রবিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১২

২০১৩ সালের মধ্যে দেশ খাদ্যে সয়ংসম্পূর্ণ হবে : প্রধানমন্ত্রী

রোববার এখানে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার-১৪১৭ বিতরণকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকারকে কৃষি ও কৃষকবান্ধব। দেশের প্রত্যেক মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা গড়ে তোলা ও তাদের পুষ্টি নিশ্চিতের লক্ষ্যে ২০১৩ সালের মধ্যে দেশকে খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পর্ণ করতে সরকার দৃঢ় অঙ্গীকারাবদ্ধ।
তিনি বলেন, খাদ্যের বাজার ও উৎপাদন অস্থিতিশীল হওয়ায় যে কোন প্রতিকূল পরিস্থিতি ও সংকটে ব্যবহারের লক্ষে উদ্বৃত্ত খাদ্য সংরক্ষণ ক্ষমতা দুই থেকে তিন বছর পর্যন্ত বাড়াতে প্রযুক্তিগত সহায়তার জন্য তাঁর সরকার ইতোমধ্যে জাপান সরকারের সঙ্গে কথা বলেছে।
কৃষি উন্নয়নে তাঁর সরকারের নেয়া ব্যবস্থার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিরোধী দল দেশকে খাদ্য ঘাটতিতে পরিণত করতে বিরোধী দলের নীতির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই এদেশের কৃষক ভাল থাকে।
তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি কৃষি খাতের উন্নয়নের ওপর নির্ভরশীল। কৃষির অগ্রগতির সাথে বাংলাদেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা, জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ও কর্মসংস্থান প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত।
তিনি বলেন, কৃষি খাতে এই প্রথমবারের মতো তাঁর সরকার কৃষকদের জন্য ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠাসহ কৃষি গবেষণার জন্য বরাদ্দ প্রদান এবং আধুনিক যন্ত্রপাতি চালু করেছে।
এবছর কৃষি, মৎস্য, গবেষণা, কৃষিপণ্যের বাজারজাত প্রক্রিয়ার উন্নয়ন ও এ বিষয়ে জনগণকে উৎসাহিত করতে অবদানের জন্য ৪ নারী, ২ প্রতিষ্ঠানসহ ২৭ জনকে একটি সনদপত্র, নগদ অর্থ ও পদক সম্বলিত এই পুরস্কার দেয়া হয়।
এর মধ্যে কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যান গবেষণা কেন্দ্র ও ২ ব্যক্তিকে স্বর্ণ, ৭ জনকে রৌপ্য ও ১৭ জনকে ব্রোঞ্জ পদক দেয়া হয়।
কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে নরসিংদীর রায়পুর উপজেলার আদিয়াবাদ ইউনিয়নের সাবিকুন নাহার শিউলী এবং কৃষি সম্প্রসারণে অবদানের জন্য সিলেটের বিশ্বম্বরপুরের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. এসএম আফসারুজ্জামান স্বর্ণপদক লাভ করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী আবদুল লতিফ বিশ্বাস এবং পরিবেশ ও বনমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বক্তৃতা করেন।
কৃষি সচিব মনজুর হোসেন পুরস্কারপ্রাপ্তদের পরিচিতি উপস্থাপন করেন।
রৌপ্য পদকপ্রাপ্তরা হচ্ছেন বগুড়ার পল্লী উন্নয়ন একাডেমীর কৃষি বিজ্ঞান বিভাগের পরিচালক এ কে এম জাকারিয়া, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআই)র ডাল ও তেলবীজ গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. দেলোয়ার হোসেন (মরণোত্তর), রংপুরের মিঠাপুকুরের পায়রাবন্দ গ্রামের আনিসা বেগম, শরীয়তপুরের উপ-সহকারী উদ্যান গবেষণা কর্মকর্তা মফিজুল ইসলাম, রংপুরের পীরগঞ্জের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন, কুমিল্লার বুড়িচংয়ের উপ-সহকারী কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ এবং গাইবান্ধার সাঘাটার বোবিন্দির এম সুজাউদ্দৌলা।
