বুধবার, ২৮ মার্চ, ২০১২

জনদুর্ভোগ: বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে প্রায় ২০০ টেলিফোন সংযোগ প্রকৌশলী জিয়াউল করিম নিজেই ঠিকাদার সেজে কোটি টাকা আত্মসাত করলো যেভাবে

এস.এন.আকাশ, (দিনাজপুর) পঞ্চগড় থেকে ফিরে :: দুর্নীতি দমন কমিশনের দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পরেও বিটিসিএল এর পরিচালক জিয়াউল করিমের বিরুদ্ধে কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটলেও কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি সরকারের উর্দ্ধতন দায়িত্বশীল এ প্রতিষ্ঠানটি। ফলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর প্রতি আস্তা হারাতে বসেছে পঞ্চগড় জেলার সাধারণ মানুষ। শুধু তাই নয় বিগত ২ দুই ধরে প্রায় ২’শ টেলিফোন লাইন কেটে অকেজো করে দিয়েছে ঐ অর্থলোভী প্রকৌশলী জিয়াউল করিম। সাধারণ মানুষেরা দীর্ঘদিন ধরে তাদের নিকট আত্মীয় এর সাথে কম টাকায় কথা বলা এবং দ্রুত গতির ইন্টারনেট সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। 

ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, পঞ্চগড় তেঁতুলিয়া মহাসড়কের জনদল বাজার হতে করতোয়া সেতুর পূর্বপাড় পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ভূগর্ভস্থ টেলিফোন ক্যাবল অপসারণ কাজে সীমাহীন দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে। জনগুরুত্বপূর্ণ এ কাজটি টেন্ডারের মাধ্যমে কোন প্রতিষ্ঠানকে দরপত্র না পাইয়ে দিয়ে তৎকালীন দিনাজপুর বিভাগীয় প্রকৌশলী জিয়াউল করিম নিজেই ঠিকাদার সেজে বিটিসিএল এর প্রায় ২০ জন অদক্ষ লোকজন দিয়ে ক্যাবল অপসারণ করতে গিয়ে ক্যাবল কেটে ফেলে ভুগর্ভস্থে লেজে-গবরে অবস্থা করে রেখেছে। কর্তৃপক্ষ এ কাজের জন্য কোন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে দরপত্রও আহবান করেননি। এ কারণে শহরে প্রায় ২০০ টেলিফোন সংযোগ দু’ মাস ধরে বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বিটিসিএল উল্লেখিত স্থানে কোটেশনের মাধ্যমে নতুন ক্যাবল সংযোগ দেওয়া ও নির্ধারিত দূরত্ব বজায় রেখে তার প্রতিস্থাপন করার নিয়ম থাকলেও অদক্ষ শ্রমিকরা সেটি করতে পারেনি। অথচ নাম সর্বস্ব একটি ভূয়া ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানে নাম প্যাড ও সিল ব্যবহার করে বিভাগীয় প্রকৌশলী এ ক্ষেত্রে মূল্যায়ন কমিটির আহবায়ক উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মুক্তাদী মাহমুদ শাহ বিষয়টি জানতে পেরে স্বাক্ষর করতে না চাইলে বিভাগীয় প্রকৌশলী জিয়াউল করিম এক ঘন্টার মধ্যেই সহকারী প্রকৌশলী রঞ্জন কুমার দাসকে আহবায়ক করে একটি নয়া মূল্যায়ন কমিটি গঠন করে ঠিকাদারী প্যাডে রঞ্জন কুমারের স্বাক্ষর নিয়ে পঞ্চগড়ের সহকারী প্রকৌশলী রুকনুদ্দৌলাকে দিয়ে ১ কোটি ৪ লক্ষ টাকা বিল বানিয়ে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। নতুন ক্যাবল ক্রয় ইট, বালি, লেবার ও পরিবহন বাবদ ঐ নাম সর্বস্ব ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানে নামে ঐ টাকা উত্তোলন করা হয়। মজার ব্যাপার হল নতুন কোন ক্যাবল ইট, বালি, কোন কিছুই ক্রয় করা হয়নি। যা পুন: খনন করে ল্যাবরোটারি টেস্ট করলে সরাসরি ধরা পড়বে। অথচ এ অপসারণ কাজে সর্বোচ্চ ব্যয় হয়েছে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। ফাঁক ফোকরের বিষয়টি নিয়ে যারা প্রতিবাদ করেছে তাদের নাম ছাম টাকা ধরিয়ে দিয়ে মুখ বন্ধ করে রেখেছিল সহকারী প্রকৌশলী রুকনোদ্দৌলা ও তৎকালীন বিভাগীয় প্রকৌশলী জিয়াউল করিম। সম্প্রতি জিয়াউল করিম বিভাগীয় প্রকৌশলী থেকে বিটিসিএল এর পরিচালক পদে পদোন্নতি নিয়ে দিনাজপুর অফিস ত্যাগ করে বিটিসিএল এর রাজশাহী পরিচালক কার্যালয়ে পরিচালক হিসেবে গত ১১ মার্চ যোগদান করেছেন।

