রবিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

নওগাঁয় সুগন্ধি চালে ব্যবহৃত হচ্ছে রাসায়নিক পদার্থ

মোঃ আককাস আলী, নওগাঁ প্রতিনিধি :: শস্য ভান্ডার হিসাবে খ্যাত নওগাঁ জেলায় ব্যাপক ধানের ফলন হয়। এ কারণে গড়ে উঠেছে হাজার হাজার চাল তৈরির বয়লার। নওগাঁয় উৎপাদিত চাল রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি করা হয়। অথচ বর্তমানে রাসায়নিক পদার্থ মেশানো চালে বাজার সয়লাব। চাল ঝকঝকে ও সুগন্ধিত রাখার জন্য এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা চালে রাসায়নিক পদার্থ মেশাচ্ছে। রাসায়নিক পদার্থ মেশানো এ চাল দীর্ঘদিন খেলে মানুষের শরীরে ক্যান্সারসহ নানা ধরনের রোগ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের বিপুলসংখ্যক রাইস মিলে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মেশানো চাল দীর্ঘদিন ধরে বাজারজাত করে আসছে চাল ব্যবসায়ীরা। অভিযোগ রয়েছে, মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর এই কর্মকা- প্রতিরোধে সরকারের কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেই। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চাল সুগন্ধ ও পরিস্কার রাখতে এক শ্রেণীর চালকল মালিক চালে সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড ব্যবহার করছে। মোটা চাল বিআর ২৮ কয়েকবার ছাঁট দিয়ে চিকন চাল করা হচ্ছে। এ চাল সুন্দর ও ঝকঝকে দেখাতে কলমালিকরা চালে সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড, টুথপেস্টসহ বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ একত্রে পানিতে মিশিয়ে চালে দেয়। রাসায়নিক পদার্থ মেশানোর ক্ষেত্রে হ্যাসকিং মিল মালিকরা নিজস্ব পদ্ধতি ব্যবহার করে। হ্যাসকিং মিলগুলো কৌশলে ধানের ময়লা ও সুগন্ধ দূর করতেই সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড ব্যবহার করছে। মূলত চালের ব্যবসা ধরে রাখতে ও কলমালিকরা চাল বেশি পরিষ্কার, চিকন ও ঝকঝকে করতে এসব ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মেশাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কলমালিকদের অবৈধ কর্মকা-ের কথা জানার পর মাঝে মাঝে অভিযান চালালে এ প্রক্রিয়া সাময়িক বন্ধ থাকার পর অব্যাহতভাবে তা চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। সূত্র আরো জানায়, প্রতি মাসেই চালের বাজার একাধিকবার ওঠানামা করে। এতে অনেক চালকল মালিকের মোটা অংকের টাকা লোকসান হয়। অনেক ক্ষেত্রে রোদের অভাবে, কখনো কখনো এক বা দুসপ্তাহ ধান শুকানো যায় না।
তাতে চালকলে মজুদ থাকা ধানে দুর্গন্ধ ও শ্যাওলা জমে। মূলত চালকে ঝকঝকে ও দুর্গন্ধমুক্ত করতেই চালকল মালিকরা নিজস্ব পদ্ধতিতে বিষাক্ত রাসায়নিক ব্যবহার করছে। এ রাসায়নিক পদার্থ মেশানোর ফলে চালকল মালিকদের দুর্গন্ধ ও শ্যাওলা জমা ধান নিয়ে কোনো চিন্তায় পড়তে হয় না। এছাড়া গুনতে হয় না লোকসানও। এ কারণে কলমালিকরা চালে রাসায়নিক মেশাতে উৎসাহী হচ্ছে। এদিকে হ্যাসকিং মিলের উৎপাদিত রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো চাল দেশের বড় বড় মোকামে বিক্রি হচ্ছে।
সূত্র জানায়, দুর্গন্ধ ও শ্যাওলাযুক্ত চালে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মেশানোর বিষয়টি চালকল মালিকরা সহজেই স্বীকার করতে চাচ্ছে না। অনেক ব্যবসায়ী এ প্রসঙ্গে বলছেন, চালের রঙ উজ্জ্বল, সাদা ও ঝকঝকে করতে শুধু পানি ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে হ্যাসকিং মিলগুলোতে সয়াবিন তেল ও ময়দা মিশিয়ে চাল ঝকঝকে করা হয়। এক্ষেত্রে দুশ মণ চালে এক কেজি সয়াবিন তেল মেশানো হয়। তবে চাল গন্ধমুক্ত করতে হ্যাসকিং মিলগুলোতে সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড ব্যবহার করা হয়।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, কোনো পণ্যের ময়লা দূর বা সাদা রঙ করতে সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এ রাসায়নিক পদার্থটি মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। এ রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত কোনো খাদ্যদ্রব্য দীর্ঘদিন খেলে মানুষের মুখের জ্বালাপোড়া ও পাকস্থলিতে এসিড বাড়ায়। তাছাড়া পাকস্থলিতে নানা রোগ এমনকি ক্যান্সারও হওয়ার আশঙ্কা থাকে। চালে এসব ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাছাড়া যেসব শ্রমিক চালে এসব ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য মেশানোর কাজ করে তাদেরও নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ নিঃশ্বাসের সঙ্গে শ্রমিকের দেহে এ রাসায়নিক পদার্থ ঢুকে যায়। এতে শ্বাসকষ্ট ও শ্বাসনালীর রোগের আশঙ্কা থাকে।#
Ruby