ব্রোঞ্জ পদকপ্রাপ্তরা হচ্ছেন ময়মনসিংহের রাঘবপুরের পুলিয়ামারির একেএম নুরুল হক, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের নেছার আহমেদ, গাইবান্ধার নকিয়াহাটের শওকত আলী, নোয়াখালীর হাজিরহাট ধরমপুরের শাহেদুর রহমান, ঢাকার কেরাণীগঞ্জের নতুনচরের মোছাম্মৎ আনোয়ারা, পাবনার জয়নগরের নুরুন্নাহার, মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার আশিষ কুমার পাল, হবিগঞ্জের শাহাজিবাজারের এটিএম নাছিমুজ্জামান, লক্ষ্মীপুরের নিজামউদ্দিন ফারুকী, জামালপুরের সরিষাবাড়ির কৃষি কর্মকর্তা মোয়াজ্জেম হোসেন, নওগাঁর এইডির উপ-পরিচালক আব্বাস আলী, পাবনার ঈশ্বরদীর আটঘরিয়ার হাবিবুর রহমান, রাজশাহীর পুটিয়ার আলোপাড়ার মিজানুর রহমান, রাজশাহীর গোদাগাড়ির কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল আলম, সিলেটের দক্ষিণ সুরমার চর মোহাম্মদপুরের আবুল মিয়া, সাতক্ষীরার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রঘুজিৎ কুমার গুহ এবং যশোরের ঝিকরগাছার বিষ্ণপুরের মোকাররম হোসেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ৩০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার সারের মূল্য হ্রাস ও বিদ্যুতে ভর্তুকিসহ জরুরি ভিত্তিতে কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
তিনি বলেন, সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং কৃষকের কঠোর পরিশ্রমের ফলে বছরে ১০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তে আগামী বছরের মধ্যে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পর্ণ হবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের সময় দেশে খাদ্যঘাটতি ছিল ২৬ লাখ মেট্রিক টন এবং ক্ষমতা ত্যাগের সময় বাংলাদেশ ছিল ৪০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য উদ্বৃত্ত দেশ। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত সরকারের পাঁচ বছর এবং পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরে খাদ্যঘাটতি ৩০ লাখ টনে দাঁড়ায়।
তিনি বলেন, কৃষকরা যাতে সহনীয় মূল্যে সার, বিদ্যুৎ, ডিজেল, বীজ ও কৃষি যন্ত্রপাতি পেতে পারে, সেলক্ষে সরকার কৃষিখাতে অব্যাহতভাবে ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছে।
প্রদানমন্ত্রী বলেন, কৃষকরা যাতে তাদের পণ্যের ন্যায্যমূল্য পেতে পারে সেলক্ষে সরকার অব্যাহতভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরে কৃষি ঋণের পরিমাণ ১৩ হাজার ৮শ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। গত বছর এর পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ১৬৫ কোটি টাকা।
শেখ হাসিনা বলেন, পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টর, পাওয়ার প্রেসার, প্রেয়ার ও উইডারসহ বিভিন্ন কৃষি যন্ত্রপাতি ২৫% কমমূল্যে কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে। অপরদিকে বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্রে বিলের ওপর শতকরা ২০ ভাগ হারে রিবেট প্রদান করা হচ্ছে।
পাটের জীবন রহস্য উন্মোচনের মাধ্যমে বর্তমান সরকার কৃষি গবেষণায় যুগান্তকারী সাফল্য অর্জন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার পাটের বিভিন্ন প্রতিকূলতা সহনশীল উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবনের গবেষণার জন্য প্রায় ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সারাদেশে ১ কোটি ৮২ লাখ ৭৯ হাজার কৃষকপরিবারকে কৃষিকার্ড প্রদান করা হয়েছে। এই কার্যক্রমের আওতায় কৃষকরা মাত্র ১০ টাকায় একাউন্ট খোলার সুযোগ পাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বীজ ব্যাংক স্থাপনের লক্ষ্যে সার্ক চুক্তির কথা উল্লেখ করে বলেন, আঞ্চলিক বীজ ব্যাংক সার্ক দেশগুলোর মধ্যে কৃষিখাতে সহযোগিতা জোরদার করবে।
তিনি কৃষি পদক পুরস্কারপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানান এবং আশা প্রকাশ করেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
Ruby