সোমবার, ১২ মার্চ, ২০১২

নওগাঁয় মেলার নামে সর্বশান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ

আব্বাস আলী, নওগাঁ সদর প্রতিনিধি :: প্রতি বছরের মত এবারও শীতকালে নওগাঁয় মাসব্যাপী বিভিন্ন নামে প্রায় ডজন খানেক মেলা সম্পন্ন হয়েছে। ২০১১ ইং সালের ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকে মেলা শুরু হয়। জেলার মহাদেবপুর উপজেলায় ৪টি, বদলগাছীতে ২টি, নিয়ামতপুর ১টি, মান্দায় ১টি,  রাণীনগর ১টি, আত্রাই ১টি ও সদর উপজেলায় ১টি মেলা সম্পন্ন হয়। গত তিন মাসে একই সাথে ৭টি উপজেলায় ১১টি মেলার অনুমতি দেয়ায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। একই সাথে এতগুলো মেলার অনুমতি দেওয়ায় মেলায় সর্বশান্ত হচ্ছে নওগাঁর সাধারন মানুষ। অন্যদিকে মেলাকে কেন্দ্র করে ছিচকে চুরি, চুরি, ডাকাতি ছিনতাই বেড়ে চলেছে।

এসব মেলার অনুমতি প্রদান করে সরকারের রাজস্ব খাতে কোন প্রকার টাকা জমা না হলেও জেলা প্রশাসন, তথাকথিত এল.আর ফান্ডের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে মেলা আয়োজকদের সুত্রে জানা গেছে। নিছক বিনোদনের আশ্বাস দিয়ে মেলার অনুমতি নিয়ে, জুয়া, হাউজি, রাফেল’ড্র, পুতুল নাচ ও ভ্যারাইটি শো, সার্কাস, যাত্রার নামে কোটি কোটি  টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে আয়োজকরা। প্রতিটি  মেলায়  নাম মাত্র যাত্রা শিল্পীদের  মেকাপ নিয়ে বসিয়ে রেখে, দেশের বিভিন্ন পতিতা পল্ল­ী থেকে সুন্দরী যৌনকর্মীদের নিয়ে এসে ভ্যারাইটি শো বা হাইশোর নামে রাত ভর চলে নগ্ন দেহের প্রদর্শন, অশ্ল­ীল নৃত্য, জুয়া  ও মাদকের প্রকাশ্য বেচা কেনা। আর এই অশ্ল­­ীল নাচ দেখা ও জুয়ার টাকা যোগাতে তরুন সমাজ বিপথ গামী হচ্ছে এবং বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে।

এমতাবস্তায় ১১টি মেলার ঘা শুকাতে না শুকাতেই আবারও নতুন করে ৩টি মেলার অনুমতি দিতে যাচ্ছে নওগাঁ জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার জোয়ানপুর মোদাইয়ের বয়লার সংলগ্ন মাঠে, “স্বাধীনতার মাসে” বিজয় মেলার অনুমতি নিয়ে গত ৬ মার্চ থেকে অবৈধ ভাবে চলছে নানা রকম জুয়া খেলা, যাত্রাপালার নামে রাতভর শিল্পী নামধারী যৌন কর্মীদের নগ্ন দেহের প্রর্দশন। এদিকে নওগাঁ সদর উপজেলার ঢাকা রোডের পার্শ্ববর্তী স্থানে প্রায় ১কোটি টাকা ব্যয়ে মাসব্যাপী মেলার আয়োজন সম্পন্ন করে জেলা প্রসাশনের অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছে, ইতিমধ্যে মেলার নির্ধারিত স্থানে সার্কাস, যাত্রা, হাউজি, রাফেল-ড্র, ভ্যারাইটি শো এর জমকালো পান্ডেল নির্মান সম্পন্ন হয়েছে।

