার নারী নেত্রী শাহেনা বেগম, শাহনাজ পারভীন, আলীকদম প্রেসক্লাবের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমদ, সাংবাদিক কামরম্নজ্জামান ঘটনাটি অধিকতর অনুসন্ধানের জন্য সরজমিন তদমত্ম শুরম্ন করেন।
ইত্যবসরে গত ২২/১১/২০১১ ইং তারিখে ‘‘রাজিয়া সোলতানা, স্বামী- মোঃ সাইনুজ্জামান, বর্তমান ঠিকানা- উপজেলা সদর, আলীকদম, বান্দরবান’’ নামের একজন মহিলাটি বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন, বান্দরবান জেলা শাখায় একটি আবেদন করে উক্ত নজাতকের ডিএনএ টেস্টের পূর্বে আলামত নষ্ট, নবজাতক হত্যাকা- ধামাচাপা ও ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে আইনী সহায়তা চেয়েছেন। অত:পর মানবাধিকার কমিশন যৌথভাবে উলেস্নখিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ঘটনাটির বিষয়ে তথ্যানুসন্ধান করে।
আবেদনকারীনির বক্তব্য (সংক্ষেপে):
‘‘আবেদনকারী রাজিয়া বেগম, স্বামী- সাইনুজ্জামান জানান, তিনি একজন দরিদ্র, অসহায়, নির্যাতিত ও নির্মম ষড়যন্ত্রের শিকার সরকারী কর্মচারীর স্ত্রী। বর্তমানে তার স্বামী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এর আলীকদম উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ে কর্মরত আছেন। স্বামীর সাথে তিনি আলীকদমে বসবাস করছেন। গত ১৭/১১/২০১১ ইং আলীকদম উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালামের উপজেলা সদরস্থ বাসার সামনের সড়কের ড্রেনে একটি নবজাতকের লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা চেয়ারম্যানকে জানান। চেয়ারম্যান থানায় খবর দিলে পুলিশ মৃত নবজাতকটি উদ্ধার করে। পরে উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাংবাদিকরা অনুসন্ধানে জানতে পারেন যে, আলীকদম উপজেলা প্রকৌশলী সজল কৃষ্ণ দেব, ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো কোম্পানীর আলীকদম শাখা ব্যবস্থাপক মোঃ ফজলে রাবিব এবং উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের অফিস সহকারী ত্রিদিব বাবু ১৬ নভেম্বর (বুধবার) দিবাগত রাত অনুমান তিনটার সময় খতিজা বেগম নামে একজন কাজের বুয়াকে আলীকদম সরকারী হাসপাতালের জরম্নরি বিভাগে প্রকৃত সত্য গোপন করে ভর্তি করান। ভর্তি রেজিস্ট্রারে মহিলাটির শ্বাসকষ্ট ও কোমর ব্যথার রোগী হিসেবে উলেস্নখ করা হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. নুর-ই-আলমের উদ্বৃতি দিয়ে স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইন দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে- নার্সদের মাধ্যমে পরীক্ষা করে আরএমও জানতে পারেন যে, গর্ভপাতের ফলে মহিলাটির অতিরিক্ত রক্তপাত হচ্ছে। বিষয়টি কাজের বুয়া (খতিজা বেগম), উপজেলা প্রকৌশলী সজল কৃষ্ণ দেব ও বিএটিবি’র ম্যানেজার ফজলে রাবিব কে আরএমও ডা. নুর-ই-আলম এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তারা সমত্মান প্রসবের বিষয়টি গোপন করে। পরে মহিলারটির প্রশ্রাব পরীক্ষার মাধ্যমে নার্স ও ডাক্তার নিশ্চিত হন যে, মহিলাটি গর্ভবতী ছিল এবং কিছুক্ষণ পূর্বেই তার সমত্মান প্রসব হয়েছিল। ঐদিন দুপুরে হাসপাতালে ভর্তি থাকাবস্থায় উক্ত মহিলাকে নবজাতকের জনক কে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে প্রথমে ২নং চৈÿ্যং