রবিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার চন্দনা-বরাশিয়া নদীটি এখন মৃত প্রায়, ৩৭ বছরেও খনন না করায় দুই পাশে গড়ে উঠেছে অবৈধ স্থাপনা


বাদল সাহা, গোপালগঞ্জ :: গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার চন্দনা-বরাশিয়া নদীটি এখন মৃত প্রায়গত ৩৭ বছরেও নদীটি খনন না করায় নদীর দুই পাশে গড়ে উঠেছে অবৈধ স্থাপনাফলে নদীটি এখন পড়েছে হুমকীর মুখেনদীটি মরে যাওয়া এলাকায় কৃষি কাজসহ সুপেয় পানীর অভাবে পড়েছে এখানকার জন সাধারণএছাড়া নদিিট মরে যাওয়ায় এলাকার সেচ প্রকল্প চরম আকারে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষকেরাফলে তারা জমিতে সেচ দিতে পারছেন নাএ কারণে সাধারন মানুষের কথা বিবেচনা করে ৬০ কোটি টাকা ব্যায়ে নদীটি খননের উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান সরকারস্বচ্ছতা ও সঠিক ভাবে এ নদীটি খনন করে দীর্ঘ দিনের দাবী পূরণ করা হবে এমনটাই আশা প্রকাশ করেছে এলাকার সাধারন মানুষ

জানা গেছে, ফরিদপুরের বোয়ালমারী হয়ে গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর ও কাশিয়ানী উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মধুমতি নদীতে এসে মিলিত হয়েছে  চন্দনা-বরাশিয়া নদীটিকিন্তু দীর্ঘ ৩৭ বছরের এ নদীটি খনন না করার ফলে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদীটি এখন মৃত প্রায়এ নদীর বিভিন্ন স্থানে দেওয়ায় পানি প্রাবাহিত না হওয়া ধীরে ধীরে মরে যাচ্ছে সুয়েজ খাল খ্যাত এ নদীটি।  ফলে এলাকার কৃষি জমিতে যেমন সেচ দিতে পারছে না কৃষকেরা তেমনি সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এ নদী কেন্দ্রীক এলাকার প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষনদীটি মরে যাওয়া নদীর দুই পাড়ে গড়ে উঠেছে অবৈধ স্থাপনপ্রভাবশালীরা নদীটি দখল গড়ে তুলেছে বিল্ডিং আর দোকানপাটতবে এসকল অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদের কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসন

এদিকে কৃষি সেচ ও সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করে বর্তমান সরকার এ নদীটি খননের উদ্যেগ নেয়এরই ধারাবাহিকতায় ইতিমধ্যে প্রায় ৬০ কোটি টাকা ব্যায়ে এ নদী খননের কাজ শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডএ নদীর খনন কাজ ৮০ ভাগ মেশিন ও ২০ভাগ শ্রমজীবী মানুষের দ্বারা হবে বলে জানা গেছে

এলাকাবাসী জানায়, এ নদীটি দিয়ে একসময় লঞ্চ, ট্রলার, ষ্টিমারসহ বড়বড় নৌযান চালাচল করতকিন্তু নদীটি মরে যাওয়া তা এখন শুধুই অতীত হয়ে গেছেএছাড়া নদীটি মরে যাওয়ায সুপেয় পানির অভাবে রয়েছে এ নদী কেন্দ্রীয় প্রায় ১৫ লক্ষ সাধারণ মানুষপ্রতিদিনই তাদের দূর থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করেতে হচ্ছেএছাড়া নদীতে পানি না থাকায় গোসল বা অন্যান্য কাজে নদীর পানি ব্যবহার করতে পারছেন না এলাকাবাসী

কৃষকেরা জানায়, নদীটি মরে যাওয়া এখানকার সেচ প্রকল্প বাঁধা গ্রস্থ হচ্ছেফলে ইরি-বেরো মৌসুমসহ বিভিন্ন সময় কৃষি জমিতে সেচ দিতে পারেছে না এখানকার কৃষকেরাএ কারণেএলাকার কৃষি জীবনে নেমে আসেছে স্থাবিরতাআমাদেরকে দূরের মধুমতি নদী থেকে পানি এনে জমিতে সেচ দিতে হচ্ছে

পানি উন্নয়ন বোর্ডের মধ্য ও পশ্চিমাঞ্চল, ফরিদপু বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম জানান, এ নদীটি ১৩০ কিলোমিটার লম্বাএরমধ্যে ১১৭ কিলোমিটার নদী খনন করতে হবেযার মধ্যে ১১২ কিলেমিটার মেশিন দ্বারা ও ৫ কিলোমিটার শ্রমজীবী মানুষের দ্বারা খনন করা হবেতবে পদ্মা নদীর সংযোগ মুখে সবার আগে খনন করা প্রয়োজন

তিনি আরো জানান, এ নদীটি খননের জন্য ব্যায় ধরা হয়েছে ৬০ কোটি টাকামেশিন দ্বারা  খননের জন্য চুক্তি মূল্য ধরা হয়েছে ৪৭ কোটি টাকা।  ইতিমধ্যে ১৫ কোটি টাকা পাওয়া গেছেআগামী অর্থ বছরের বাকী টাকা পাওয়া যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন

স্থানীয় সাংসদ এবং বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রী লেঃ কর্নেল (অবঃ) ফারুক খান জানান, চন্দনা-বরাশিয়া নদী খনন বৃহত্তর ফরিদপুরের মানুষের দীর্ঘ দিনের দাবীএ নদীর মধ্যমে পদ্মার সাথে মধুমতী নদীর সংযোগ হয়েছেআগামী বছরের মধ্যে এ নদী খনন সম্পন্ন করা হবেএ নদী খননের ফলে এলাকায় ব্যবসা-বানিজ্য, কৃষি ও কর্মসংস্থানে সুযোগ সৃষ্টি হবেএছাড়া নদীর দুই পাড়ের অবৈধ স্থাপনা আলোচনার মাধ্যমে সরিয়ে ফেলা হবে। 
Ruby