মঙ্গলবার, ২৭ মার্চ, ২০১২

ন্যাশনাল সার্ভিসের সুবিধাভোগীরা হতাশায় চাকুরী স্থায়ীকরনের দাবীতে মাঠে নেমেছে

প্রহলাদ মন্ডল সৈকত, কুড়িগ্রাম থেকে :: সরকারের ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচীর আওতায় কুড়িগ্রামে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত  যুব ও যুব মহিলারা চাকুরির মেয়াদ শেষ হতে না হতেই হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন। মেয়াদ শেষে ওই সব কর্মীদের মেয়াদ বৃদ্ধি হবে কি-না নাকি আবারো বেকারত্বের বোঝা মাথায় নিয়ে পথে বসবে তা নিয়ে কুল কিনারা খুঁজে পাচ্ছে না সুবিধাভোগীরা। তাই সরকারের কাছে জোর দাবী তুলে প্রকল্পটির মেয়াদ বৃদ্ধি করন সহ স্থায়ী নিয়োগের জন্য ওই হতাশাগ্রস্থ কর্মীরা ইতোমধ্যে মানব বন্ধনসহ আন্দোলন শুরু করেছে ।
বর্তমান সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্র“তি ছিল প্রতিটি ঘরে ঘরে একজনকে সরকারী চাকুরি দেয়া হবে। তারই ফলশ্র“তিতে সর্বপ্রথম কুড়িগ্রাম জেলায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে ন্যাশনাল সার্ভিসের কার্যক্রম শুরু করা হয়। পরে পর্যায়ক্রমে বরগুনা ও গোপালগঞ্জেও এ কার্যক্রম চালু হয়। সরকারের এ সাফল্য সারা দেশ জুড়ে আলোচিত হয়ে উঠে। যা ধীরে ধীরে অন্যান্য জেলাগুলোতে প্রভাব ফেলেছে।
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলার ৯টি উপজেলার ৪টি ব্যাচে ২৯হাজার ৮’শ ৬৩জন যুব ও যুব মহিলা ন্যাশনাল সার্ভিসে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে ১০টি ট্রেডে প্রশিক্ষন নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাজে যোগদান করে। ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী যুব ও যুব মহিলারা অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ পেয়ে সুফল বয়ে নিয়ে আসে।
 খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যেসব প্রতিষ্ঠানে ন্যাশনাল সার্ভিসের  সুবিধাভোগীরা কাজ করে যাচ্ছে ফলাফল অত্যন্ত সম্মান জনক বলে জানিয়েছে ওই সব প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ। এমনকি প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী নিয়োগকৃত চাকুরীজীবিরা ও ন্যাশনাল সার্ভিসের কর্মী মিলে অফিসের গুরুত্বপূর্ণ জঠিল কাজের সমাধান নিয়ে এসেছেন। ন্যাশনাল সার্ভিসের সুবিধাভোগীদের কারনেই কুড়িগ্রাম জেলার যানজট এলাকাগুলো যানজট মুক্ত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে এসেছে। এলাকায় চুরি ছিনতাই সহ অপরাধমূলক কর্মকান্ড শিথিল হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখা পড়ার মান আশংকাজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। যুব উন্নয়ন দপ্তরের বিভিন্ন উন্নয়নমূখী কর্মকান্ডে সহযোগীতা করায় সফলতা ফিরে এসেছে। মৎস্য দপ্তরের সুফলভোগীদের কাছে  ন্যাশনাল সার্ভিসের কমীরা বিভিন্ন পরামর্শ দেয়ায় মৎস্যচাষীরা মৎস্যচাষের উপর বেশী ঝুঁকি দিয়েছে। এমনকি উপজেলাগুলোতে মৎস্য চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসগুলোতে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মী