বুধবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০১২

নবীগঞ্জের কুড়ো টিলার রহস্যময় কালোপাথর যেন রূপ কথার গল্প…!

বাঘা নিউজ ডটকম, এম.এ.আহমদ আজাদ : হবিগঞ্জে জেলার সর্বোচ্চ পাহাড় বলে খ্যাত নবীগঞ্জের দিনারপুরে অবস্থিত। পাহাড়ি অঞ্চল দেবপাড়ার কুড়ো টিলার শত বছরের পুরোনো রহস্যে ঘেরা কালো পাথর নিয়ে এখনো সাধারন মানুষের মধ্যে নানা কৌতুহল বিরাজ করছে। দিন দিন ঐ কালো পাথর বৃদ্বি পেয়ে বিশাল আকার ধারন করেছে। ঐ পাথরকে সামনে রেখে ভক্ত অনুরাগীরা নিজেদের মনোবাসনা পুরনরে জন্য শিরনী বিতরন ও দোয়া দুরুদ করেন। প্রতি দিন ঐ পাথরকে দেখতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এখনো শতশত লোক আসেন। এলাকাবাসীর কাছ থেকে শুনেন পাথরের রূপকথার কাহিনী। আসলে সত্য না কুসংস্কার তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে এলাকায়। নবীগঞ্জ উপজেলার দেবপাড়া ইউনিয়নের কবুলেস্বর গ্রামের পার্শ্বে হাজারো বছরের পূরোনো জঙ্গলবাড়ি অন্তত ১হাজার ফুট উচু পাহাড় কুড়ো টিলা। নির্জন ঐ কুড়ো টিলাটি এলাকা বাসীর কাছে কালের স্বাক্ষী হয়ে আছে এখনো। পাহাড়ের চুড়ায় রয়েছে শতবছরের পূরোনো একটি বট গাছ। বট গাছের পাশেই একটি ছোট কদম গাছের নিচে রয়েছে শত বছরের পূরোনো কালো পাথর। পাথরটি দিন দিন বৃদ্বি পেয়ে এখন প্রায় ৫০ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩০ফুট প্রস্থ্য হয়ে এলাকাবাসীকে আশ্চার্য্য করেছে। বৃদ্বি পেয়েছে ভক্ত অনুরাগীর সংখ্যা। প্রতিদিন মানুষের ভীড় বাড়ছে পাথরটিকে ঘিরে। কি এমন রহস্য,কৌতুহল মানুষের মনে।
পাথরকে নিয়ে যে গল্পঃ
এলাকার এক প্রবীন ব্যক্তি মতচ্ছির আলী বলেন কুড়ো টিলার পাথরটি আল্লাহর প্রদত্ত্ব দান। তিনি তার দাদার কাছ থেকে শুনেছেন ঐ পাথরের রূপ কথার গল্প। ঐ এলাকায় অবস্থিত পাহাড়ে ঘেরা টিলার পার্শ্ববর্তী রয়েছে ইমামগঞ্জ বাজার । ঐ বাজারে পার্শ্ববর্তী রইছ উদ্দিনের টিলার বসবাসকারী মাছ ব্যবসায়ী হেতিম উল্লাহ প্রতিদিন দেখতেন এক ভিক্ষুক বাজার থেকে বিভিন্ন জিনিসপত্র কুড়িয়ে সন্ধার পরে নির্জন জঙ্গল সুউচ্চ কুড়োটিলায় উঠতেন। ঐ সময়ে কুড়ো ঠিলায় বসবাস করতো ভয়ঙ্খর জীব জন্তু ও বিষাক্ত সাপ। কিন্তু ঐ ভিক্ষুক কিভাবে প্রতিদিন ঐ গহীন জঙ্গল কুড়ো টিলায় গিয়ে কি করেন এ প্রশ্ন জাগে ব্যবসায়ী হেতিম উল্লাহর মনে। তিনি একদিন ঐ ভিক্ষুককে অনুসরন করতে শুরু করেন। ভিক্ষুক ঐদিন বিকেলে বাজার থেকে বিভিন্ জিনিস পত্র কুড়িয়ে নিয়ে সন্ধার পর ঐ গহীন জঙ্গল কুড়ো টিলায় যেতে থাকলে ব্যবসায়ী হেতিম উল্লাহ ও পিছু নেয়। তিনি দেখেন ভিক্ষুক ধিরে ধিরে কুড়ো টিলার জঙ্গলে প্রবেশ করছেন। এবং টিলার উপরে উঠে একটি বট গাছের নিচে ছোট কদম গাছের কাছেই একটি কালো পাথর সরিয়ে ঐ ভিক্ষুক একটি সুরঙ্গ দিয়ে প্রবেশ করেন।। ব্যবসায়ী হেতিম উল্লাহ ও পাথর সরিয়ে ভিক্ষুকের পিছু পিছু গুহার ভেতরে প্রবেশ করেন। কিছুক্ষন হাটার পরে দেখন ভিক্ষুক স্বর্ণের তৈরী অত্যান্ত সুন্দর একটি বাড়িতে প্রবেশ করছেন। এক পর্যায়ে ভিক্ষুক ঘরের ভিতর প্রবেশ করলে হেতিম উল্লা ঘরের একটি কোনে লুকিয়ে থাকেন । পরবর্তীতে দেখেন বাজার থেকে কুড়িয়ে আনা মাছ সহ অন্যান্য তরি-তরকারি অত্যান্ত সুস্বাদু করে রান্না করা হয় । গভীর রাতে আরো একুশ জন সাদা পোশাক ও পাগড়ী পরা দরবেশ ঘরে প্রবেশ করেন । এরপর সবার সামনে স্বর্ণের তৈরী প্লেইট দেওয়া হয় । সবাই