মোঃ আককাস আলী, নওগাঁ প্রতিনিধি :: নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার সফাপুর ইউপির কৃষ্ণ গোপালপুর গ্রামের মৃত ছহির উদ্দীনের পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা মকছেদ আলী মাষ্টার যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি না দেখে এ সুন্দর পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে চায় না। মৃত্যুর আগে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি দেখে মরতে পারলে তিনি নিজেকে সৌভাগবান মনে করতেন। তিনি আজকালের খবরকে জানান, বাঙালি হয়ে কিভাবে পাক সেনাদের অত্যাচার-নির্যাতনের দোসর তারা হতে পারলো, বাঙালি ভাইদের হত্যা, গুম করা ও নির্যাতন করার মতো ঘটনার সহযোগী তারা কিভাবে হতে পারলো, এসব করতে তাদের বিবেক কি একটুও কাঁপলো না, নাড়া দিলো না! কোনো কোনো তরুণ একাত্তরের ঘাতক এবং তাদের দোসরদের দেশবিরোধী কর্মকান্ডের কথা শুনতে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়তেও দেখি। কেউ কেউ জানতে চায়, একাত্তর সালে সাধারণ মানুষ এসব যুদ্ধাপরাধী এবং তাদের দোসরদের কিভাবে দেখতো। আজকের তরুণদের অনেকেই ১৯৭১ সালকে জানতে বেশ আগ্রহী, তবে ব্যতিক্রমও আছে অনেকে। যারা ব্যতিক্রম তারা আসলেই বিভ্রান্ত প্রজন্ম, তারা একাত্তরে তরুণ থাকলে হয়তো যুদ্ধাপরাধীদের দোসরই হতো। আমাদের জাতীয় ইতিহাসে এমন পরস্পরবিরোধী ধারার প্রবাহমানতা আমাদেরকে কষ্ট দেয় বৈকি। কিন্তু বাস্তবতাকে বোঝা এবং ইতিহাসের পাঠ গ্রহণে নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করা কতোখানি আবশ্যক তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সে কাজটি যথাযথভাবে হলে নতুন প্রজন্মের কোনো সদস্যই একাত্তরের ঘাতক, যুদ্ধাপরাধী এবং তাদের দোসরদের মুক্তির দাবি কিংবা বিচারের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করতো না। আমরা গভীর দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করছি যে, বিএনপি তথা ৪ দলীয় জোটের সভা-সমাবেশে কিছু কিছু তরুণ একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী বলে অভিযুক্ত কোনো কোনো ব্যক্তির মুক্তির দাবি সংবলিত ব্যানার হাতে নিয়ে অবস্থান গ্রহণ করে। ওইসব সমাবেশে অনেক তরুণই তা দেখে থাকে, তাতে তারা কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে না, একাত্তরের ঘাতকদের বিরুদ্ধে তাদের মধ্যে কোনো ঘৃণাবোধও সৃষ্টি হয় না। এটি বাংলাদেশের রাজনীতির একটি নষ্ট প্রজন্ম। তাদেরকে বিকৃত ইতিহাস শুনিয়ে মুক্তিযুদ্ধের শেকড় থেকে বিচ্যুত করা হয়েছে। তাদেরকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে যে কথা শোনানো হচ্ছে তা মোটেও সত্য ভাষণ নয়, বরং নির্জলা মিথ্যা। তাদের যে নেতারা গলা ফাটিয়ে বলছেন যে, তারাও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হোক তা চান, তবে তা হতে হবে স্বচ্ছ, আন্তর্জাতিক মানের। এ কথাগুলো যারা বলছেন, তারা আসলে মস্তবড় মিথ্যা কথাই প্রকাশ্যে বলছেন। তারা কোনোকালেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি করেননি, উদ্যোগও নেননি। তারা তো অনেক বছর ক্ষমতায়ও ছিলেন। কেন তারা তখন তাদের স্বচ্ছতার ন্যূনতম প্রমাণ রাখেননি। এখন বিচার অস্বচ্ছভাবে হচ্ছে এমন একটি প্রমাণও কি তারা তুলে ধরেছেন কখনো? নিজেরা তেমন কিছু না করে, তা হলে কেন তারা বলছেন যে তারাও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চান। কিন্তু চাওয়ার প্রমাণ তো একটিও তারা দিতে পারেননি। তাহলে এ কথা কি তাদের মুখে আদৌ শোভা পায়? মুক্তিযুদ্ধের বিকৃত ইতিহাস তাদের উপজীব্য হয়েছে, যেখানে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস ও চেতনাকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে নিজেদের সুবিধামতো অংশ, জোড়াতালি দেয়া কিছু একটাকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বলে চালিয়ে দেয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের এক বানোয়াট ইতিহাসের অধিকারী রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্বের খপ্পরে পড়া এসব তরুণের জন্য আমাদের দুঃখ করা ছাড়া আর কি আছে। মুক্তিযোদ্ধা মকছেদ আলী মাষ্টার বলেন,একাত্তরের সেই বাস্তবতায় যুদ্ধাপরাধীদের ভূমিকা একটি কলঙ্কজনক দিক। সেই কলঙ্কটি ফেলেছিল এসব যুদ্ধাপরাধী এবং তাদের দোসররা যারা প্রত্যেকেই পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে হত্যা, লুটপাট, অত্যাচার-নির্যাতন, নারীর সম্ভ্রম হরণে অংশ নিয়েছিল। তাদের কাছে ওইসব অপকর্মকে অপকর্ম বলে মনে হয়নি, বরং ওইসব অপকর্মই নাকি পাকিস্তান রক্ষার জন্য তখন প্রয়োজন ছিল। ধর্ম রক্ষা এবং পাকিস্তান রক্ষা, ঐসব কিছু রক্ষা করতে গিয়ে গণহত্যাসহ সকল মানবতাবিরোধী অপরাধ তাদের কাছে সমার্থক হয়ে গিয়েছিল। সে কারণে এসব যুদ্ধাপরাধী এবং তাদের দোসররা যুদ্ধের ৯ মাস নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিয়ে পাকিস্তান বাহিনীর সেবাদাসে পরিণত হয়েছিল, তাদের দ্বিতীয় কোনো জীবন ছিল না, বাঙালির চরম ক্ষতি করার মধ্যে তাদের কোনো বিবেক নাড়া দিতো না, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিতে কুণ্ঠাবোধ করতো না। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কাউকে হত্যা করাটি পাকিস্তানের প্রতি খেদমত হিসেবে তারা দেখতো। এরা সবাই আসলে বিকৃত মানসিকতার মানুষে পরিণত হয়েছিল। এই অমানুষগুলোকে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ১৯৭১ সালে ভয় করেনি, বরং তখন চরমভাবে ঘৃণা করতো। মানুষের ঘৃণা থেকে বাঁচার জন্য পাকিস্তান বাহিনীর দোসররা শহরে বা ঢাকায় আশ্রয় গ্রহণ করেছিল, ভয়ে কখনো নিজ গ্রামে যেতে সাহস পায়নি। এসব কুলাঙ্গার দোসরদের ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ হাতের কাছে পেলে ‘উচিত শিক্ষা’ দিতে মোটেও দেরি করতো না। সাধারণ মানুষ থেকে পালিয়ে বেড়ানো দোসররা তাদের অপকর্মের জন্যই জাতির তীব্র ঘৃণা আর ক্ষোভের মুখে ছিল। যে কারণে পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত এলাকা ছেড়ে এসব যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তনি বাহিনীর সঙ্গেই পালিয়ে বেড়িয়েছিল। বাঙালি হয়েও যারা বাঙালির সঙ্গে মিশতে পারেনি, তারা নিজেদের অপকর্মের জন্যই এমন অবস্থানে নেমেছিল। সাধারণ মানুষ এসব ব্যক্তিকে শায়েস্তা করার জন্য খুঁজে বেড়িয়েছে, অপেক্ষায় ছিল। ১৬ ডিসেম্বর দেশ যখন সম্পূর্ণরূপে শত্রুমুক্ত হলো তখন পাকিস্তানি বাহিনীর এ দোসরদের তন্ন তন্ন করে খুঁজেছে সাধারণ মানুষ, তারা তখন আত্মগোপন করেছে, পালিয়েছে, নিজেদের বেশভূষা ও চেহারার পরিবর্তন ঘটিয়ে লুকিয়েছিল এখানে সেখানে। জনরোষের হাত থেকে মুক্তি পেতে এসব যুদ্ধাপরাধী পালিয়ে বেড়িয়েছে। এতেই বোঝা যায়, সাধারণ মানুষ তাদের কতোখানি ঘৃণার চোখে দেখেছে।
বাংলাদেশে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকা-ের পর যুদ্ধাপরাধীদের সর্বত্র ফিরিয়ে আনা হয়েছিল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে ব্যবহার করে, ভুলিয়ে দেয়ার চেষ্টা হয়েছিল ঐসব যুদ্ধাপরাধীদের সকল অপরাধ এবং অপকর্মকে, তাদেরকে মাঠে-ময়দানে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল ধর্মীয় পরিচয়ে, সাধু, ধর্মসাধক হিসেবে। কিন্তু তাদের ভূমিকা ১৯৭১ সালে ছিল ঘাতকের হোতা হিসেবে। ফলে অনেক বছর তরুণদের একটি বড় অংশ এদেরকে তাদের আসল চরিত্রে ভালোভাবে চিনতে পারেনি। এখন জানা ও চেনার সুযোগ হয়েছেÑ এরা আসলে কেমন মানুষ, দেশ ও জাতির সঙ্গে তারা ১৯৭১ সালে কেমন আচরণ করেছিল। তাদের সেসব কর্মকা- শুনে এখনকার নতুন প্রজন্ম যতো বেশি তাদের ঘৃণা করতে শিখবে ততো বেশি তারা ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক-বাহক হয়ে উঠতে পারবে, সর্বোপরি তারা ততো বেশি দেশপ্রেমিক মানুষ হিসেবেও গড়ে উঠতে পারবে। ঘৃণিতদের ঘৃণা করতে পারা ও শেখা কম গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এর প্রয়োজনীয়তা দেশ ও রাষ্ট্রের জন্য অপরিসীম। ভালো মানুষকে অনুসরণ করে শিশু, কিশোর, তরুণ ও যুবসমাজ ভালো মানুষ ও নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে, খারাপকে অনুসরণ করলে খারাপ হওয়ারই সম্ভাবনা বেশি থাকে। এই সত্য স্বীকার করলে জাতির নতুন প্রজন্মকে একাত্তরের ইতিহাসকে এর সমগ্রতায় শিখতে হবে, এর পাঠকে গ্রহণ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে একজন মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের ভূমিকা চিরকালই নতুন প্রজন্মের কাছে আদর্শ হয়ে থাকবে। একজন যুদ্ধাপরাধী ও তার দোসরের জীবন, আদর্শ ও রাজনীতি নতুন প্রজন্মের কাছে সব সময়ই ঘৃণার বিষয় হয়ে থাকতে হবে। তবেই দেশ ও জাতি মহৎ অর্জনের ধারায় সঠিকভাবে অগ্রসর হতে পারবে। ১৯৭১-এর যুদ্ধাপরাধী এবং তাদের দোসরদের বিচার শুরু হয়েছেÑ এটি আমাদের জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করার একটি সুযোগ এনে দিয়েছে। তবে সব অপরাধীকে আমরা বিচারের কাঠগড়ায় হয়তো দাঁড় করাতে পারবো না, কেননা তাদের অনেকেই এরই মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছে। কিন্তু