মঙ্গলবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১২

আজ ১৭ এপ্রিল ঠাকুরগাঁওয়ের গণহত্যা দিবস


আল মাহামুদুল হাসান বাপ্পী, ঠাকুরগাঁও :: আজ ১৭ এপ্রিল ঠাকুরগাঁওয়ের গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক হানাদার বাহিনী ঠাকুরগাও সদর উপজেলার শুখানপুকুরী ইউনিয়নের জাঠিভাঙ্গা নামক স্থানে ও ভাতারমারি ফার্ম এলাকায় পীরগঞ্জ সংগ্রাম কমিটির ৬ নেতাসহ প্রায় ৩ হাজার নারী-পুরুষ, শিশুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। স্বাধীনতার ৪১ বছর পেরিয়ে গেলেও সে দিনের শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্মীকৃতি দেওয়া হয়নি।

১৯৭১ সালে  স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকবাহিনী ও রাজাকাররা সারা দেশের ন্যয় ঠাকুরগাঁওয়ে হত্যযজ্ঞ শুর করে। ওই সময় জগন্নাথপুর, চকহলদি, গৌরীপুর, মিলনপুর, খামারভোপলাসহ ৮/১০টি গ্রামের কয়েক হাজার বাঙালি নরনারী ও শিশু জীবন বাঁচাতে প্রিয় মাতৃভুমি ছেড়ে ভারতের দিকে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে সুখানপুকরী ইউনিয়নের জাটিভাঙা এলাকায় সন্ধ্যা নেমে এলে ভারতগামী নারী-পুরুষরা সেখানে রাত্রী যাপন করে।  এ খবর পেয়ে পাকবাহিনীর দোসর ও এ দেশীয় রাজাকাররা ঠাকুরগাঁও জেলা শহরে ইপিআই ক্যাম্পে খবর দেয়। ১৭ এপ্রিল সকালে হানাদাররা আশ্রিত লোকজনকে ঘেরাও করে পুরুষদেরকে মিছিল করার কথা বলে পাথরাজ নদীল তীরে নিয়ে যায় এবং লাইন করে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে। গুলিবৃদ্ধ হয়েও যারা বেঁচে ছিল তাদের কুপিয়ে হত্যা করে এবং বাড়ি ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এ হত্যাযজ্ঞ চলে। সেখানে আড়াই হতে ৩ হাজার নারী-পুরুষ ও শিশুকে হত্যা করা হয়।
অপরদিকে একই দিনে ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলা শহরে পাক-হানাদার বাহিনী দুপুরে ১৭ টি সাঁজোয়া গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করে। পাকিস্তানি সৈন্যরা প্রথমে স্বাধীন বাংলার পতাকা নামিয়ে ফেলে  পাকিস্তানি পতাকা ওড়িয়ে দেয়। এরপর তারা স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিষদের অফিসে আগুন লাগিয়ে দেয়। এভাবে থানা শহরের বাড়িঘরে একের পর এক অগ্নিসংযোগ করতে থাকে। পাক বাহিনী পীরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডা. সুজা উদ্দীন, পীরগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফাসহ ৬ নেতাকে ধরে নিয়ে যায় সদর উপজেলার ভাতার মারি ফার্ম এলাকায়। সেখানে তাদের হাত-পা বেঁধে বেয়নেট চার্জ করে হত্যা করা হয়।
বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের সময়ে ১৯৯৭ সালে জাটিভাঙ্গায় ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। কিন্তু পীরগঞ্জের শহীদদের স্মরণে সরকারিভাবে কোন স্মৃতিচিহৃ গড়ে তোলা হয়নি। দেশ স্বাধীনের পরে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ গোলাম মোস্তফার নামে স্মারক ডাক টিকিট বের করে। শহীদ গোলাম মোস্তফার কবরটি সংরক্ষনের জন্য তার ছেলে প্রভাষক আসাদুজ্জামান গত বছর প্রধান মন্ত্রীর বরাবরে আবেদন করলে তিনি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়কে নিদের্শ দেন। এদিকে নির্দেশের এক বছর পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

২০১০ সালের ডিসেম্বরে জাটিভাঙ্গায় পাক বাহিনীর হাতে শহীদদের ৩’শতাধিক বিধবা স্ত্রী রাজাকারদের ফাঁসির দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসকে ঘেরাও করে।

Ruby