ইউনিয়নের মহিলা সদস্যা ও তার আত্মীয় জনাবা ইয়াছমিন আক্তারকে জানায়, জনৈক টমটম গাড়ি চালক ‘নুরম্নল কবির, পিতা- আব্দুর রন’ এর সাথে অবৈধ মেলামেশার ফলে নবজাতকের জন্ম হয় এবং সেটি ড্রেনে ফেলে দেয়া হয়েছিল। বিষয়টি উপজেলা চেয়ারম্যানের মাধ্যমে পুলিশ জানতে পেরে জনৈক নুরম্নল কবিরকে আটক করে। যা উপজেলা চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা অবগত আছেন। কিন্তু বিকেলে মহিলাটিকে থানায় এনে পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে নুরম্নল কবিরের নাম বাদ দিয়ে ষড়যন্ত্রকারীদের শেখানো মতে নবজাতকের জনক হিসেবে আবেদনকারীনির স্বামী সাইনুজ্জামানের নাম বলে। ঘটনায় কোন যাছাই বাছাই না করে পুলিশ তার স্বামীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। ঘটনার আকস্মিকতায় তারা স্বামী স্ত্রী মানসিকভাবে বিপর্যস্থ ও হতবুদ্ধি হয়ে পড়েন। ঐ সময় তাদের মানসিক বিপর্যসত্মার সুযোগ নিয়া ষড়যন্ত্রকারীরা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের নিকট হতে দ্বিতীয় বিবাহের অনুমতিপত্রে হুমকী ও ভয়ভীতির মাধ্যমে আবেদনকারীনির স্বাক্ষর আদায় করে অন্যায়ভাবে নবজাতকের প্রসূতির সাথে কাজী ডেকে আবেদনকারীনির স্বামী সাইনুজ্জামানের সাথে বিয়ে পড়িয়ে দেয়া হয়। নবজাতকের প্রসূতি মহিলাটি আলীকদম উপজেলা প্রকৌশলী সজল কৃষ্ণ দেব ও বিএটিবি’র শাখা ব্যবস্থাপক মো. ফজলে রাবিব ব্যাচালর কোয়ার্টারে থাকেন এবং তাঁদের বাসায় মহিলাটি কাজের বুয়া হিসেবে কাজ করতেন। সেখানেই হয়ত মহিলাটি লালসার শিকার হতে পারেন মর্মে আবেদনে দাবী করা হয়। একটি মহল এই ঘটনাটিকে ধামাচাপা দিয়ে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে প্রকৃত রহস্যকে আড়াল করার জন্য আবেদনকারীনি হুমকী প্রদান ও তার স্বামীকে বিভিন্নভাবে চাকুরীচ্যুতির ভয়ভীতি দিয়ে ঘটনার বিষয়ে চুপ থাকার চাপ প্রয়োগ করছে।’’
নবজাতকের লাশ উদ্ধার, অতপর…
আলীকদম থানার পুলিশ ১৭/১১/২০১১ ইং, ড্রেন থেকে নবজাতকের মৃতদেহ উদ্ধার করে। লাশটি বেওয়ারিশ হিসিবে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জামাল উদ্দিনের কাছে হসত্মামত্মর করা হয়। ইউপি চেয়ারম্যান লাশটি আমতলী এলাকার একটি কবরস্থানে দাফনের ব্যবস্থা করেন। ওইদিন দুপুর একটার সময় নবজাতকের মাতৃ পরিচয় পাওয়ার পর রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য লাশটি পুনরায় কবর থেকে তোলা হয়।
এ বিষয়ে আলীকদম থানায় জিডি নং- ৪৮৫ করা হয়। থানার স্মারক নং- ১৮৪২, তারিখ- ১৭/১১/২০১১ইং এর মূলে বান্দরবান সিভিল সার্জনকে বরাবর উক্ত নবাজতকের ডিএনএ টেস্ট ও ময়না তদমত্ম করার জন্য আলীকদম থানার পক্ষ থেকে পত্র প্রেরণ করা হয়।
এদিকে, নবজাতকের প্রসূতির সাথে বিয়ে পড়িয়ে দেয়া সরকারী কর্মচারী সাইনুজ্জামান ওই নবজাতকের জনক তিনি নন দাবী করে নবজাতকের প্রকৃত পিতৃত্ব নির্ণয়ে ডিএনএ টেস্টের জন্য গত ২০/১১/২০১১ ইং তারিখ ওসি আলীকদম থানা বরাবর আবেদন করেন।  অনুসন্ধান কালে জানা গেছে, বান্দরবান সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের স্মারক নং- সিএস/বি-বান/প্রশা-১/২০১১/২৩৮৩ তারিখ- ২০/১১/২০১১ ইং মূলে উক্ত নবজাতকের ডিএনএ টেস্ট ও ময়না তদমত্ম করার জন্য অধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ বরাবর পত্র ইস্যু করা হয়।