তাদের সকলেরই কাজটি ছিল জাতির মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার বিরুদ্ধে। অতএব, মৃত ও জীবিত সকল যুদ্ধাপরাধী এবং তাদের দোসরদের জন্য আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের নিরন্তর ঘৃণা থাকতে হবে। মুক্তিযোদ্ধা মকছেদ আলীর ১ছেলে ও ২মেয়ে। তার এফএফ নং-১০৬২, গেজেট নং-০৩০৫০৫০০৩১, মুক্তিবার্তা বাংলাদেশ গেজেট২১২১। তিনি দ্রত ওইসব কলংকৃত যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলাকে কলংক মুক্ত এবং সোনার বাংলা দেখে মরতে চান।
মহাদেবপুরে ২৫টি স্বাস্থ্য সম্মত ল্যাট্রিন নির্মান
বাংলাদেশে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকা-ের পর যুদ্ধাপরাধীদের সর্বত্র ফিরিয়ে আনা হয়েছিল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে ব্যবহার করে, ভুলিয়ে দেয়ার চেষ্টা হয়েছিল ঐসব যুদ্ধাপরাধীদের সকল অপরাধ এবং অপকর্মকে, তাদেরকে মাঠে-ময়দানে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল ধর্মীয় পরিচয়ে, সাধু, ধর্মসাধক হিসেবে। কিন্তু তাদের ভূমিকা ১৯৭১ সালে ছিল ঘাতকের হোতা হিসেবে। ফলে অনেক বছর তরুণদের একটি বড় অংশ এদেরকে তাদের আসল চরিত্রে ভালোভাবে চিনতে পারেনি। এখন জানা ও চেনার সুযোগ হয়েছেÑ এরা আসলে কেমন মানুষ, দেশ ও জাতির সঙ্গে তারা ১৯৭১ সালে কেমন আচরণ করেছিল। তাদের সেসব কর্মকা- শুনে এখনকার নতুন প্রজন্ম যতো বেশি তাদের ঘৃণা করতে শিখবে ততো বেশি তারা ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক-বাহক হয়ে উঠতে পারবে, সর্বোপরি তারা ততো বেশি দেশপ্রেমিক মানুষ হিসেবেও গড়ে উঠতে পারবে। ঘৃণিতদের ঘৃণা করতে পারা ও শেখা কম গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এর প্রয়োজনীয়তা দেশ ও রাষ্ট্রের জন্য অপরিসীম। ভালো মানুষকে অনুসরণ করে শিশু, কিশোর, তরুণ ও যুবসমাজ ভালো মানুষ ও নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে, খারাপকে অনুসরণ করলে খারাপ হওয়ারই সম্ভাবনা বেশি থাকে। এই সত্য স্বীকার করলে জাতির নতুন প্রজন্মকে একাত্তরের ইতিহাসকে এর সমগ্রতায় শিখতে হবে, এর পাঠকে গ্রহণ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে একজন মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের ভূমিকা চিরকালই নতুন প্রজন্মের কাছে আদর্শ হয়ে থাকবে। একজন যুদ্ধাপরাধী ও তার দোসরের জীবন, আদর্শ ও রাজনীতি নতুন প্রজন্মের কাছে সব সময়ই ঘৃণার বিষয় হয়ে থাকতে হবে। তবেই দেশ ও জাতি মহৎ অর্জনের ধারায় সঠিকভাবে অগ্রসর হতে পারবে। ১৯৭১-এর যুদ্ধাপরাধী এবং তাদের দোসরদের বিচার শুরু হয়েছেÑ এটি আমাদের জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করার একটি সুযোগ এনে দিয়েছে। তবে সব অপরাধীকে আমরা বিচারের কাঠগড়ায় হয়তো দাঁড় করাতে পারবো না, কেননা তাদের অনেকেই এরই মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছে। কিন্তু তাদের সকলেরই কাজটি ছিল জাতির মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার বিরুদ্ধে। অতএব, মৃত ও জীবিত সকল যুদ্ধাপরাধী এবং তাদের দোসরদের জন্য আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের নিরন্তর ঘৃণা থাকতে হবে। মুক্তিযোদ্ধা মকছেদ আলীর ১ছেলে ও ২মেয়ে। তার এফএফ নং-১০৬২, গেজেট নং-০৩০৫০৫০০৩১, মুক্তিবার্তা বাংলাদেশ গেজেট২১২১। তিনি দ্রত ওইসব কলংকৃত যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলাকে কলংক মুক্ত এবং সোনার বাংলা দেখে মরতে চান।
মহাদেবপুরে ২৫টি স্বাস্থ্য সম্মত ল্যাট্রিন নির্মান
মোঃ আককাস আলী, নওগাঁ প্রতিনিধি :: নওগাঁর মহাদেবপুরে ত্রাণ পুনর্বাসন ও হাইসাওয়া প্রকল্পের অর্থায়নে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের অতিগুরুত্বপূর্ণ স্থানে অত্যাধুনিক ২৫টি ল্যাট্রিন তৈরী করা হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানাযায়, ত্রাণ পূনর্বাসন অধিদপ্তরের টিআর প্রকল্প থেকে প্রতিটি ল্যাট্রিনের জন্য ৭৫ হাজার এবং হাইসাওয়া প্রকল্পের অর্থায়ন প্রতিটি ল্যাট্রিনের জন্য ৩ লাখ টাকা করে মোট ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ব্যায়ে নির্মান করা হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের অধিনে ল্যাট্রিন গুলো নির্মান করা হয়। এব্যাপারে ইউএনও আখতারুজাজামান জানান, এলাকার এমপি ড. আকরাম হোসেন চৌধুরীর একান্ত প্রচেষ্ঠায় তাঁর সরকারী তহবিলের বিশেষ বরাদ্দ থেকে এ ল্যাট্রিন গুলো নির্মান করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, ল্যাট্রিন গুলো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নির্মান করা হয়েছে এ জন্য যে, এগুলো একদিকে যেমন এলাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে অন্যদিকে সাধারন মানুষের প্রাকৃতিক চাহিদা মেটানোর পাশা-পাশি স্বাস্থ্য সেবা সম্পর্কে সচেতন করার সুযোগ সৃষ্ঠি হয়েছে। ইতিমধ্যে মহাদেবপুর ছাড়া নির্বাচনী এলাকার বদলগাছী উপজেলাতেও একই ভাবে ২৪টি ল্যাট্রিন স্থাপন করা হয়েছে। ল্যাট্রিন গুলো দেখতে উপজেলা সদরের লিচু বাগান মোড় নামক স্থানে সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের কাছে জানতে চাইলে তারা ল্যাট্রিন দেখিয়ে দেন। মহাদেবপুর-নওগাঁ মহাসড়ক এর ওইস্থানের রাস্তার পূর্ব পার্শে ল্যাট্রিন চোখে পড়া মাত্রই তার সৌন্দর্য দেখে আমরাও চমকে উঠলাম। আর ভাবলাম এভাবেই সারাদেশে অত্যাধুনিক ল্যাট্রিন তৈরী হোক সেটি দেশের মানুষের মনের চাওয়া ডিজিটালের রুপকার জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের নিকট। এসময় স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা ডাঃ আতিকুর রহমান মুনু, ডাঃ এনামূল হক, খোকা মেম্বার, ভ্যান শ্রমিক হাসান আলী, বাদাম বিক্রেতা অছিম জানান, ল্যাট্রিনে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য পৃথক ৪টি পায়খানা, গোসল খানা, প্রস্বাব খানা, জেনারেটার রুম, সার্বক্ষনিক মটর দিয়ে পানি উত্তোলনের ব্যবস্থা রয়েছে। এব্যাপারে নওগাঁ-৩ আসনের এমপি ড. আকরাম হোসেন চৌধুরীর সাথে এক আলাপচারিতাই জানাযায়, শেখ হাসিনা সরকার উন্নত স্যানেটেশন তৈরীর লক্ষ্যে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচেছন। সেই ধারাবাহিকতায় মহাদেবপুর-বদলগাছীর জনগোষ্ঠীকে যেখানে-সেখানে প্রস্বাব-পায়খানা না করার জন্য ৪৯টি ল্যাট্রিন তৈরী করা হয়েছে যা সুন্দর স্বাস্থ্য সেবায় পরিণত হবে এবং পরিবেশ ভাল থাকবে বলে তিনি মনে করেন।#