নিয়োগ করায় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হয়েছে। উপজেলা প্রকেীশলী অফিসগুলোতে নিয়োগকৃতরা নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে  সার্বক্ষনিক সহযোগীতা করে যাচ্ছে ন্যাশনাল সার্ভিসের উপকার ভোগীরা। কৃষি দপ্তরে ন্যাশনাল সার্ভিসের কর্মীরা প্রতিটি কৃষকের দ্বারে দ্বারে গিয়ে খোঁজখবর নিয়ে কৃষি বিষয়ে পরামর্শ দান করছে। এ কারনে গত ২ বছরে অন্যান্য বছরের তুলনায় কৃষকরা তাদের দ্বিগুন হারে ফসল ঘরে তুলতে পেরেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে কর্মরত কর্মীরা হাসপাতাল,ক্লিনিক সহ বিভিন্ন  স্বাস্থ্য সেবায় সাধারন মানুষদের সেবা প্রদান করছে। বন বিভাগের কর্মীরা বন সংরক্ষন ও বৃক্ষরোপনের জন্য সাধারন মানুষকে উৎসাহিত করে আসছে। ইউনিয়ন পরিষদের সকল কর্মকান্ডে ন্যাশনাল সার্ভিসের কর্মীরা অংশ গ্রহন করে যাচ্ছে। ব্যাংক,বীমা সহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মীরা কাজ করে যাচ্ছে। ভূমি অফিসে নিয়োজিতরা ভূমি সংক্রান্ত কর্মকান্ডের নিয়োজিত থেকে সমাধান করেছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী বিভাগে নিয়োজিত কর্মীরা স্যানিটেশন সহ সুপেয় পানি ব্যবস্থা করে সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
 সব মিলে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মীদের কাছ থেকে সাধারন মানুষ সহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অধিক সুবিধা ভোগ করেছে। কিন্তু তাদের চাকুরি শেষ হয়ে যাওয়ায় এসব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উপকারভোগীরা। অন্যদিকে ন্যাশনাল সার্ভিসের সুবিধাভোগীরা নিরলস ভাবে কাজ করে গেলেও আজ তারা হতাশায় ভূগছেন। কেননা আর মাত্র ৩ মাস বাকী রয়েছে ন্যাশনাল সার্ভিসের ১ম ব্যাচের কার্যক্রম।  প্রকল্প থেকে বের হয়ে তারা কি করবে তা নিয়ে পড়েছে দুঃচিন্তায়। তাই ইতোমধ্যে কুড়িগ্রাম ও নাগেশ্বরী উপজেলায় চাকুরী স্থায়ী করনের দাবীতে ন্যাশনাল সার্ভিসের সুবিধাভোগীরা মানববন্ধন করেছে। অনেকে ভেবেছিল বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার দেশে ন্যাশনাল সার্ভিস চালু করায় চাকুরি সংকট থেকে পরিত্রান পেয়েছিল শিক্ষিত বেকাররা। কিন্তু দিন যত ঘনিয়ে আসছে তাদের মনে আবারো সেই অন্ধকারের বিভিষিকা ভেসে আসছে। তারা আবারো সংসারের বোঝা হয়ে রয়ে গেল এভাবনাটা অভিভাবকদেরও। অনেককেই ভাবছে ২ বছর পর চাকুরি হারালে এসব যুবকরা বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে যেতে পারে। তাই ন্যাশনাল সার্ভিসের সুবিধাভোগদের চাকুরি স্থায়ী করন কিংবা বৃদ্ধি করলে বেকারত্বের বোঝা কমে আসবে।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোঃ হাবিবুর রহমান এ প্রতিবেদককে জানান, ন্যাশনাল সার্ভিসের শুরু আর শেষ তো এক। আত্ম কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে। এটির মেয়াদ আর বাড়বে না। যে টাকা তাদের ব্যাংকে জমা রয়েছে তা দিয়ে তারা স্বাবলম্বী হবে। তাদেরকে আর কোন ঋনও দেয়া হবে না। #
Ruby