এদিকে, ওসি আলীকদম থানা ২১/১১/২০১১ ইং, পত্র নং- ১৮৬৫ মূলে সিভিল সার্জনকে পুনরায় পত্র দিয়ে জানান যে, উক্ত নবজাতকের ডিএনএ টেস্ট করতে হবে না।
সিভিল সার্জন অফিস দ্বিতীয় দফা ওসি, আলীকদম থানা থেকে পত্র পাওয়ার পর সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের স্মারক নং- সিএস/বি-বান/প্রশা-১/২০১১/২৩৮৩ তারিখ- ২০/১১/২০১১ ইং মূলে জারীকৃত আদেশ প্রত্যাহার করার জন্য তাঁর কার্যালয়ের স্মারক নং- সিএস/বি-বান/প্রশা-১/২০১১/২৪৪১ তারিখ- ২২/১১/২০১১ ইং মূলে ‘‘বাতিল আদেশ’’ জারী করে। পরে পুলিশ গত ২৩/১১/২০১১ ইং তারিখ কং নং- ২০১৭ মো. মকবুল হোসেন বান্দরবান সদর হাসপাতাল থেকে নবজাতকের লাশটি গ্রহণ করে। উক্ত আদেশে নবজাতকের ডিএনএ টেস্ট না করে শুধুমাত্র ময়না তদমত্ম করার জন্য বান্দরবান সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. উইলিয়াম লুসাইকে নিযুক্ত করা হয়।
এদিকে, ডিএনএ টেস্টের জন্য আলীকদম থানার পক্ষ থেকে সাইনুজ্জামানকে দু’দফা পত্র দেয়া হয়েছে। কিন্তু সাইনুজ্জামানের মা এর দুরারোগ্য ক্যান্সার চিকিৎসায় ব্যবস্থা ও মায়ের মৃত্যুজনিত কারণে কর্মস্থলের বাহিরে থাকায় এখনো ডিএনএ টেস্ট করা সম্ভব হয়নি।
সাইনুজ্জামানের বক্তব্য
আলীকদম এলজিইডির কার্য্য সহকারীর সাথে আলাপকালে তিনি দাবী করেন, এই ঘটনার পর তাকে  ১৭/১১/২০১১ইং, সন্ধ্যায় আলীকদম থানার পুলিশ ধরে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে ঘটনায় কোনভাবেই সম্পৃক্ত নন মর্মে দাবী করেন। কিন্তু আলীকদম উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. রিটন ও ১নং আলীকদম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জামাল উদ্দিন উক্ত ঘটনাটিকে ধামাচাপা দিয়ে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টার অংশ হিসেবে তাকে চাকুরীচ্যুতির ভয়ভীতি, নারী নির্যাতন মামলার হুমকী দিতে থাকে। এক পর্যায়ে ওইদিন রাত সাড়ে ১০.৩০ ঘটিকার সময় তার স্ত্রী রাজিয়া সুলতানাকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে ভয়ভীতি দিয়ে দ্বিতীয় বিবাহের অনুমতির নামে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর আদায় করে নেন। পরে স্থানীয় কাজী মৌ. কুতুব উদ্দিনকে ডেকে নিয়ে তার সাথে নবজাতকের প্রসূতি খতিজা বেগমের মধ্যে তার ইচ্ছার বিরম্নদ্ধে বিয়ে পড়িয়ে দেয়া হয়। যার কাবিন নামা নং- ৮৯/১১। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদমত্ম, নবজাতক হত্যার বিচার ও ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে প্রকৃত পিতৃত্ব উদ্ঘাটনের দাবী জানান। খতিজা বেগম একজন বহুগামিণী মহিলা। সে অন্য কারো সাথে অবৈধ সম্পর্কের মাধ্যমে গর্ভে সমত্মান ধরণ করছেন বলে সাইনুজ্জামান দাবী করেন। তিনি আরো বলেন, উক্ত মহিলাকে তিনি মা বলে ডাকতেন। তার সাথে কোন অবৈধ সম্পর্ক তার ছিল না। যাদের বাসায় খতিজা বেগম কাজের ভূয়া হিসেবে কাজ করতেন তাদের কারো লালসার শিকার হয়েছেন মর্মে তার দাবী। মাঝে মধ্যে উপজেলা প্রকৌশলী সজল কৃষ্ণ দেব এর নির্দেশে খতিজা বেগমকে নিয়ে তিনি হাসপাতালে যেতেন। এ ঘটনায় তিনি নির্দোষ দাবী করেন।
নবজাতকের মা খতিজা বেগমের বক্তব্য