ঋণ সুবিধা পেলে মহাজনদের খপ্পর থেকে রক্ষা পেত পাখা গ্রামের মানুষগুলোর জীবন জীবিকা
মোঃ আককাস আলী, নওগাঁ প্রতিনিধি :: গ্রামের নাম পাখা গ্রাম। এ নামের কোন মৌজা নেই, তবুও সবাই এ নামেই চেনে গ্রামটিকে। তালপাতার হাত পাখা তৈরি ও বিক্রি করা এখানকার বেশির ভাগ মানুষের পেশা। এ কারণে গ্রামটি এখন পাখা গ্রাম হিসাবেই পরিচিত হয়েছে। নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৭ কিঃ মিঃ দক্ষিন পূর্বে অবস্থিত ভালাইন গ্রাম। এ গ্রামটিকেই এখন সবাই চেনে পাখা গ্রাম হিসাবে। এ গ্রামের প্রবেশ মুখেই বসবাস করে প্রায় ৬০ টি পরিবার। এ ৬০ টি পরিবারের সবাই তাল পাতার হাত পাখা তৈরি ও বিক্রির সাথে জড়িত। এক কথায় এই ৬০ টি পরিবারের ৬ শতাধিক সদস্যের জীবন জিবিকা বাঁধা পড়েছে তাল পাতার হাত পাখায়। গতকাল শুক্রবার সকালে সরজমিনে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে প্রতিটি বাড়িতেই চলছে পাখা তৈরির কাজ। বাড়ির মেয়েরা ব্যস্থ পাখা তৈরির কাজে। পাখা তৈরি ও সুতা দিয়ে বাঁধার কাজটি মূলত বাড়ির মেয়েরাই করে থাকেন। পাখা তৈরির জন্য তালের পাতা সংগ্রহ, পাতা ছাটাই ও তৈরি পাখা বিক্রির দায়িত্ব পালন করে থাকেন বাড়ির পুরুষ সদস্যরা। গ্রামে ঢুকতেই দেখা যায় পাখার কারিগর আছমা নিবিষ্ট চিত্রে পাখা তৈরি করছে। এমন নিপুন ভাবে পাখা তৈরির কাজ শিখলেন কিভাবে? এ প্রশ্নের জবাবে গৃহ বধু আছমা জানান, তার বাবার বাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলার কিত্তিপুর গ্রামে। ৮ বছর আগে বিয়ে হয় পাখা গ্রামের যুবক সামছুল রহমানের সাথে। বিয়ের পর শ্বশুড় বাড়ির সবাইকে পাখা তৈরি করতে দেখছেন তাদের কাছ থেকেই শেখেছেন পাখা তৈরির কাজ। তালের পাতা কাটা ও ছাটাই থেকে শুরু করে কয়েক ধাপে শেষ হয় পাখা তৈরির কাজ। পাখা তৈরির শেষ ধাপে রয়েছে সুতা দিয়ে বাঁধাই। আছমা এখন প্রতিদিন একাই ১শ টি পাখা বাঁধাই করতে পারেন। এ থেকে প্রতিদিন তার প্রায় ১শ টাকা আয় হয়। পাখা তৈরির আয়ের টাকা দিয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি একমাত্র ছেলেকে লেখা পড়া করানোর স্বপ্ন দেখছেন আছমা। শুধু আছমায় নয় এখানকার গৃহবধু সুমী, খোরশেদা, সায়রা, সেফালী, কহিনুর, মালা, শিউলিসহ অনেকের পরিবারই পাখা তৈরি ও বিত্রির উপর নির্ভরশীল। পাখার কারিগর সুমী জানান, গরম কালে পাখার চাহিদা ও দাম দুটোই বাড়ে শীত কালে পাখার চাহিদা থাকেনা। এসময় অল্প দামে মহাজনদের কাছে তারা পাখা বিক্রি করতে বাধ্য হয়। পাখার কারিগররা জানান, একটি পাখা তৈরি করতে ৫ টাকা খরচ হয়। সেই পাখা ১টাকা লাভে ৬ টাকায় তারা মহাজনদের কাছে বিক্রি করে দেন। মহাজনরা রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন বাজারে ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি করেন। এতে পাখার মহাজনরা শুধু মাত্র পুঁজি খাটিয়ে বেশি লাভবান হলেও হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করে পাখা তৈরি করেও অধিক লাভ থেকে বঞ্চিত হন পাখার কারিগররা। পাখার মহাজন সাইফুল ইসলাম জানান, তিনি এবার শীত মৌসুমে পাখার কারিগরদের কাছ থেকে ৫ টাকা দরে ১০ হাজার পাখা ক্রয় করে রেখেছেন। এখন সেগুলোর পাইকারি মূল্য ১০ টাকায় উঠেছে। তবুও তিনি সেগুলো বিক্রি করেননি। আরো লাভের আশায় ধরে রেখেছেন। স্থানীয় সমাজ সেবক রুহুল আমিন ও এরশাদ আলী জানান, এখানকার কারিগররা শীত মৌসুমে মহাজনদের কাছ থেকে পাখার দাম ধরে আগাম টাকা নেয়। গরম কালে পাখার দাম বাড়লেও কারিগরদের লাভ হয়না। লাভের অংশ চলে যায় মহাজনদের ঘরে। সরকারী বে-সরকারী ভাবে সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা দিতে পারলে মহাজনদের খপ্পর থেকে রক্ষা পাবেন হাত পাখায় জীবন জীবিকা বাঁধা এই মানুষগুলো।#
নওগাঁয় শান্তিপূর্ণ হরতাল পালিত
মোঃ আককাস আলী, নওগাঁ প্রতিনিধি :: নওগাঁয় ২য় দিন সোমবার শান্তিপূর্ণ হরতাল পালিত হয়েছে। ভোর থেকেই সদরের বিভিন্ন পয়েন্ট চলে যায় পিকেটারদের দখলে। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা উপজেলা সদরে এসে বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে পিকেটিং করতে থাকে। নওগাঁ বাসস্ট্যান্ডের মাছের মোড়, মুক্তির মোড়, ব্রীজ মোড়, আদালত পাড়ার মোড় প্রভৃতি স্থানে চেয়ার, টুল ফেলে পিকেটাররা বসে পড়ে। পিকেটাররা স্কুল, কলেজ, সরকারী অফিস ও ব্যাংকে গিয়েও পিকেটিং করে। সকাল থেকে উপজেলা সদরের দোকান পাট বন্ধ ছিল। ভারী যানবাহন চলেনি। স্কুল খোলা থাকলেও নির্ধারিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। থানা পুলিশও পিকেটারদের সাথে অবস্থান নেয়। কিন্তু কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
নওগাঁয় আধুনিক পদ্ধতিতে মাছচাষ করে স্বাবলম্বী শত শত বেকার যুবক
মোঃ আককাস আলী, নওগাঁ প্রতিনিধি :: নওগাঁর পতœীতলায় আধুনিক পদ্ধতিতে মাছচাষে ব্যাপক সাড়া জেগেছে। উপজেলার মানুষের চাহিদা মিটিয়ে প্রতি বছর তিন হাজার ৩৬৯.৫০ মে. টন উদ্বৃত্ত মাছ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করে চাষীরা বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করছেন। এ পদ্ধতিতে মাছচাষ করে এখন শত শত বেকার যুবক স্বাবলম্বী। উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়ায়
দেশে প্রায় ১২ লাখ ৮৮ হাজার ২২২টি পুকুর রয়েছে। যার জলাধারের আয়তন এক লাখ ৪৬ হাজার ৮৯০ হেক্টর। এর মধ্যে বেশির ভাগ পুকুর বরেন্দ্র অঞ্চলে অবস্থিত। এ উপজেলাও বরেন্দ্র অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। উপজেলার আয়তন ৩৭৯.২৫ বর্গকিলোমিটার। এর মধ্যে ব্যক্তি মালিকানায় ৫ হাজার ৫৫৬টি ও সরকারি ১ হাজার ২৫৮টি মিলে মোট ৬ হাজার ৮৩৪টি ছোট-বড় পুকুর রয়েছে। এ ছাড়া বিল/জলমহাল ৫টি ও প্লাবনভূমি ৫টি রয়েছে। এগুলোর মোট আয়তন দুই হাজার ২০৮ হেক্টর। এছাড়া আত্রাই নদীর আয়তন ২ হাজার ৩৩২ হেক্টর। উপজেলায় মৎস্যচাষীর সংখ্যা ৪ হাজার ৯১০ জন।
