শনিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১১

পাবনার একটি পরিবারের ৮ সদস্যের ৫ জনই প্রতিবন্ধী

বাঘা নিউজ  ডটকম, এস এ আসাদ, পাবনা ৩ ডিসেম্বর : চরম অসহায়াত্বের মধ্যে দিয়ে জীবন চালিয়ে যাচ্ছেন পাবনার সুজানগর উপজেলার মানিকহাট ইউনিয়নের ভিটবিলা গ্রামের প্রতিবন্ধি আব্দুল করিম (৬৫)। তার পরিবারের মোট ৮ সদস্যের মধ্যে পাঁচজনই প্রতিবন্ধী। তাদের অসহায় জীবন যাত্রার দিকে কারোর নজর দেয়ার সময় নেই। দুইজন সদস্যের নামমাত্র প্রতিবন্ধি ভাতা সরকারী ভাবে দেয় হলেও সেটা পেতে অনেক কষ্ট পোহাতে হয় এই পরিবারকে। স্থানীয় একটি উন্নয়ন সংগঠন একটি মুদি দোকানের ব্যাবস্থা করে দেয়ায় কোন ভাবে চলছে তাদের সংসার।
জানা জায়, বাবা-মায়ের সংসারে আব্দুল করিম মাত্র ৭ বছর বয়সে দুই পা শুকিয়ে প্রতিবন্ধি হয়ে পরে। সামান্য একটু লেখাপড়ার পর পায়ের সমস্যার কারনে বেশী দূর এগিয়ে যেতে পারেনি। আব্দুল করিমের বাবা-মা মারা যায়। ভাইয়েরা প্রতিবন্ধি ভেবে আলাদা হয়ে পরে। পার্শ্ববর্তী শোলাকোরা গ্রামে বিয়ে করে সংসার শুরু করে করিম। বিযের তিন বছর পর জন্ম নেয় তার বড় ছেলে আব্দুর বাজ্জাক। পরবর্তীতে জন্ম নেয় একটি মেয়ে। নাম রাখা হয় তারা খাতুন। একে একে জন্ম নেয় ঝন্টু আর সন্টু নামের দুই ছেলে। সবাই সম্পূর্ন সুস্থ্য ও স্বাভাবিক। এই তিনজনেরই বয়স ৩/৪ বছর থেকেই আস্তে আস্তে পা শুকিয়ে যেতে শুরু করে। ক্রমান্নয়ে দাড়াতে পারে না। এভাবেই জন্ম নেয় একটি প্রতিবন্ধি পরিবারের। আর এই পরিবারের একজন প্রতিবন্ধী অভিভাবক আব্দুল করিম। ছেলে মেয়েরা অসুস্থ হতে শুরু করলে একে একে তার ৭ বিঘা চাষের জমি বিক্রি করেও সুস্থ করতে পারেনি সন্তানদের। চরম অসহায় হয়ে পরে আব্দুল করিম। ফলে বড় ছেলেকে লেখাপড়া করাতে পারেনি তিনি। পরে সংসারের অভাব অনটনের কারনে একমাত্র সুস্থ ছেরে রাজ্জাককে দিয়ে ভ্যান চালিয়ে কোনভাবে সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন।
তিন ছেলে এক মেয়ের মধ্যে দুই ছেলে সন্টু (১৮), ঝন্টু (১৪), তারা খাতুন (১৬) শারীরিক প্রতিবন্ধী। একমাত্র ভাল ছেলে আব্দুর রাজ্জাকের সন্তান রাজিব সেখ (১৩) দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। ভ্যান চালিয়ে কোন রকমে জীবিকা নির্বাহ করত ৮ সদস্যের প্রতিবন্ধী পরিবারের অভিভাবক আব্দুল করিম। শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় জোরে ভ্যান চালাতে না পারায় তার রোজগার হতো খুব কম। দুই জন ভ্যান চালিয়ে যা আয় করতো তা দিয়ে সংসার চলত এক বেলা খেয়ে অন্য বেলা না খেয়ে। সামান্য রোজগার দিয়ে কোন রকমে জীবিকা নির্বাহ করত প্রতিবন্ধী পারিবারটি।
এ অবস্থায় স্থানীয় মাদার তেরেসা প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংগঠন আব্দুল করিম কে ২০১০ সালে বাড়ির সামনে রাস্তার পাশে একটি মুদি দোকান করে দেয়। বর্তমানে দোকান চালিয়ে কোন ভাবে অসহায়াত্বের মধ্য দিয়ে সংসার চালিয়ে যাচ্ছে। পরে ওই সংগঠনটির সহযোগিতায় পরিবারের সকল প্রতিবন্ধী সদস্য সমাজ সেবা অফিস থেকে প্রতিবন্ধী সনদপত্র লাভ করে এবং পরিবারের দুই সদস্য সরকারী প্রতিবন্ধী ভাতা পাওয়ার শুরু করে।
এরপর চলতি বছরে সুজানগর উপজেলা কার্যালয় থেকে পরিকল্পনা মন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব:) এ.কে.খন্দকার ওই পরিবারের সদস্যদের জন্য দুইটি হুইল চেয়ার প্রদান করেন।
এ ব্যাপারে প্রতিবন্ধি আব্দুল করিম বলেন, আমার ৮ সদস্যের পরিবারে ৫ জনই প্রতিবন্ধি। তারপরেও সরকার মাত্র ৩০০ টাকা করে দুইজনকে যে ভাতা দেয়, সেটা উত্তোলন করতে ব্যাংকে যেতে প্রায় খরচ হয়ে যায়। মাঝে মধ্যে উপজেলায়ও যেতে হয়। সরকারীভাবে যেটা পাওয়া যায় তার অধিকাংশই রাস্তায় খরচ হয়ে যায়। দোকান থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে আর বড় ছেলের রোজগার দিয়ে কোনভাবে চলতে হচ্ছে আমাদের।
এ প্রসঙ্গে প্রতিবেশী শাহজাহান আলী খান বলেন, সৃষ্টিকর্তা যেন এ ধরনের কষ্ট কাউকে না দেয়। করিমের যে জমি ছিল তা দিয়ে তার সংসার ভাল ভাবেই চলতো। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস নিজ সন্তানদের সুস্থ করার জন্যে একে একে ৭/৮ বিঘা জমি বিক্রি করেও সূস্থ করতে পারেনি। পরিবারটিকে দেখলে খুবই কষ্ট লাগে।
Ruby