আমানুল হক আমান :: ঐতিহ্যবাহী মুসা খাঁ নদীর নাম মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। নদীটি নাব্যতা হারিয়ে পানিশূন্যের দ্বারপ্রান্তে পৌচেছে। মুসা খাঁ নদীটি রাজশাহীর আড়ানী-পুঠিয়া সড়কের পকেটখালী মোড় সংলগ্ন ত্রিমোহীনি নামক স্থান থেকে বড়াল নদীর শাখা মুশা খাঁ নদী বেরিয়ে আঁকা-বাঁকা পথে হাপানিয়া, উমরগাড়ি, জাগিরপাড়া. করমদশী, জয়রামপুর, পীরগাছা, ঝলমলিয়া ও মধুখালি গ্রামের পাশ দিয়ে আতরাই নদীর সঙ্গে মিলন হয়েছে। প্রায় অর্ধশত বছর আগে মুশা খাঁ নদীর যৌবন ছিল টইটুম্বর। বর্ষার সময় পদ্মার বন্যার পলিমিশ্রিত পানি প্রবেশ করত এ নদীতে। সে সময় নদী থাকত পানিতে কানাই কানাই পূর্ণ। নদীর তীব্র স্রোতের কলকল শব্দে এলাকাময় মুখরিত হয়ে থাকত। কখনো কখনো নদীর দু’কূল বন্যার পানিতে পলাবিত হত। পলিমিশ্রিত পানিতে আবাদ যোগ্য জমিগুলো উর্বরা শক্তি ফিরে পেত। কৃষকরা উর্বর জমিতে দ্বিগুন ফসল ফলাত। সারা বছর স্বাচছনেদ সংসার চালানোর পাশাপাশি কৃষকরা অতিরিক্ত ফসলাদি বাজারে বিক্রয় করত। জেলে সম্প্রদায় ছোট-বড় মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে আননেদ সংসার চালাত। কিশোর-কিশোরীরা আননেদ সাঁতার কাটত। সে সময় বর্ষাকালে পানিপূর্ণ নদীতে ছোট-বড় মালামাল বোঝাই পালতোলা অসংখ্য নৌকা যাতায়াত করত ওই নদী পথে। ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ঘাটে ও হাটের পাশে নৌকায় নোঙ্গুর ফেলে মালামাল আমদানী ও রপ্তানী করত। নদী পথে নৌকা যোগে লোকজন দুরদুরান্তে য়াতায়াত করত। প্রতি বছর নদীতে সাঁতার প্রতিযোগিতায় শত শত লোক অংশ গ্রহণ করত। শুস্ক মৌসুমেও নদীতে প্রয়োজনীয় পানি থাকত। কালেব আর্বতে ও চারঘাট বড়াল নদীর উপর স্লুইচগেট নির্মাণের কারণে ওই নদীর অস্তিত্ব প্রায় বিলুপ্তির পথে। পলিমাটিতে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। নদীটি টইটুম্বর যৌবন হারিয়ে শুস্ক বক্ষ বিস্তার করে সর্বক্ষণ পানি পিপাসায় আর্তনাদ করছে। বন্যার পানি আর প্রবেশ করে না। বর্ষার পানিতেও নদীর তলদেশ সিক্ত হয় না। পলিমিশ্রিত পানির অভাবে নদী তীরবর্তী মাঠের জমিগুলো উর্বরাহীন হয়ে পড়েছে। কৃষি আবাদযোগ্য জমিতে পোকা-মাকড় বাসা বেধেছে। ফসল উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। কৃষকদের মনে শান্তি নেই। জেলেরা পৈত্রিক পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় নিয়োজিত হয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে বাধ্য হচেছ। নদী পয়স্ত খাস জমিগুলো প্রভাবশালীরা জোরপূর্বক ভোগ দখল করছে। পীরগাছার জেলে সম্প্রদায়ের বৃদ্ধ বিরেন, নগেন ও প্রভাস জানান, নদী সচল অবস্থায় তারা ছোট-বড় মাছ ধরে বাজারে বিক্রয় করে স্বাচছনেদ সংসার চালাত। বর্তমান অন্য পেশায় তাদের ছেলেরা জীবিকা নির্বাহ করছে। বৃদ্ধ ফারুক জানান, সেকালে পুঠিয়া ও নাটোরের রাজ-রাজারা ওই নদী পথে যাতায়াত করত। জামনগরর গ্রামের কৃষক রাববানী জানান, বন্যার পানি নদীতে প্রবেশ করে না। নদী তীরবর্তী মাঠের জমিগুলো পলিমিশ্রিত পানির অভাবে উর্বরাহীন হয়ে পড়ায় ফসল উৎপাদন অত্যন্ত হ্রাস পেয়েছে।