সূত্র জানায়, বর্তমানে ওইসব জলাশয়ে প্রতি বছর ৭ হাজার ৪৭৭,৫০ মে. টন মাছ উৎপাদন হয়। উপজেলার ২ লাখ ২৯ হাজার ৮৮০ জন
(২০১১ সালে আদমশুমারি অনুসারে) লোকের জন্য মোট মাছের চাহিদা ৪ হাজার ১৩৮ মে. টন। এ চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত থাকে ৩ হাজার ৩৩৯,৫০ মে. টন। এ উদ্বৃত্ত মাছগুলো ঢাকা, রংপুর, দিনাজপুর, জয়পুরহাট, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বিক্রি হয়ে থাকে বলে মৎস্যচাষীরা জানান। এ মাছচাষকে কেন্দ্র করে উপজেলায় ৪টি বরফ কল, ব্যক্তি মালিকানায় তিনটি এবং সরকারি একটি মৎস্যরেনু উৎপাদন খামার এবং হ্যাচারি গড়ে উঠেছে।
এলাকার প্রবীণ মাছচাষী ওসমান আলী (৭০) জানান, অত্র এলাকায় ১৯৮৪/৮৫ সালে কুষ্টিয়ার আবুল কাসেম নামে এক ব্যক্তি সর্বপ্রথম নজিপুর এলাকায় এসে বিভিন্ন মজা পুকুর মালিকদের কাছ থেকে লিজ নিয়ে পরিষ্কার করে এ আধুনিক পদ্ধতিতে মাছচাষ শুরু করেন। তার দেখাদেখি এলাকার কিছু পুকুর মালিক নিজেই এবং কিছু যুবকও পুকুর লিজ নিয়ে মাছচাষ শুরু করেন। এরপর মাছচাষের গতানুগতিক ধারা বাদ দিয়ে আধুনিকভাবে মাছচাষ এ উপজেলাসহ আশপাশের উপজেলা ও জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।
তবে তিনি জানান, এতে করে ময়া, চেলা, পুঁটি, কৈ, মাগুর, শিং, টাকি, চ্যাং, শোল, গজার, বোয়াল, খড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পুকুর থেকে ক্রমান্বয়ে বিলুপ্ত হতে শুরু করে। এসব মাছ এখন চোখে পড়ে না বললেই চলে। তবে সিলভার কার্প, রুই, কাতলা, মৃগেল, জাপানি রুই, পাঙ্গাস, তেলাপিয়াসহ বেশ কিছু মাছের চাষ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এতে চাষীরা লাভবানও হচ্ছেন। কিন্তু বরেন্দ্র অঞ্চলে মিঠাপানির ওইসব মাছ বিলুপ্তির ফলে জীববৈচিত্র্যের সমন্বয়ে ঘাটতি শুরু হয়েছে।
মাছচাষী রণজিৎ, আবু বকরসহ অনেকেই জানান, আধুনিক পদ্ধতিতে মাছচাষে সুষম সার, খাবার নিয়মিত ব্যবহার করতে হয়। এ ছাড়াও শ্রমের দাম আগের থেকে অনেক বেড়েছে। মাছের উৎপাদন খরচও আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। ফলে মাছের দাম বেড়েই চলেছে। আগের তুলনায় মাছচাষীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় পুকুর লিজ নেয়ার প্রতিযোগিতাও বেড়েছে। তারা জানান, স্থান ও পুকুরের মান অনুসারে প্রতি বিঘা পুকুর/জলাশয়ের বার্ষিক লিজের মূল্য বর্তমানে ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকায় উঠেছে। তবে এ খরা মৌসুমে চাষযোগ্য পুকুরে আশানুরূপ পানি না থাকায় মাছ চাষে বিঘœ ঘটছে বলে চাষীরা জানান।
এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা শ্রী সুপদ চন্দ্র জানান, আধুনিক পদ্ধতিতে মাছচাষ করে এলাকার শত শত বেকার যুবক স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন। ###