বুধবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

নাটোরে প্রতিবাদী শিক্ষক মিজান হত্যার রায় ॥ দুই যুবকের যাবজ্জীবন কারাদন্ড

আকতার হোসেন অপূর্ব, নাটোর প্রতিনিধি :: নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার লোকমানপুর কলেজের ইভটিজিং প্রতিবাদী শিক্ষক চাঞ্চল্যকর মিজানুর রশিদ হত্যা মামলার রায়ে অভিযুক্ত দুই যুবক আব্দুল আওয়াল রাজন ও মামুন-অর-রশীদ আসিফকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক একরামুল হক চৌধুরী মঙ্গলবার এই রায় ঘোষনা  করেন। মিজানুর রশিদ হত্যার ১৬ মাসের মাথায় এই রায় ঘোষনা করা হলো। রায়ে মিজানের পরিবার সন্তোষ প্রকাশ করলেও আসামী পক্ষ অসন্তোষ প্রকাশ করে রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন।
    ২০১০ সালের ১২ অক্টোবর কলেজের রাস্তায় বখাটে যুবক মামুন-অর-রশীদ আসিফ ও আব্দুল আওয়াল রাজনের দ্রুতগামী মোটর সাইকেলের ধাক্কায় বিপরীত দিক থেকে অপর মোটর সাইকেলে আসা শিক্ষক মিজানুর রশিদ গুরুতর ভাবে আহত হন। ঘটনার দিনই বাগাতিপাড়া উপজেলা হাসপাতাল হয়ে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। টানা ১২দিন অচেতন থাকার পর ২৫ শে অক্টোবর চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১ টার দিকে সেখানেই তিনি মারা যান। এ ব্যাপরে মিজানের ভাই মামুনুর রশিদ বাদী হয়ে প্রথমে ১৫ অক্টোবর বাগাতিপাড়া থানায় আসিফ ও রাজনকে আসামী করে মারপিট ও হত্যা প্রচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন। ২৫ অক্টোবর মিজান মারা গেলে হত্যা প্রচ্ষ্টো মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহন করা হয়। এর কয়েকদিন পর বাগাতিপাড়া থানার তৎকালিন ওসি মির্জা আব্দুস সালাম অভিযুক্ত দুজনকে গ্রেফতার করেন।
    তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা বাগাতিপাড়া থানার এস আই আব্দুর রহিম গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর  আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। নাটোরে কোন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল না থাকায় মামলাটি রাজশাহীতে পাঠানো হয় । মামলার রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী ( পিপি ) এন্তাজুল হক জানান, মামলায় ৩০ জন স্বাক্ষীর মধ্যে ২০ জনের সাক্ষ্য গ্রহন করেছে আদালত। রায়ে মিজানুর রশিদের স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা মিলি সন্তোষ প্রকাশ করলেও দন্ডপ্রাপ্ত রাজন ও আসিফ এর পরিবারের পক্ষ থেকে দাবী বলা হয়েছে তারা ন্যায় বিচার পাননি। নিছক একটি সড়ক দূর্ঘটনার পর সাজিয়ে গুছিয়ে মিডিয়ায় প্রচারের মাধ্যমে মামলার বিচারের উপর প্রভাব ফেলা হয়েছে। রাজনের পিতা মুনসুর আলী জানান, এই রায়ের বিরুদ্ধে তিনি দ্রুত উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।
    প্রসঙ্গত মিজান মারা যাওয়ার পর সারা দেশে হৈ চৈ পড়ে যায়। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও বিএনপি নেতা আব্দুল্লাহ আল নোমানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা মিজানের বাড়িতে ছুটে আসেন। ঢাকায় ডেকে সাক্ষাত করে তার স্ত্রী ও একমাত্র মেয়ে মম’র পাশে থাকার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মিজানের স্ত্রী মিলির ইচ্ছে মাফিক স্থানীয় একটি বেসরকারী কলেজে মিলিকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক হিসেবে চাকুরীর ব্যবস্থা করে দেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সময় মন্ত্রী এমপি ও বিভিন্ন ব্যাংক থেকে পরিবারকে প্রায় ২০ লাখ টাকা আর্থিক সহযোগিতাও প্রদান করা হয়।
Ruby