শনিবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০১২

নাটোরে একই রাতে দুইটি লাশ উদ্ধার॥ এলাকায় আতঙ্ক

বাঘা নিউজ ডটকম, আকতার হোসেন অপূবর্, নাটোর প্রতিনিধি :: নাটোরের সিংড়া উপজেলায় একই রাতে দুইটি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। উদ্ধারকৃত লাশ দুইটির মধ্যে একটি অপহরণের পর খুন ও অপরটি গুপ্ত হত্যা বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্ট পরিবার। এনিয়ে এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এব্যাপারে সিংড়া থানায় একটি মামলা হয়েছে এবং অপর মামলা প্রক্রিয়াধীন।
স্থানীয় ও সিংড়া পুলিশ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার লালোড় ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের আব্দুল করিমের মেয়ে  বিলহালতি ডিগ্রী কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী রুমা খাতুনের বড় বোন রাজিয়ার বিয়ে হয় একই উপজেলার  পাট শাওইল গ্রামের রেজাউল করিমের ছেলে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউটের ছাত্র নয়নের জেঠাতো ভাইয়ের সাথে। সম্পর্কে রুমা নয়নের বিয়ান হওয়ায় কথোকথনের এক পর্যায়ে সে রুমাকে বিভিন্নভাবে প্রেমের প্রস্তাব দিত। কিন্তু প্রেমে রাজি না হওয়ায় প্রায়ই নয়ন রুমাদের বাড়িতে যেত এবং রাস্তাঘাটে রুমাকে উত্যক্ত করতো। রুমা নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি  গণশিক্ষা কার্য্যক্রমে শিক্ষিকা হিসেবে ছোট ছোট শিশুদের পড়া শেখাতো। গত ১২ তারিখে রুমা তার অফিস হাতিয়ান্দহে মিটিং আছে জানিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। কিন্তু অনেক রাত হয়ে গেলেও সে বাড়ি ফিরে আসেনি। শুক্রবার রাত সাড়ে আটটার দিকে রুমার বাবা-মা  খবর পায় নয়নের ঘরে রুমা গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। খবর পেয়ে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠায়। বিষয়টি জানতে পেরে রুমার বাবা আব্দুল করিম বাদী হয়ে সিংড়া থানায় নয়ন, নয়নের পিতা রেজাউল করিম, করিমের ভাই হজরত আলী ও হযরত আলীর স্ত্রী লাভলী বেগমকে আসামী করে অপহরণের পর খুনের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নয়নের এক প্রতিবেশী জানান, নয়নের সাথে রুমার দীর্ঘদিনের প্রেম ছিল। তাদের অবৈধ মেলামেশায় রুমা অন্ত:স্বত্বা হয়ে যায়। পরে নয়নকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে নয়ন তাতে অস্বীকৃতি জানায়। এরই এক পর্যায়ে রুমা শুক্রবার নয়নের বাড়িতে গেলে নয়নের পরিবারের লোকজন তাকে মারপিট করে তাড়িয়ে দিতে চেষ্টা করে। তাদের মারপিটের এক পর্যায়ে রুমা নিহত হয়। পরে নয়নের পরিবারের লোকজন তাকে গলায় ফাঁশ দিয়ে রাখতে পারে।
আবার অপর এক প্রতিবেশী জানায়, মারপিটের এক পর্যায়ে রুমা নয়নের ঘরে দরজা লাগিয়ে আত্মহত্যা করে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মনজুর আলম জানান, নয়নের বাড়ির পূর্ব দুয়ার কক্ষে সিলিং ফ্যানে ওড়না দিয়ে ফাঁস দেওয়া অবস্থায় রুমার লাশ উদ্ধার করা হয়। তবে লাশ উদ্ধারের সময় নয়ন বা তার বাড়ির কোন সদস্যকে পায়নি পুলিশ।
অপরদিকে উপজেলার তাজপুর ইউনিয়নের মৃত আকবর আলীর ছেলে আবু বক্কর(৫৫) শুক্রবার রাত আটটার দিকে স্থানীয় বাজারের উদ্যেশ্যে বাড়ি ৃেথকে রওনা হয়। সম্ভাব্য সময় পরেও বাড়িতে ফিরে না আসায় তার পরিবারের লোকজন তাকে খুঁজতে বাজারের দিকে যেতে থাকে। পথে বাড়ি থেকে মাত্র প্রায় ১০০ গজ দুরে তার জখম লাশ পরে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে তার লাশ উদ্ধার করে নাটোর আধুনিস সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আবু বকরের বাম হাতে এবং ডান চোখের নীচের পাতায় জখম দেখা গেছে।
আবু বকরের পরিবারের সদস্যরা জানায়, আবু বকর ইউনিয়ন বিএনপির কর্মী ছিল। এছাড়া স্থানীয় একটি হত্যা মামলার সে ছিল স্বাক্ষী। দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়ত সংঘটিত গুপ্ত হত্যার মত তাকেও স্বাক্ষী থেকে দূরে সরিয়ে দিতে খুন করা হয়েছে। এব্যাপারে রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত থানায় মামলা দাযেরের প্রস্তুতি চলছিল।
এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে সিংড়া থানার ওসি ফায়েজুর রহমান উভয় লাশ উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, উভয় বিষয়ে তদন্ত চলছে। পুলিশ অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছেন।
স্থানীয় সচেতন লোকজন জানান, ২০১২ সালের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত সিংড়ায় নারী, শিশুসহ মোট ৮টি হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এনিয়ে স্থানীয় লোকজন প্রতিনিয়তই শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন। প্রায় প্রতিনিয়তই এই হত্যার ঘটনাগুলো সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের অনতিবিলম্বে গ্রেফতার ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অধিক নজরদারীা মাধ্যমে উপজেলার প্রতিটি নাগরিকের নিরাপদ বসবাস নিশ্চিতের দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
Ruby