মঙ্গলবার, ৩ জানুয়ারী, ২০১২

রাবি’তে গোলাগুলি : বুয়েট অস্থির : কুয়েট বন্ধ

বাঘা নিউজ ডটকম :: যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও পুলিশের সঙ্গে সাধারণ ছাত্রদের দফায় দফায় সংঘর্ষে বন্ধ হয়ে গেছে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ছাত্রকে মারধরের ঘটনায় অস্থির বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। এ ঘটনায় অভিযুক্ত দু’ ছাত্রকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অচল হয়ে আছে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এদিকে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে আহত হয়েছেন ৩ ছাত্রলীগ কর্মী। আটক করা হয়েছে একজনকে।
স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে জানান, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ও প্রশাসনের সঙ্গে বিরোধের জের ধরে গতকাল বহিরাগত যুবলীগ, ছাত্রলীগ, পুলিশ ও সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ ঘটেছে। প্রায় ৫ ঘণ্টাব্যাপী এ সংঘর্ষ চলাকালে গোটা ক্যাম্পাস রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এসময় পুলিশ, শিক্ষকসহ প্রায় ২৫ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ৮ ছাত্রকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে সকল ছাত্রছাত্রীকে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বার্ষিক ভোজসভায় নিম্নমানের খাবার পরিবেশনকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষ হয়েছে বলে জানা গেছে। বর্তমানে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
পুলিশ ও ছাত্ররা জানায়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ৩১শে ডিসেম্বর ও ১লা জানুয়ারি অমর একুশে হলে বার্ষিক প্রীতিভোজের আয়োজন করা হয়। এ জন্য মোট সাড়ে ৮ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। সেখানে শিক্ষার্থীদের জন্য তিন বেলার খাবারের ব্যবস্থা রাখা হয়। প্রথম দিন থেকেই খাবারের মান ছিল নিম্নমানের। ছাত্ররা জানায়, মাথাপিছু ৮৮৬ টাকা বরাদ্দ করলেও খাবারের মান অনুযায়ী তার বরাদ্দ হয় তিন থেকে চার শ’ টাকা। এ খাবার প্রস্তুত ও সরবরাহের দায়িত্বে ছিল ছাত্রলীগ নেতা মুন্না, আবির, কাজল, হিমু, জুবায়ের, সুমন, মুকুল, নীহার, নয়ন, সোহান ও ওয়ারিনসহ ১৫ সদস্যের একটি টিম। গত রোববার রাতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খাবারের মান নিয়ে ছাত্রলীগের নেতাদের কথা কাটাকাটি হয়। উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের এক পর্যায়ে হাসান নামের এক ছাত্রের মাথায় সেভেন আপের বোতল দিয়ে আঘাত করা হয়। এতে তার মাথা ফেটে যায়। রাতে খাবার অবশিষ্ট থাকায় গতকাল দুপুরে হলে থাকা ছাত্রদের খাবারের ব্যবস্থার জন্য মোবাইল করে ডেকে আনা হয়। ছাত্ররা খাওয়া-দাওয়ার শেষ পর্যায়ে এসে ছাত্রলীগের ওই নেতারা বলে, তোদের কত খাওয়া লাগে আজ খেয়ে নে। এর কিছুক্ষণ পর ফুলবাড়িগেটসহ আশপাশের এলাকা থেকে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বহিরাগত ক্যাডাররা রামদা, চাপাতি, লোহার রড ও লাঠিসোটা নিয়ে ক্যাম্পাসে এসে ছাত্রদের ওপর হামলা চালায়। এতে রাসেল, মঞ্জু, সুজাত, রাসেল লেনিন, শুভ, আলাউদ্দিন, কমল, সেতু, শাহাদত, শুভসহ ১৮ জন আহত হয়। এদেরকে খুলনা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। এসময় শিক্ষকরা এগিয়ে এলে বহিরাগতরা তাদের ওপরও হামলা চালায়। এতে ছাত্রকল্যাণ পরিচালক প্রফেসর শিবেন্দ্র শেখর সিকদার, ইলেকট্রিক্যালের শিক্ষক ড. রফিকুল ইসলাম ও ইলিয়াস ইনাম কোয়েল, মেকানিকেলের শিক্ষক ড. মো. মাসুদ ও আবদুর নুর তুষার আহত হন। বিকাল চারটার দিকে ছাত্রলীগের সঙ্গে পুলিশ এক হয়ে সাধারণ ছাত্রদের ওপরে চড়াও হলে উভয় পক্ষের মধ্যে আবারও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এসময় বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. আলমগীর হোসেনের বাসভবন, গার্ড রুম, ভিসির গাড়ি (ঢাকা মেট্রো গ ১৩-২৮০০), কুয়েটের গাড়ি (খুলনা মেট্রো ঘ ১১-০০৯৫) ভাঙচুর করে। ভিসির বাসভবন ভাঙচুর করার সময় ভিসির স্ত্রী মেহেরুন নেসা লতা ও তার একমাত্র সন্তান ৫ বছরের শিশু পুত্র অনয় আহত হয়। তাদেরকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্র জানায়, গত ৩১শে ডিসেম্বর ও ১লা জানুয়ারি অমর একুশে হলে বার্ষিক প্রীতিভোজের আয়োজন করা হয়। সাড়ে ৮ লাখ টাকা বরাদ্দর পরও নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করা হলে সাধারণ ছাত্ররা প্রতিবাদ করে ডাইনিং হল ভাঙচুর করে। হলের দায়িত্বে থাকা ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ সাধারণ ছাত্রদের ওপর ক্ষিপ্ত হয় এবং তাদের হলের মধ্যে আটকে রাখে। রাতেই পুলিশ ক্যাম্পাসে অবস্থান নিলেও কোন অ্যাকশনে না যাওয়ায় এত বড় ঘটনা ঘটেছে। সূত্র জানায়, ঘটনার সময় দায়ের কোপ এবং মারপিটে আহত আটজন ছাত্রকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ঘটনার পর উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে বিকাল ৪টার দিকে কুয়েট কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে। একই সঙ্গে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে সকল শিক্ষার্থীকে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়। এই নির্দেশ পাওয়ার পর বিকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে শুরু করে। তবে সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা পর্যন্ত অনেক ছাত্র ইট পাটকেল ও লাঠিসোটা নিয়ে বিভিন্ন ছাত্রহলের ছাদে অবস্থান করছিল।
কুয়েটের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আলমগীর হোসেন জানান, কতিপয় ছাত্র উদ্দেশ্যমূলকভাবে একুশে হলের ডাইনিং রুমে নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করা হয়েছে এই অজুহাতে গোলযোগের সৃষ্টি করে। তারই জের ধরে সোমবার ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটেছে। এই অবস্থায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কায় কুয়েট অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা ছাড়া কোন উপায় ছিল না।
খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হুমায়ূন কবীর জানান, দুপুর একটার দিকে কুয়েটে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে বেশ কয়েকজনজন আহত হয়েছেন। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি জানান, ঘটনার সময় ডিসি নর্থ মোস্তফা কামাল ইটের আঘাতে আহত হয়েছেন। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
অস্থির বুয়েট
স্টাফ রিপোর্টার জানান, অস্থির হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। এক ছাত্রকে মারধরের ঘটনায় এ অস্থিরতা। টানা তিন ধরে বুয়েটে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ক্যাম্পাসে বিপুল সংখ্যক অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে মেটেরিয়াল অ্যান্ড মেটালার্জিক্যাল বিভাগের অষ্টম ব্যাচের ছাত্র সুজিত সাহা (সুজিত), একই বিভাগের ছাত্র সাইফুল্লাহ শিকদারকে (মিঠুন) বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বোর্ড অব রেসিডেন্স অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির বৈঠকে গত রাতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক হাবিবুর রহমান। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আরিফ রায়হান (দ্বিপ)-এর সাময়িক বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। শনিবার বিকাল থেকে প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী টানা অবরোধ করছেন ছাত্রলীগের ৩ কর্মীকে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে। শিক্ষার্থীদের অবরোধের মুখে অচল হয়ে পড়েছে বুয়েটের শিক্ষা কার্যক্রম। শনিবার শেষ বর্ষের ছাত্র তৌশিফ আহমেদকে মারধর করেন ছাত্রলীগের ৩ কর্মী। ওই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট গতকাল বিকালে জমা দেন কমিটির প্রধান। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক এসএম নজরুল ইসলামের কাছে গতকাল বিকালে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেন কমিটি প্রধান অধ্যাপক আবদুর রশিদ। রিপোর্ট পাওয়ার পরই বৈঠকে বসে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বোর্ড অব রেসিডেন্স অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটি। রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কমিটির বৈঠক চলছিল। বিদায়ী ব্যাচের এক শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনায় বুয়েটের মেটেরিয়াল অ্যান্ড মেটালার্জিক্যাল বিভাগের ২০০৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল্লাহ সিকদার মিঠুন ও সুজিত সাহা এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০০৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী আরিফ রায়হান দ্বীপকে রোববার ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার করা হয়। একই সঙ্গে সভায় চার সদস্যের তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। এদিকে শিক্ষার্থীরা টানা অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ক্যাম্পাসের আশপাশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল