শনিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

দুর্গাপুরের জননী ক্লিনিকে আবারো রোগী মৃত্যুর অভিযোগ

র.ই.মুক্তাঃ রাজশাহীর দুর্গাপুরের জননী ক্লিনিকে আবারো ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত মঙ্গলবার উপজেলার ঝালুকা গ্রামের আব্দুস সোবাহান ওরফে ইনছের আলী (৫০) নামের এক ব্যাক্তি পেটের ব্যাথা নিয়ে জননী ক্লিনিকে ভর্তি হলে ওই দিনই তার ওপারেশন করা হলে গত শুক্রবার তার মৃত্যু হয়। মৃত ব্যাক্তির পরিবারের অভিযোগ, ডাক্তারের ভুল চিকিৎসা ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারনেই রোগীর মৃত্যু হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ঝালুকা গ্রামের আব্দুস সোবাহান ওরফে ইনছের আলী হঠাৎ করে গত মঙ্গলবার বিকালে পেটের ব্যাথা নিয়ে উপজেলা সদরের জননী ক্লিনিকে ভর্তি হোন। এ সময় ক্লিেিনকর ডাক্তাররা ইনছের আলীর পেটের নাড়ি ফুটা হয়েছে বাণেশ্বর থেকে বড় ডাক্তার আসবে তাই রাত ৯ টায় অপারেশন করা হবে বলে  তার পরিবারের লোকজনকে জানায়। রাত ৯ টায় ইনছের আলীর পরিবারের লোকজন ক্লিেিনকে গিয়ে দেখে তার অপারেশন হয়ে গেছে। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই কিভাবে অপারেশন করা হলো তার জবাবে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ জানায় ডাক্তার আগে থেকেই ওটিতে (অপারেশন থিয়েটার) ছিলো তাই অপারেশন করা হয়েছে। এদিকে অপারেশর করার পরদিন থেকেই রোগীর অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হয়। গত বৃহস্পতিবার ওই রোগীর অবস্থা আরো অবনতি হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের এক ডাক্তার ক্লিনিকে গিয়ে রোগীর লোকজনকে জানায় যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। এরপরও ওই দিন ইনছের আলীকে ক্লিনিক থেকে রিলিজ না করে ক্লিনিকেই রাখা হয়। পরদিন শুক্রবার রোগীর অবস্থা বেগতিক হলে সন্ধ্যার দিকে ক্লিনিক থেকে তাকে রিলিজ দেয়া হয়। কিন্তু বিধিবাম রামেক হাসপাতালে নেয়ার আগেই   ইনছের আলী মুত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
মৃত ইনছের আলীর বড় ছেলে শরিফুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, হঠাৎ পেটের ব্যাথার কারনে তার বাবাকে জননী ক্লিনিকে ভতি করা হলে ক্লিনিকের ডাক্তারদের ভুল চিকিৎসা ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারনেই তার বাবার মৃত্যু হয়েছে।
নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা গেছে, জননী ক্লিনিকের ভুয়া সার্জন সান্টু, উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডাক্তার বিল্লাল উদ্দিন ওই অপারেশনটি করেন।

সুত্রে জানা যায়, গত বছরের ১১ ্এপ্রিল রাজশাহী সিভিল সার্জন এর নেতেৃত্বে একটি ঝটিকা টিম দুর্গাপুর উপজেলা সদরে অবস্থিত জননী ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে  অভিযান পরিচালনা করে। পরিদর্শন শেষে ক্লিনিক পরিচালনা শর্তাবলী পুরন না করা এবং লাইসেন্স না থাকায় ক্লিনিকটির সকল কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়। গত ১২ এপ্রিল রাজশাহী সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ডাঃ শাহ্ আমানুল্লাহ চৌধুরী স্বাক্ষরিত সিএস-রাজ/শা-গো/প্রাঃক্লিঃ/পরিদর্শন/১১/১৭/৮৭০/১(৭) নম্বর স্মারকে ওই ক্লিনিকের যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হলেও রাতের আঁধারে অত্যন্ত গোপনে ক্লিনিকটির সকল প্রকার কার্যক্রম অব্যাহত ছিলো। এ কারনে একই বছরের ২৩ এপ্রিল ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলতাফ হোসেন সেখ থানা পুলিশের সহযোগীতায় অভিযুক্ত ক্লিনিক মালিক জিলহাজ্বকে আটক করে ১ মাস সশ্রম কারাদন্ড ও ৫ হাজার টাকা অর্থদন্ডের আদেশ দেন। একই সাথে ক্লিনিকটি সিলগালা করে দেন। এরপর আবারো প্রায় দুই মাস আগ থেকে সিলগালা করা ভবনটি পরিবর্তন করে শালঘরিয়া রোডে আরেকটি নতুন ভবনে জননী ক্লিনিকের সকল কার্যক্রম নতুন ভাবে শুরু করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ৩১ আগষ্ট দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আলতাফ হোসেন সেখ এর নেতৃত্বে র‌্যাব-৫ এর একটি টিম ওই ক্লিনিকে অভিযান চালিয়ে ক্লিনিকের ভুয়া ডাক্তার মাহাবুবুর রহমান রঞ্জু ও ভুয়া সার্জন সান্টু মিয়ার প্রত্যকের ৩ মাসের সশ্রম কারাদন্ড ও প্রতারক ভুয়া গাইনী ডাক্তার মুন্নী আক্তারের ২ হাজার টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে ১৫ দিনের সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন।
এ ব্যাপারে রাজশাহী সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ শহিদুল ইসলামের সাথে কথা বলা হলে তিনি জানান, বৈধ কাগজ পত্র না থাকা ও ক্লিনিক পরিচালনা শর্তাবলী পুরন না করায় ইতিপুর্বে ওই ক্লিনিক বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহনের জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা যদি ব্যাবস্থা না নিয়ে উল্টো তাদের কার্যক্রম চালানোর ব্যাবস্থা করে দেয় তাহলে সিভিল সার্জন অফিসই বা কি করবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমিনুর রহমান এর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
উপজেলা স্বাস্থ কর্মকর্তা (টি এইচ ই) ডাঃ মোঃ সাদিকুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলা যাবেনা। সামনা সামনি আসলে তখস কথা হবে। 
Ruby