মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে আর্থিক সহযোগিতার জন্য আগামী সেপ্টেম্বরে রাশিয়া সফরে যাবেন প্রধানমন্ত্রী

বাঘা নিউজ ডটকম :: রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় হবে প্রায় পনের হাজার কোটি টাকা। এর ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশই রাশিয়া যোগান দেবে। শেখ হাসিনা আগামী সেপ্টেম্বরে রাশিয়া সফরে যাবেন। রাশিয়া এখন এই আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দিতে পারে।
বিজ্ঞান, তথ্য প্রযুক্তি ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী এপ্রিলের মধ্যে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে অর্থনৈতিক চুক্তি হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগেই রাশিয়া সফরে যাওয়ার কথা ছিল। রাশিয়ায় নির্বাচন এবং এ নিয়ে অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার কারণে সফর পিছিয়ে যায়। একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে বলিষ্ঠভাবে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিল রাশিয়া। বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে তারা গভীরভাবে আগ্রহী। প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে অন্যসব চুক্তি শেষ করতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে চারটি চুক্তি হয়েছে। ফেব্রুয়ারির ২৫ তারিখে বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান রাশিয়া যাচ্ছেন। দু’ দেশের মধ্যে রেডিয়েশন কন্ট্রোল অথরিটি গঠন করা হবে তখন। এ সংক্রান্ত আইনের খসড়া আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-এর কাছে পাঠানো হয়েছে। ১ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট স্থাপন, এর রেডিয়েশন, সেফটি কন্ট্রোলে রাশিয়া বাংলাদেশকে সব রকম সহযোগিতা দেবে। দুটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রয়োজনীয় অর্থায়নে দুটি পৃথক চুক্তি সম্পাদন, মানবসম্পদ উন্নয়নে সহযোগিতা দেবে রাশিয়া। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, দীর্ঘমেয়াদে প্রয়োজনীয় জ্বালানি রাশিয়া সরবরাহ করবে। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসমূহের তেজস্ক্রিয় বর্জ্য রাশিয়াই ফেরত নেবে। সবচেয়ে স্বস্তিদায়ক হলো- এতে ঝুঁকির মাত্রা শূন্যের কোঠায়। জাপানের ফুকুশিমা দুর্ঘটনার পর নিউক্লিয়ার নিরাপত্তা নিয়ে বিভিন্ন দেশ শঙ্কিত হয়ে পড়ে। গত বছরের ২০-২৪শে জুন আইএইএ কর্তৃক আয়োজিত নিউক্লিয়ার নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে ফুকুশিমার ঘটনাকে দুর্ঘটনা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প একটি নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব এনার্জি অপশন মর্মে সর্বজনীন ঐকমত্য সৃষ্টি হয়। বিশ্বের ৩০টি দেশ এরই মধ্যে পরমাণু থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। বাংলাদেশ হবে ৩১তম দেশ। স্বল্পমূল্যে বিদ্যুৎ প্রাপ্যতার পাশাপাশি পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট নির্মাণ বাংলাদেশের জন্য হবে অত্যন্ত মর্যাদার ও গৌরবের। প্রতিবেশী ভারতে ৬০ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট নির্মাণ করা হয়েছে ও নির্মাণাধীন রয়েছে। এরমধ্যে পশ্চিমবঙ্গের একটি বৃহদাকার প্ল্যান্ট নির্মিত হচ্ছে। রাশিয়া ভারতে প্ল্যান্টের মোট উৎপাদন ব্যয়ের ৮৫ শতাংশ ও ভিয়েতনাম ৯০ শতাংশের যোগান দেবে। প্ল্যান্ট স্থাপনের ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রমে আইএইএ, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, কোরিয়ার বিজ্ঞানীরা সন্তোষ প্রকাশ করেছে। বিভিন্ন সময়ে তারা সরজমিন পরিদর্শন করে গেছেন।
বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও যোগাযোগ মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান মানবজমিনকে বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের মাধ্যমে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের অঙ্গীকার পূরণ করা হবে। স্বল্পমূল্যে বিদ্যুৎ সহজলভ্য হবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ সংস্থা, বিজ্ঞানীদের মাধ্যমে এর সেফটি ইঞ্জিনিয়ারিং প্যারামিটারসমূহ নির্ধারণ করে তা নিশ্চিত করা হবে। আইএইএ এবং যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, কোরিয়ার বিশেষজ্ঞরা পূর্ণ নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে, এ ব্যবস্থা হবে সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত, নিরাপদ। এখানে পাঁচ স্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে যে অর্থ ব্যয় হয় এ ক্ষেত্রে ব্যয় পড়বে তার এক তৃতীয়াংশ। এক ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লায় যেখানে ৭ টাকা, সেখানে পরমাণু বিদ্যুতের খরচ পড়বে ২ টাকা। রাশিয়া তেজস্ক্রিয় বর্জ্য নিয়ে যাবে বলে আমাদের ঝুঁকি থাকছে না। তারা অত্যন্ত সহজশর্তে দীর্ঘমেয়াদি কারিগরি ও আর্থিক সহযোগিতা দিচ্ছে যা অন্য উৎস থেকে পাইনি। মন্ত্রী বলেন, ২০১৩ সালে নির্মাণকাজ শুরু হবে। শেষ হবে ২০১৮ সালে।
Ruby