তিনি একজন বিধবা মহিলা। তার স্বামী মিলন মিয়া বিগত প্রায় ৫ বছর পূর্বে মারা যান। তার সংসারে ৫ জন মেয়ে রয়েছে। উপজেলা পরিষদের সরকারী জায়গায় ইউএনও’র বাসভবনের পাশে একটি ঘরে বসবাস করছেন। তিনি উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন কর্মকর্তার বাসায় ৫/৬ বছর ধরে কাজের বুয়া হিসেবে কাজ করতেন। ঘটনার পূর্বে তিনি উপজেলা প্রকৌশলী সজল কৃষ্ণ দেব ও ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো কোম্পানীর আলীকদম শাখার ম্যানেজার মো. ফজলের রাবিবর বাসারও কাজের বুয়া ছিলেন। আলীকদম এলজিইডির কার্য সহকারী মো. সাইনুজ্জামান (শাহিন) এর সাথে তার পরিচয় ও অবৈধ সম্পর্কের ফলে নবজাতকটি তার পেটে আসে। এ বিষয়টি সাইনুজ্জামানকে জানালে সাইনুজ্জামান তাকে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ খাওয়ান। নবজাতকের পিতা সাইনুজ্জামান বলে তিনি দাবী করেন। প্রথমে স্থানীয় টমটম চালক নুরম্নল কবির এর নাম কেন বলেছিলেন জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, সাইনুজ্জামান তাকে ওই নাম বলার জন্য শিখিয়ে দিয়েছিল।
ঘটনার দিন (১৭/১১/২০১১ ইং) রাত অনুমান আড়াইটার সময় তার কোমর ব্যাথা ও শ্বাসকষ্ট শুরম্ন হলে ইঞ্জিনিয়ার সজল কৃষ্ণ দেব কে মোবাইলে তার অসুস্থতার বিষয়টি প্রথমে জানান। পরে সজল বাবু, মো. রাবি,  ত্রিদিব বাবু ও তার মেয়ে জ্যোৎসণা তাকে ধরাধরি করে হাসপাতালে নেয়ার পথে উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসার সামনে সরকারী রাসত্মায় তার সমত্মান প্রসব হয়ে যায়। এরপর নবজাতকটি পাশের ড্রেনে পেলে দেয়া হয়। সেখান থেকে তাকে আলীকদম সরকারী হাসপাতালে নিয়ে কোমর ব্যাথা ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগ দেখিয়ে ভর্তি করা হয়। ভর্তির সময় উপস্থিত ছিলেন সজল বাবু, রাবিব, ত্রিদিব বাবু ও তার মেয়ে জ্যোৎসণা। নবজাতকটি বর্তমানে কোথায় কোন অবস্থায় আছে এই বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না মর্মে জানান’’। ঘটনার দিন রাতে উপস্থিত থাকা খতিজা বেগমের মেয়ে জ্যোসণা বেগম তার মায়ের দেয়া বক্তব্যের সমর্থন জানায়।
উক্ত ঘটনার তথ্যানুসন্ধানকারীরা উলেস্নখিত বিষয়ে পৃথক পৃথকবাবে দীর্ঘদিন উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসাদুজ্জামান, আলীকদম থানার ওসি মোহাম্মদ হোছাইন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের আরএমও ডা. নুর-ই-আলম, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা খোন্দকার মাক্কামাম মাহমুদা, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শিরিনা আক্তার রোকসানা এবং ঘটনায় সম্পৃক্ত উপজেলা প্রকৌশলী সজল কৃষ্ণ দেব, ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো কোম্পানীর আলীকদম ম্যানেজার মো. ফজলে রাবিব, আলীকদম উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহকারী ত্রিদিব সরকারসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে উলেস্নখিত ঘটনার বিষয়ে মতবিনিময় করেন। এছাড়াও প্রকাশ্যে ও গোপনে অনুসন্ধানকারী দল ঘটনার বিষয়ে এলাকার পরিবেশ পরিস্থিতি, ঘটনার কাহিনী, রহস্য, সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদ ও স্থানীয় ব্যক্তিদের বক্তব্য নেন। এ ঘটনার বিষয়ে দৈনিক সমকাল, দৈনিক মানবজমিন, দৈনিক পূর্বকোণ, দৈনিক নতুন বাংলাদেশ, দৈনিক সাঙ্গু-সহ বেশ কয়েকটি অনলাইন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়।