এছাড়াও মহাদেবপুর উপজেলার মাতাজিহাট নামক স্থানে, এছাড়া প্রস্তুতি চলছে সাপাহার উপজেলার দীঘিরহাট নামক স্থানে, বদলগাছীর গোবরচাপা হাট নামক স্থানে ও ধামইরহাট সদরে বৈশাখী মেলার প্রস্তুতি চলছে। শুধুমাত্র নওগাঁ জেলায় গত এক বছরেও প্রায় শতাধিক মেলা সম্পন্ন হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, জেলার মান্দা উপজেলায় ফাইভ ষ্টার সিনেমা হল বন্ধ করে তার পার্শ্বে গত ১৫ ডিসেম্বর স্থানীয় একটি ক্লাব মাসব্যাপী মেলা চালু করে, সেখানে পুতুল নাচের নামে নগ্ন নারী দেহের প্রদর্শন, যাত্রার নামে হাইসোতে নগ্ন নৃত্য, আর র‌্যাফেল-ড্র ও জুয়ার বোর্ড বসিয়ে প্রতি রাতে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রভাবশালী দলের কয়েকজন নেতারা। গত ১৬ ডিসেম্বর মহাদেবপুর উপজেলার কুঞ্জবন শুরু হয় মাসব্যাপী মেলা। এর দুই দিন পর ১৮ ডিসেম্বর থেকে একই উপজেলায় সফাপুর ইউনিয়নের বেহুলাতলা নামক স্থানে শুরু হয়  আরও একটি মেলা। এ দুটি মেলা শেষ হতে না হতেই ওই উপজেলায় কালু শহর নামক স্থানে শুরু হয় আরও একটি মেলা এবং হিন্দুবাঘার মেলা। অপরদিকে জেলার বদলগাছী উপজেলায় ৩ জানুয়ারী থেকে দ্বীপ পাহাড়পুর নামক স্থানে এবং ৮ জানুয়ারী থেকে ভান্ডারপুর বাজারে ও দ্বিপগঞ্জে আরো ২টি মেলার অনুমতি দেয়া হয়। এছাড়াও ৫ জানুয়ারী থেকে নওগাঁ সদরে হাপানিয়া বাজার সংলগ্ন এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের সাহার্য্যার্থে বিজয় মেলা, ১৫ জানুয়ারী থেকে রানীনগরের গুয়াতা নামক স্থানে পৌষ মেলা, ১২ জানুয়ারী থেকে আত্রাই এর দেবনগর এলাকায় মাসব্যাপী পৌষ মেলা সম্পন্ন হয়। এসব মেলা চলাকালীন সময়ে চুরি, ছিনতাই বেড়ে যাওয়ায় জেলার আইন শৃংখলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে।

মেলা গুলোতে অবৈধ পন্থায়র্র্ যাফেল-ড্র, এর নামে ১০-২০ টাকার টিকিট জেলা সহ পার্শ্ববর্তী জেলায় ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে বিক্রি করা হয়েছে। আর লোভনীয় পুরষ্কারের কারণে সাধারণ মানুষ টিকিট কিনতে হুমড়ী খেয়ে পড়তে দেখা গেছে, এ সুযোগে আয়োজকরা লুটে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। প্রসাশনের সকল মহল ম্যানেজ করে এসব মেলায় অনৈতিক কর্মকান্ড নির্বিঘেœ পরিচালিত হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

প্রতিটি মেলার তথাকথিত বিনোদন উপভোগের প্রবেশ মূল্য চেয়ার ২৫০  টাকায় ও  বাংলার মাটি ৫০ টাকায় টিকিট কেটে তরুন যুব সমাজ এ নাচ দেখতে হুমড়ী খেয়ে পড়েছে। মেলার এক পাশে বসানো হয়েছিল লটারী নামে প্রকাশ্য জুয়া খেলা। সে সাথে চলছিল নেশা বিক্রির রমরমা ব্যবসা। যাত্রা, সার্কাস ও পুতুল নাচ দেখতে যাওয়া দর্শকদের উপর  চালানো হয়েছিল আয়োজক কমিটির লোকদের কঠোর নজর দারী। যাতে কোন দর্শক  ভিডিও মোবাইল ফোনে কোন চিত্র ধারন করতে না পারে। মেলা ব্যাপারে পত্র পত্রিকায় লেখালেখি হলে জেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ২/১ বার কয়েকজন নামধারী শিল্পীদেরকে জেলা হাজতে প্রেরন করলেও মেলার আয়োজকদের টিকিটিও ছুড়ে পারে না। এলাকার সচেতন মহল সমাজ বিরোধী এসব মেলার অনুমতি না দেওয়ার জন্য সরকারের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের  নিকট জোর দাবী জানিয়েছেন।
Ruby