মঙ্গলবার, ৩ এপ্রিল, ২০১২

লাখো মানুষের কান্না দিনাজপুরে রেভোনেক্স বিডি কোম্পানী লিঃ ৫ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছে

এস.এন.আকাশ, দিনাজপুর :: দেশজুড়ে যখন এমএলএম কোম্পানি ডেসটিনি-২০০০ লিঃ এর বৈধতা নিয়ে জাতীয় পত্রিকাগুলোতে ফলাও করে প্রচার পাচ্ছে এবং এমএলএম ব্যবসাটি আসলে যে কতটুকু গ্রহণযোগ্য তা নিয়ে দিনাজপুরের মানুষের মাঝে ব্যাপক উদ্দীপনা, চিন্তা এবং নানান প্রশ্নের ঘুর্ণিপাকে ঘুরপাক খাচ্ছে। এর এরই ধারাবাহিকতায়  দিনাজপুরে ব্যবসার মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে ৪শ’ বিনিয়োগকারীদের ৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়েছে রেভোনেক্স বিডি কোম্পানী লিমিটেড নামে একটি হায় হায় কোম্পানী।

অভিযোগকারীর অভিযোগ, প্রশাসনকে অবগত করা হলেও প্রশাসন কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করেনি। সোমবার দুপুর ১২ টায় দিনাজপুর প্রেসক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই অভিযোগ করা হয়।

বিনিয়োগকারীদের পক্ষে নাজমুল হক বিপ্লব সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলেন, দিনাজপুর কাহারোল উপজেলার দশমাইল পূর্ব সাদিপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলাম ও তার কন্যা সুলতানা পারভীন মৌসুমী যোগসাজস করে ভূয়া রেভোনেক্স বিডি কোম্পানীর নাম দিয়ে নিজ বাড়িতে অফিস ও বিভিন্ন জায়গায় নিজেদের এজেন্ট হিসেবে ব্যবসার প্রলোভন দেখায়। তারা প্রত্যেক গ্রাহকের কাছ থেকে সদস্য ফি বাবদ ৭ হাজার টাকা প্রদান করলে ৩০ শতাংশ হারে মাসিক ২১০০ টাকা হারে ৬ মাস পর পর ১২ হাজার ৬শ’ টাকা প্রদান করবে। এজন্য দিনাজপুরের চিরিরবন্দর, দশমাইল, নীলফামারী, সৈয়দপুরসহ ৪ শতাধিক নিরীহ জনগনকে সদস্য বানিয়ে  ৫ কোটি  টাকা তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়। টাকা জমা হয় সুলতানা পারভীন মৌসুমীর নামিয় ডাচ বাংলা ব্যাংকের একাউন্টে (রংপুর শাখার হিসাব নং-১৬২-১০১-১২৬-৪০০)। তারা অর্থ জমার পর ভূয়া রশিদ প্রদান করে থাকে।

কিছুদিন পূর্বে ওই কোম্পানী তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। রাতারাতি উধাও হয়ে যায় তাদের সাইনবোর্ডও। কোম্পানী উধাও হয়ে যাওয়ার পর গ্রাহকরা দীর্ঘদিন ধরে টাকার জন্য সিরাজুল ইসলাম ও মৌসুমীর নিকট ধর্না দিলেও এখন পর্যন্ত বিনিয়োগকারীরা তাদের টাকা ফেরত পায়নি। মোবাইলে যোগাযোগ করলে তারা বলেন, ‘কি করার আছে আপনারা করেন, টাকা ফেরত দিব না’।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, শুরুতে তারা দিনাজপুর শহরের পুনাক মার্কেট, খানা খাজনা রেষ্টুরেন্ট, সানন্দা রেষ্টুরেন্টসহ বিভিন্ন বড় বড় রেষ্টুরেন্টে সেমিনার করে। সেমিনারে অংশগ্রহনকারীদের তারা তাদের চাকচিক্র ও মন ভোলানো কথার ফুলঝুড়িতে আকৃষ্ট করতো। সে সময় বলা হয়, কোম্পানী উঠে গেলেও আমরা আপনাদের টাকা ফেরত দিব।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এ ব্যাপারে কাহারোল থানায় অভিযোগ করা হয়। অভিযোগের সাথে ১৪৭ জনের স্বাক্ষর করা দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার একটি বিবরণ প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত থানা পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কোন রকম ব্যবস্থা গ্রহন করেনি।

সংবাদ সম্মেলনে নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলার সাদেক হোসেন, দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার গাজিউর রহমান, ইসতিয়াক আহমেদ, সদর উপজেলার আমিনুল ইসলাম, নুরুজ্জামান, সাঈফুদ্দিন বুলবুল, কাহারোল উপজেলার আবেদ আলী, হৃদয়, আসাদুর রহমান ও বিরামপুর উপজেলার ইমরুল কায়েস উপস্থিত ছিলেন।

সূত্রমতে, দিনাজপুর শহরজুড়ে ও ১৩টি উপজেলায় এই পর্যন্ত ২শ’ এর বেশি এমএলএম কোম্পানি রয়েছে যার কোন তথ্য এবং কিংবা নাম প্রশাসনের কাছে নেই। জেলা তথ্য অফিস এ প্রতিনিধিকে জানিয়েছে, এমএলএম কোম্পানিগুলো তারা রাতের আধারেই অফিস খুলে বসে এবং রাতের আধারেই পালিয়ে যায়। এই কোম্পানিগুলোর হিসাবও তাদের কাছে নেই। তাহলে এই সব হায় হায় কোম্পানিগুলো কি করে এর বৈধতা পায়। এদের আসলে কারা নিয়ন্ত্রণ করে? সরকারি দল, বিরোধী দল, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অসাধু ব্যক্তি, প্রশাসন, সাংবাদিক, নাকি আমলারা? এ প্রশ্ন আজ সকলের মুখে মুখে। এদের নিয়ন্ত্রণ করতে এবং এদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে আপামর জনসাধারণ এবং ভুক্তভোগীরা আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার নিকট দাবী জানিয়েছে।
Ruby