ঘরের মেঝেতে বসে খাবার প্লেইট সামনে নিলে একটি প্লেইট অতিরিক্ত হয় । দৃশ্য গূলো হেতিম উল্লা লুকিয়ে দেখছিলেন । তখন দরবেশরা খোজাখুজি শুরু করেন । একপর্যায়ে তারা ঘরে লুকিয়ে থাকা খুঁজে হেতিম উল্লাহকে বের করেন । পরে তারা হেতিম উল্লাহকে সঙ্গে নিয়ে রাতের খাবার শেষ করেন। এরপর রাতব্যাপী মিলাদ মাহফিল ও জিকির করে ফজরের নামাজ আদায় করে হেতিম উল্লাহকে কিছু নির্দেশনা দিয়ে দেন। এবং এ ব্যাপারে কাউকে কিছু বলতে নিষেধ করে দেন। দরবেশদের কথামতো তিনি চলে আসেন। পরদির হেতিম উল্লাহর স্ত্রী ফরিজান বিবি রাতে কোথায় ছিলেন জানতে চাইলে জোড়াজুৃড়ির এক পর্যায়ে পুরো ঘটনাটি স্ত্রীর কাছে খুলে বলেন। পরক্ষনেই হেতিম উল্লাহর মূখ থেকে রক্ত বের হয়ে সাথে সাথে মারা যান। এরপর এলাকাবাসী ঐ পাথরের সন্ধানে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পেলেও সুরুঙ্গের মূখ থেকে পাথরটি আর সরানো সম্বব হয়নি। গায়েব হয়ে যান ঐ ভিক্ষুক চদ্ধবেশী দরবেশ। এর পর থেকে ছোট কালো পাথরটি  দিন দিন বৃদ্বি পেতে থাকে। এবং মানুষের রহস্য আরো ঘনিভুত হয়। কালের পরিক্রমায় পাহাড়ের জঙ্গল বিলীন হলেও কালো রহস্যময় পাথর ও বট গাছটি স্বাক্ষী হয়ে রয়েছে। অনেকেই বলেন ঐ বট গাছের নিচে বসে দরবেশগন দিনের কাজ পরিচালনা করতেন।
বর্তমানে পাথর ও বট গাছটি যেমন আছেঃ
এক সময়ের গহীন জঙ্গল কুড়ো টিলা ও পার্ম্ব বর্তী মিরটিলা দুটি হবিগঞ্জ জেলার মধ্যে সবচেয়ে উচু টিলা বলে খ্যাত। ঐ উচু কুড়ো টিলায় এখন আর জঙ্গল নেই। নেই কোনো হিংস্র জীব জন্তুর উপদ্রব। টিলাটি এলাকার কথিপয় প্রভাবশালী লোক দখল করে নিয়েছে। তারা জঙ্গল পরিষ্কার করে বিভিন্ন ধরনে গাছের বাগান করেছে। কিন্তু ভক্ত অনুরাগীদের বাধার মূখে শত বছরের পূরোনো বট গাছটি কাটা সম্বব হয়নি। ঐ টিলার একপাশকে এলাকাবাসী কবরস্থান হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। কালো পাথরটি বৃদ্বি পেয়ে বর্তমানে বিশাল আকার ধারন করেছে। প্রতিদিন এ পাথর দেখার জন্য শথ শত লোক দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসছেন। পাহাড়ের চুড়ায় বট গাছের নিচে ভক্ত অনুরাগীরা বসে দোয়া-দুরুদ করেন। এবং শিরনী বিতরন করেন। এলকাবাসী ঐ পাথরের কাছে যাওয়ার জন্য পাহাড়ের চুড়া পর্যন্ত একটি রাস্তা করেছেন। সরেজমিনে গিয়ে পাথরের খাদেম রাহেল মিয়ার সাথে তিনি বলেন এলাকার অনেকেই এ পাথর সরানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। পাথরের নিচেই রয়েছে জিন্দা ওলিদের মাজার। প্রতিবছর এ পাথরের নিচ থেকে অলৌকিক শব্দ আসে। শিরনী বিতরন কারী মৌলভীবাজার  জেলার কাগাবালা গ্রামের তৈয়বুনন্নেছা ও নবীগঞ্জের কায়স্তগ্রামের খায়রুন বেগম বলেন আমাদের মুরুবিবর আমল থেকেই শিরনী দিয়ে আসছি। এখানে শিরনী দিলে মনোবাসনা পূর্ন হয়। হেতিম উল্লাহর উত্তসুরি গনি মিয়া বলেন এ টিলা নিয়ে যে রহস্যময় গল্প রয়েছে তা সম্পূর্ন সত্য।
আসলে কুসংস্কার ,গুজব না বাস্তবঃ
কুড়ো টিলার চুড়ায় অবস্থিত কালো পাথরটি নিয়ে যে রূপ কথার গল্প রয়েছে তা এলাকার অনেকেই বিশ্বাস করলেও আশরাফ আলী নামে এক ব্যক্তি বলেন এটা আসলে গুজব, বাস্তব কোনো কাহিনী নয়। এগুলো বিশ্বাস করা টিক নয়। তা কুসংস্কার। তবে ফুরকান আলী ও শাহাবুদ্দিন নামে অপর দুই ব্যক্তি এ কাহিনী কুসংস্কার নয়, ওলীদের কেরামতি নামে অবহিত করেন। শত বছর হলেও এখনো উৎসাহি জনতার ভীড় কমেনি, বরং বেড়েছে।
Ruby