দুর্নীতির স্বচিত্র সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশ হওয়ার পরও বিভাগীয় প্রকৌশলী জিয়াউল করিম পদোন্নতি পেয়ে বর্তমানে বিটিসিএল- রাজশাহী পরিচালক হয়েছেন। তিনি কোটি টাকা আত্মসাত করার পরও কিভাবে পদোন্নতি পেলেন ! এ বিষয়টি নিয়ে উত্তরাঞ্চলের ঠাকুরগাঁও- পঞ্চগড়, রংপুর- দিনাজপুর ও রাজশাহীতে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। যা যে কোন মুহূর্তে গণবিক্ষোরণ হতে পারে। অনতিবিলম্বে ঐ অর্থলোভী প্রকৌশলীর পদোন্নতি বাতিল করে তাকে আইনের কাঠগড়ায় দেখতে চায় উত্তরাঞ্চলের মানুষ। এই সমস্ত অর্থলোভী কিছু কর্মকর্তার কারণে পিছিয়ে পড়ছে দেশ।

এমনিতেই টিএন্ডটি কোটি কোটি টাকার লোকসানে দায়ভার ঘাড়ে নিয়ে সরকারি সিদ্ধান্তে কোম্পানিতে রূপান্তিত হয়েছে। একই প্রতিষ্ঠান দুই রূপ ধারণ করলেও প্রতিষ্ঠানের অসাধু ব্যক্তিদের পরিবর্তন করা হয় নি। ফলে যে দায়ভার নিয়ে টিএন্ডটি তার স্বমুর্তি ক্ষুন্ন করেছে বিটিসিএলএ বহাল থাকা এ সব দুর্নীতি পরায়ণ ব্যক্তিদের সরকার সঠিকভাবে মনিটরিং না করে বরং তাদের পদোন্নতি দেয়া হলে বিটিসিএল এ একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে। সরকারের জনগুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান বিটিসিএলর প্রতি সর্বাত্মক গোয়েন্দা নজরদারি ও দুদক এর চৌকস দৃষ্টি সব সময়ের জন্য থাকা প্রয়োজন বলে তথ্য অভিজ্ঞ মহল মনে করেন।

তাছাড়া আমাদের দেশে দুর্নীতি করে পদোন্নতি পাওয়া নতুন কিছু নয়। তবে যারা জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে তাদের কঠিনতর শাস্তি হওয়া উচিত। সময় এসেছে এবার কিছু করার। কারণ ডিজিটাল- এর লক্ষ্য নিয়ে দেশ এগুচ্ছে। এই দুর্নীতিবাজ অর্থলোভী প্রকৌশলী জিয়াউল করিমের কোটি টাকা আত্মসাতের বিচার না হলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশন-২০২১ ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন ভেস্তে যাবে বলে এমনটাই ভাবছেন সুধী মহল।
Ruby