বাঘা নিউজ ডটকম, আককাস আলী, নওগাঁ ১২ ডিসেম্বর : নওগাঁয় অধিক মুনাফার আশায় হিমাগারে আলু রাখা কৃষক ও ব্যবসায়ীদের এবার মাথায় হাত পড়েছে। হিমাগারে আলু রেখে বিপুল অংকের লোকসান গুনছে তারা। অস্বাভাবিক হারে আলুর দাম কমে যাওয়ায় অনেকেই হিমাগারে রাখা আলু তুলতে যাচ্ছেনা। এতে শত শত বস্তা আলু হিমাগারে পড়ে রয়েছে। আর কদিন পরেই নতুন আলু উঠবে। এখনই হিমাগার খালি করতে না পারলে নতুন আলু রাখা নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়বে আলুচাষিরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১ লক্ষ ২০ হাজার বস্তা ধারণ ক্ষমতা সম্পূন্ন নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার একমাত্র হিমাগার নওহাটা মোড় এলাকার ভীমপুরে অবস্থিত ফয়েজ উদ্দীন কোল্ডষ্টোরে এবার কৃষক ও ব্যবসায়ীরা ৯৫ হাজার বস্তা আলু রাখেন। প্রতি বস্তা আলু ২শ ৫০ টাকা হারে ভাড়া নিয়ে এ হিমাগার কর্তৃপক্ষ আলু জমা রাখে। গত ২০ অক্টোবর থেকে আলু জমা রাখার মেয়াদ শেষ হলেও গতকাল শনিবার পর্যন্ত অনেক কৃষক ও ব্যবসায়ী তাদের রাখা আলু তুলতেই আসেনি। ২০ অক্টোবরের পর ভাড়ার মেয়াদ শেষ হওয়ায় হিমাগার কর্তৃপক্ষ হিমাগারে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। এতে শত শত বস্তা আলুতে গাছ গজিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শনিবার ফয়েজ উদ্দীন কোল্ডষ্টোরে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় দু’ একজন কৃষক ও ব্যাবসায়ী তাদের গাছ ওঠা আলু বের করে স্থানীয় মহিলা শ্রমিকদের দিয়ে বাছাই করছে। কৃষক ও ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন হিমাগারের গ্যাস বন্ধ করে দেওয়ায় তাদের অনেক আলু নষ্ট হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে ফয়েজ উদ্দীন কোল্ডষ্টোরের কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন ২০ অক্টোবর পর্যন্ত আলু রাখার মেয়াদ ছিল। মেয়াদ পার হওয়ার পরও কৃষক ও ব্যবসায়ীরা আলু না তোলায় গ্যাস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। হিমাগারে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের জমা রাখা আলু তুলতে না আসার কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, বাজারে আলুর দাম অস্বাভাবিক ভাবে কমে যাওয়ায় তারা আলু তুলতে যাচ্ছে না। মান্দা উপজেলার ফারাদপুর গ্রামের কৃষক আনন্দ কুমার জানান, তিনি এবার ২০৭ বস্তা আলু হিমাগারে রেখেছিলেন। এখন এই আলু তুলতে গেলে বস্তা প্রতি হিমাগার ভাড়া দিতে হবে ২শ ৫০ টাকা। এ আলু হিমাগার থেকে বাজারে নিয়ে যেতে হিমাগার ভাড়া সহ বস্তা প্রতি খরচ পড়বে ৩শ টাকা। বাজারে প্রতি বস্তা আলু ২শ ৮০ টাকার বেশি দরে বিক্রি করা সম্ভব নয়। বর্তমান বাজার দর হিসাবে হিমাগারে রাখা আলু তুলে বিক্রি করতে গেলে আলুর দাম বাদেই বস্তা প্রতি আরো ২০ টাকা লোকশান গুনতে হবে। এ কারনে তার হিমাগার থেকে আলু তোলার আগ্রহ নেই। নওগাঁর ঘোষ এজেন্সির দ্বিজেন্দ্রনাথ ঘোষ জানান, গত আলুর মৌসুমে তিনি ১ হাজার টাকা বস্তা দরে আলু কিনে প্রতি বস্তা ২শ ৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে ৬ হাজার বস্তা আলু হিমাগারে রেখেছিল্নে। হিমাগার ভাড়া সহ তার ১ বস্তা আলুর খরচ পড়েছে ১২শ ৫০ টাকা। এখন সেই আলু বাজারে বিক্রি করতে গেলে ক্রেতারা ২শ ৮০ থেকে ৩শ টাকা বস্তা দাম বলছে। এতে প্রতি বস্তা আলুতে তার লোকশান গুনতে হবে প্রায় ১হাজার টাকা। শুধু আনন্দ ও দ্বিজেন্দ্রনাথ ঘোষই নয় অনেক কৃষক ও ব্যবসায়ীরই এখন একই অবস্থা। আলুচাষি ও সংরক্ষণকারী ব্যবসায়ীরা জানান, সরকারীভাবে আলু রপ্তানির উদ্যোগ নিলে আলু নিয়ে তাদেরকে এভাবে বিপাকে পরতে হতনা।