ঘটনা পরম্পরায় তথ্যানুসন্ধানকারীদের কাছে প্রতীয়মান হয় যে, ১) নবজাতকের পিতৃত্বের বিষয় এখনো অনুদ্ঘাটিত। ২) নবজাতকের মৃত্যুটি নিয়েও নানা রহস্য। নবজাতকের মায়ের ভূমিকার কারণে নবজাতকের মৃত্যু রহস্যটি ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে। যা উদ্ঘাটন করা জরম্নরী। ৩) ঘটনার দিন রাতে তড়িগড়ি করে বিয়ের আয়োজন এবং সাইনুজ্জামানের সাথে নবজাতকের প্রসূতি খতিজা বেগমের মধ্যে বিয়ে পড়ানোর ঘটনাটি ছিল নাটকীয় ও রহস্যজনক। যা আইনসম্মত ও যুক্তিসংগত নয়। ৪) নবজাতকের মা খতিজা বেগম ও অন্যরা ঘটনার দিন রাতে হাসপাতাল ভর্তির সময় তথ্যগোপন করে ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালান। বর্তমানেও নবজাতকের মা সত্য গোপন করে নানা অসংগতিপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে প্রকৃত ঘটনা ও অপরাধীদের রক্ষার চেষ্টা করছেন।  ৫) নবজাতকের ময়না তদমত্ম রিপোর্ট প্রকাশে বিলম্ব হওয়ায় নবজাতকের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ অনুদ্ঘাটিত রয়ে যাচ্ছে। ৬) সজল কৃষ্ণ দেব, মো. ফজলে রাবিব, ত্রিদিব সরকার কর্তৃক খতিজা বেগমকে হাসপাতাল ভর্তিতে সহায়তা করা একটি মানবিক মুল্যয়ন বটে। কিন্তু একজন প্রসূতিকে হাসপাতাল ভর্তির সময় তাদের দেয়া তথ্য মিথ্যা ছিল। যা হাসপাতালের আরএমও’র বক্তব্যে প্রতীয়মান হয়। তাদের ভূমিকা ‘মানবিক’ নাকি ‘পাশবিক’ তা পুনর্মূল্যয়নের দাবী রাখে। ৭) বিয়ে পড়ানোর কাজে জড়িত থাকা দু’জন জনপ্রতিনিধিসহ সংশিস্নষ্টদের ভূমিকা সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে ও ৮) বর্তমানে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে একটি প্রভাবশালী মহল নানাভাবে তৎপরতা চালাচ্ছে।
মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশ :
১) অতিসত্ত্বর নবজাতকের ময়না তদমেত্মর রিপোর্ট প্রকাশ করা হোক। ২) ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে নবজাতকের আসল পিতৃত্ব নির্ণয় করা হোক। ৩) সমত্মান প্রসবের পরপরই নবজাতককে ড্রেনে ফেলে দেয়ায় সহায়তাকারীরা পাশবিক কাজে জড়িত মর্মে অনুমেয় হয়। পাশাপাশি হাসপাতালে প্রসূতিকে ভর্তির সময় তথ্য গোপনকারী করা হয়। সুতরাং ওইদিন রাতে যারা প্রসূতির সাথে ছিলেন তাদের নাম প্রকাশ পূর্বক বিচারের সম্মুখীন করা হোক। ৪) বিচার বিভাগীয় তদমেত্মর মাধ্যমে ঘটনার আসল তথ্য উদ্ঘাটন ও প্রকাশ করা হোক। ৫) ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে যারা বিয়ের নাটক সাজিয়েছে তাদের চি‎‎হ্নত করে বিচারের মুখোমুখি করা হোক। ৬) নবজাতকের প্রসূতির অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে যারা নির্যাতন করে তার সম্ভ্রম লুটেছেন তাদেরকে চি‎‎হ্নত করে বিচারের মুখোমুখি করা হোক। ৭) নবজাতকের প্রসূতি খতিজা বেগমকে শারিরীক চিকিৎসা ও সরকারী পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হোক ও ৮) ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন উপজেলা প্রশাসন ও থানাকে আরো গতিশীল, নিরপেক্ষ ও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।
Ruby