বুধবার, ৪ এপ্রিল, ২০১২

আবদুল কাদেরকে নির্যাতনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় খিলগাঁও থানার সাবেক ওসি হেলাল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র আবদুল কাদেরকে নির্যাতনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় খিলগাঁও থানার সাবেক ওসি হেলাল উদ্দিনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ওসি হেলাল উচ্চ আদালত থেকে জামিনে ছিলেন। জামিনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় গতকাল আত্মসমর্পণ করলে ঢাকা মহানগর হাকিম মিজানুর রহমান ওসি হেলালের জামিনের আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। হেলালের আইনজীবী মীর হাসান মো. শহীদ সাংবাদিকদের জানান, হেলাল হাইকোর্ট থেকে দুই মাসের জামিনে ছিলেন। তার মেয়াদ শেষে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পুলিশের ‘নির্যাতনের শিকার’ কাদের গত ২৩শে জানুয়ারি ওসি হেলালের বিরুদ্ধে খিলগাঁও থানায় মামলা করেন। ‘মিথ্যা’ অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ হেফাজতে তার ওপর নির্যাতন চালানো হয় বলে অভিযোগ করেন। গত বছরের ১৫ই জুলাই বিকেল ৫টায় আবদুল কাদের তার ছোট বোন ফারজানা আক্তারকে নিয়ে গুলশানের ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টারে বৃত্তি অনুষ্ঠানে যান। অনুষ্ঠান শেষে সেখান থেকে হলি ফ্যামিলি স্টাফ কোয়ার্টারে তার খালার বাসায় বোনকে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ফেরার সময় সেগুনবাগিচায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কার্যালয়ের সামনে থেকে টহল পুলিশ তাকে রাত ১টার দিকে আটক করে। কাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং আইডি কার্ড দেখানোর পরও ছিনতাইকারী বলে পুলিশ তাকে খিলগাঁও থানায় নিয়ে যায়। এরপর তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। পরে তাকে মোহাম্মদপুর থানার দুটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। আবদুল কাদেরকে পুলিশ কর্তৃক নির্যাতনের ঘটনা সংবাদপত্রে প্রকাশ পেলে ২৮শে জুলাই হাইকোর্ট খিলগাঁও থানার ওসি হেলাল উদ্দিন, এসআই আলম বাদশা ও এএসআই শহিদুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করতে পুলিশের মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দেন। কাদেরকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠলে উচ্চ আদালতের নির্দেশে চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয় হেলাল উদ্দিনকে। কাদেরের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলোয় তাকে অব্যাহতির আবেদন জানিয়ে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। আইন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে হাইকোর্টের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৩শে জানুয়ারি কাদের এ মামলা করেন। মামলায় হেলালউদ্দিন হাইকোর্ট থেকে জামিন নেন। এরই মধ্যে জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ায় তিনি গতকাল নিম্ন আদালতে জামিনের আবেদন করলে আদালত এ আদেশ দেন। ২৩শে জানুয়ারি চার্জশিটের গ্রহণযোগ্যতা শুনানি শেষে কাদেরকে মামলাগুলোর দায় থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। ওই দিনই কাদের এ মামলাটি দায়ের করেন। ১৪ই মার্চ ঢাবি ছাত্র কাদেরের বিরুদ্ধে মিথ্যা, তুচ্ছ ও বিরক্তিকর মামলা দায়েরের অপরাধে মামলার বাদী পুলিশের এসআই মো. আলম বাদশাকে ১ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে ৩০ দিনের কারাদণ্ড দেন ঢাকার ৩য় অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান। আলম বাদশা ওই দিনই ১ হাজার টাকা অর্থদণ্ড পরিশোধ করে আদালত থেকে ছাড়া পান। মামলার এজাহারে কাদের উল্লেখ করেন, গত বছরের ১৫ই জুলাই রাত দেড়টার দিকে ইস্কাটনে খালার বাসা থেকে হেঁটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে ফিরছিলেন তিনি। সেগুনবাগিচায় দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যালয়ের সামনে সাদা পোশাকের কয়েকজন পুলিশ হঠাৎ তাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে। কাদের আঘাতের কারণ জানতে চেয়ে নিজের পরিচয় দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরিচয় পেয়ে পুলিশ সদস্যরা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এর পরের দিন সকাল পৌনে ১০টার দিকে খিলগাঁও থানার তৎকালীন ওসি হেলালউদ্দিন তাকে হাজতখানা থেকে নিজের কক্ষে নেন। ওসি জোর করে কাদের যা করেননি, সেসব বিষয়ে স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করেন। এ জন্য ওসি তার পিঠে, পায়ে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেন। একপর্যায়ে ওসি টেবিলে রাখা চাপাতি হাতে নিয়ে ‘দেখি তো চাপাতিতে ধার আছে কি না’ বলে তার বাঁ পায়ের হাঁটুর নিচের পেশিতে কোপ মারেন। রক্তে ভিজে যায় কক্ষের মেঝে। পরে আরও কয়েকজন অপরাধীর সঙ্গে কাদেরকে দুটি মামলায় আসামি করেন ওসি (এই দুটি মামলার তদন্তেই কাদের নির্দোষ বলে প্রমাণিত হয়েছে)। এরপর কাদের উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক তদন্ত হয়। সুপ্রিম কোর্ট এ বিষয়ে মামলা দায়েরের নির্দেশ দিলে কাদের মামলাটি করেন বলে এজাহারে উল্লেখ করেন। (বিজয় নিউজ ২৪ ডটকম)
Ruby