বিকালে বুয়েট ক্যাফেটেরিয়ায় শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করেন। এতে ৩ ছাত্রলীগ কর্মীকে স্থায়ী বহিষ্কার ও আহত ছাত্রের ব্যয়ভার বহনসহ কয়েকদফা দাবি জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক এসএম নজরুল ইসলাম বলেন, পরিস্থিতি জটিলের দিকেই যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। আমি তদন্ত রিপোর্ট পেয়েছি। ভিসি বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে ৩ ছাত্রকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছিল। তদন্ত রিপোর্টে সন্দেহাতীতভাবে ২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ভিসি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী প্রথমেই কাউকে স্থায়ী বহিষ্কার করা যায় না।
যা আছে রিপোর্টে: রোববার সকালে সাবেক ডিন অধ্যাপক আবদুর রশিদ সরকারকে নেতৃত্বে ৪ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- অধ্যাপক কামরুল ইসলাম, অধ্যাপক এম শহিদুল হাসান ও অধ্যাপক সাইদুর রহমান। তদন্ত কমিটি কমপক্ষে ১৫ জনের সাক্ষ্য নিয়েছে। তারা কয়েকটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সাক্ষ্য নিয়েছেন কয়েকজন শিক্ষকেরও। সাক্ষী-প্রমাণের ভিত্তিতে মেটেরিয়াল অ্যান্ড মেটালার্জিক্যাল বিভাগের অষ্টম ব্যাচের ছাত্র সুজিত সাহা (সুজিত), একই বিভাগের ছাত্র সাইফুল্লাহ শিকদার (মিঠুন) ঘটনার আগে ও পরে সরাসরি জড়িত বলে বলা হয় রিপোর্টে। কমিটি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আরিফ রায়হানের (দ্বীপ) ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পায়নি। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বোর্ড অব রেসিডেন্স অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির সভায় ভিসি অধ্যাপক এসএম নজরুল ইসলাম তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পড়ে শোনান। এরপর রিপোর্টের পক্ষে বিপক্ষে শিক্ষকরা বক্তব্য রাখেন। রিপোর্টে বলা হয়, ২৮শে ডিসেম্বরে বুয়েটের বিদায়ী ব্যাচ আয়োজিত কনসার্টে ঢোকার জের ধরে জুনিয়র ব্যাচের কয়েকজনের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। শনিবার দুপুরে নজরুল ইসলাম হলের ২০১ (ক) কক্ষের আবাসিক ছাত্র তৌশিফ আহমেদ ঈশানকে ব্যাট ও রড দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয় ৮ ব্যাচের সুজিত, মিথুনের নেতৃত্বে। রিপোর্টে আরও বলা হয়, শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেছে স্বতঃস্ফূর্তভাবেই। শিক্ষার্থীরা ৩ ছাত্রের বহিষ্কার দাবি করার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যথাযথভাবে গ্রহণ করে। তারপর এর সঙ্গে অশুভ চক্র জড়িয়ে পড়ে বলে জানিয়েছেন কমিটির একজন সদস্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বলেন, তদন্ত কমিটির রিপোর্টে দুই ছাত্রকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সরাসরি প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের আজীবনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। একজনের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
আরেকটি তদন্ত কমিটি: ক্যাম্পাসের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আরেকটি কমিটি গঠন করা হবে। ভিসি জানিয়েছেন, এ কমিটি শুধু এক ছাত্রকে মারধরের বিষয়টি তদন্ত করেছে। কেন পরিস্থিতি এত বড় আকার নিলো তা তদন্ত করতে আরেকটি কমিটি গঠন করা হবে বলে জানান ভিসি। র‌্যাগ ডে উপলক্ষে গত বুধবার আয়োজিত কনসার্টে পেছন থেকে সামনে যাওয়াকে কেন্দ্র করে সিনিয়র ও জুনিয়র শিক্ষার্থীদের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। গত বৃহস্পতিবার তাদের মধ্যে বিষয়টির মীমাংসা হয়ে যায়। এরপরও শনিবার দুপুরে ছাত্রলীগের ওই তিন কর্মী তৌশিফকে পেটান। ওই ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসেন সিনিয়র শিক্ষার্থীরা। ছাত্রদের সঙ্গে যোগ দেন ছাত্রীরাও। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২ ছাত্রলীগ কর্মীকে বহিষ্কার করলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। শনিবার শেষ বর্ষের ছাত্র তৌশিফ আহমেদকে মারধর করেন মেটেরিয়াল অ্যান্ড মেটালার্জিক্যাল বিভাগের অষ্টম ব্যাচের ছাত্র সুজিত সাহা, একই বিভাগের ছাত্র সাইফুল্লাহ শিকদার ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আরিফ রায়হান। এরা তিনজনই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তৌশিফকে হকিস্টিক ও রড দিয়ে উপর্যুপরি পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়। এতে তার পা ভেঙে যায়। তাকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ওই ঘটনায় শেষ বর্ষ ও মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক হাবিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ৩ ছাত্রলীগ কর্মীকে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রদের অবস্থান বাড়তে থাকে। তারা তাদের দাবি আদায়ে বিকাল ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক হাবিবুর রহমানসহ অর্ধ শতাধিক শিক্ষককে অবরোধ করে। ভিসি ক্যাম্পাসের বাইরে থাকায় কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি প্রো-ভিসি। প্রো-ভিসি দায়ীদের বহিষ্কারের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের বললেও তারা মেনে নেয়নি। টানা তাদের অবস্থান চলে। রোববার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ভিসি তিন ছাত্রলীগ কর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার (৬মাস) করে তদন্ত কমিটি গঠন করেন। এরপর প্রো-ভিসির কার্যালয়ের সামনে থেকে সাময়িক সময়ের জন্য অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা। প্রো-ভিসি শিক্ষকদের নিয়ে সকাল ১১টার দিকে কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যান। প্রো-ভিসি অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বলেন, ক্যাম্পাস এখনো স্বাভাবিক হয়নি। ছাত্রদের অবস্থান রয়েছে। তবে এখন শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম বলে জানান তিনি।
শিক্ষার্থীদের অবস্থান চলছে: ২ ছাত্রলীগ কর্মীকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হলেও অবরোধ প্রত্যাহার করেননি শিক্ষার্থীরা। রাত ৯টার দিকেও কয়েক হাজার শিক্ষার্থী অবস্থান করছিলেন রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে। শিক্ষার্থীরা জানান, আমরা আমাদের দাবি জানিয়েছি। প্রশাসন ২ ছাত্রলীগ কর্মীকে বহিষ্কার করেছে তা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই জানায়নি। প্রশাসন আমাদের বিষয়টি জানালে এরপরই আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবো।
আপিলের সুযোগ: বহিষ্কৃত ২ ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের নেয়া সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তাদের বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক কাউন্সিল বরাবর আপিল করতে হবে। তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫(এ) এর ২২ ও ২৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়।
রাবি-তে গোলাগুলি
রাবি প্রতিনিধি জানান, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যাল শাখা ছাত্রলীগের দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলিবিনিময়ের ঘটনা। ছাত্রলীগের তিন কর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন ছাত্রলীগকর্মী খালিদ হাসান নয়ন (ব্যবস্থাপনা), সুদিপ্ত সালাম (ব্যবস্থাপনা), রাজু (ইতিহাস)। তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় আহত অবস্থায় সুদিপ্ত সালামকে আটক করেছে পুলিশ। রোববার রাত ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে এ ঘটনা ঘটে। সূত্র জানায়, রাবি শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের উদ্দেশে সদ্যঘোষিত ‘হল সম্মেলন প্রস্তুত কমিটি’ গঠিত হয়। সেখানে নাসিম হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন মামলার আসামি ছাত্রলীগ ক্যাডার খালিদ হাসান নয়ন কমিটিতে জায়গা না পাওয়ায় এ বিরোধের সূত্রপাত হয়। একই ঘটনায় বঙ্গবন্ধু হল শাখার ‘সম্মেলন প্রস্তুত কমিটি’তে সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের নেতা সেলিম আহ্বায়ক মনোনীত হওয়ায় নয়ন সেলিমের বিরোধিতা করে। এতে গ্রুপিং আরও পরিষ্কার হয়। এরই সূত্র ধরে গত রোববার গভীর রাতে নয়ন ও সেলিমের মধ্যে কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে সংঘর্ষ বাঁধে। এ সময় সেলিমের সমর্থকরা নয়নকে হাতুড়ি, লোহার রোড ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর আহত করে। এ ঘটনার জের ধরে গভীর রাতে ওই হলে উভয় পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় হলে তাদের মধ্যে ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়া ও মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপুল সংখ্যক পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। প্রক্টর ও পুলিশ সদস্যরা রাত সাড়ে তিনটার দিকে ওই হলে তল্লাশি চালিয়ে নয়নের রুম থেকে একটি অস্ত্র ও সিঁড়ির নিচ থেকে কয়েকটি ককটেল উদ্ধার করে। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
Ruby