শনিবার, ৭ জানুয়ারি, ২০১২

ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার পর্যটকদের আগমনে সরগরম হয়ে উঠেছে

বাঘা নিউজ ডটকম, মোঃ আককাস আলী, নওগাঁ প্রতিনিধি :: শীত মৌসুমে নওগাঁর ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে পর্যটকদের ঢল নেমেছে। প্রতিদিন বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের পিকনিক পার্টিসহ ভ্রমণ পিপাসু দেশী-বিদেশী মানুষের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠেছে বৌদ্ধবিহার এলাকা। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, এ ঐতিহাসিক স্থানকে ঘিরে এখনো আধুনিক পর্যটন সুবিধা গড়ে ওঠেনি। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও ভালো মানের হোটেল-মোটেলের অভাবে শুধু দেশের নয়, বিদেশী পর্যটকরাও এখানে বেড়াতে এসে নানা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হলে দেশের এই অন্যতম বৌদ্ধবিহারকে ঘিরে উন্মোচিত হতে পারে পর্যটন শিল্পের এক নতুন দিগন্ত।
নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিমি উত্তরে অবস্থিত ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার। এর আদি নাম সোমপুর বিহার। ইতিহাসবিদদের মতে, পাল বংশের দ্বিতীয় রাজা ধর্মপাল অস্টম শতকের শেষের দিকে এ বিহার নির্মাণ করেছিলেন। বিহারের আয়তন উত্তর-দক্ষিণে ৯২২ ফুট ও পূর্ব-পশ্চিমে ৯১৯ ফুট। সারা পৃথিবীতে এ পর্যন্ত জ্যামিতিক নকশার পুরাকীর্তির যে সন্ধান পাওয়া গেছে বিশেষজ্ঞদের মতে পাহাড়পুর তার মধ্যে সেরা। কারো কারো মতে এখানে একটি জৈন মন্দির ছিল। আর সেই মন্দিরের উপরেই গড়ে তোলা হয়েছে এ বিহার। এ বিহারে মোট ১৭৭টি
ঘর রয়েছে। ঘরগুলোতে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বাস করতেন। বিহারের ঠিক মাঝখানে রয়েছে একটি মন্দির। মন্দিরটি দৈর্ঘ্যে ৪০০ ফুট, প্রস্থে প্রায় ৩৫০ ফুট ও উচ্চতায় ৭০ ফুট। কালের বিবর্তনে মন্দিরের সবচেয়ে উপরের অংশ ধসে গেছে। বাইরের দেয়ালে বুদ্ধমূর্তি, হিন্দুদের দেবী মূর্তি ও প্রচুর পোড়ামাটির ফলকচিত্র রয়েছে। এসব চিত্রে সাধারণ মানুষের বৈচিত্র্যময় জীবনগাথা চিত্রিত হয়েছে। বিহারের মূল বেষ্টনীর দেয়াল প্রায় ২০ ফুট চওড়া। বেষ্টনীর মধ্যে রয়েছে আরেকটি মন্দির। এটি মূল মন্দিরের ধংসস্তূপ বলে ধারণা করা হয়। এ ছাড়াও এ বিহারের চারপাশে আরো অনেক স্থাপত্যের নিদর্শন পরিলক্ষিত হয়। বিহার থেকে ১৬০ ফুট দূরে রয়েছে ইট ও পাথর দিয়ে বাঁধানো একটি ঘাট। এ ঘাটের পাশ দিয়ে এক সময় একটি নদী ছিল। এ ঘাট নিয়ে এলাকায় অনেক জনশ্রুতি রয়েছে। এ ঘাটে মইদল রাজার কন্যা সন্ধ্যাবতী স্নান করতো বলে এ ঘাটের নাম ছিল সন্ধ্যাবতীর ঘাট। একদিন নদীর স্রোতে ভেসে আসা জবা ফুলের ঘ্রাণ নেয়ার পর সন্ধ্যাবতী গর্ভবতী হন এবং পরবর্তীতে তিনি একটি পুত্র সন্তান প্রসব করেন।
নরওয়ে সরকারের আর্থিক সহায়তায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতœতত্ত্ব বিভাগের তত্ত্ব¡াবধানে ১৯৯৩ সালে এখানে একটি জাদুঘর নির্মাণ করা হয়। এ জাদুঘরে খলিফা হারুনুর রশিদের শাসনামলের রুপার মুদ্রাসহ বিভিন্ন সময়ের প্রাচীন মুদ্রা, কয়েক হাজার পোড়ামাটির ফলকচিত্র, পাথরের মূর্তি, তাম্রলিপি, শিলালিপি ইত্যাদি স্থান পেয়েছে। এ ছাড়া বিহারের চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও পর্যটকদের সহজেই আকৃষ্ট করে। ইতিহাস-ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ এ পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার দেখতে আসা দেশী-বিদেশী পর্যটকদের জন্য এখানে থাকার কোনো হোটেল-মোটেল নেই। অপর দিকে জেলা সদর থেকে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে যাওয়ার রাস্তাটিরও করুণ অবস্থা।
এ কারণে এখানে আসা পর্যটকদের প্রতিদিন চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অনেকে জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও হোটেল-মোটেল স্থাপন করে আধুনিক সেবা নিশ্চিত করা গেলে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আগমন আরো অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। আর এতে আরো সরগরম হয়ে উঠবে ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার।
Ruby