মঙ্গলবার, ২৭ মার্চ, ২০১২

মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি সহযোগী বন্ধুদের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা

বাঙালির মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেছেন এমন বিদেশি নাগরিকদের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের হাতে এ পুরস্কার তুলে দেন।
‘মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ ও ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ এ দুই বিভাগে সম্মাননা প্রদান করা হয়। এ পর্বে ১১০ জনকে এ সম্মাননা দেয়া হচ্ছে। অনুষ্ঠানে বিদেশিদের হাতে সম্মাননা তুলে দেন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনায়ক, দার্শনিক, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, বিশিষ্ট নাগরিকসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনকে এ সম্মাননা দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে যেসব বিদেশি বন্ধু এ দেশের মুক্তিকামী মানুষের সঙ্গে এসে দাঁড়িয়েছিলেন তাদের কাছে আমরা ঋণী। সেই দুঃসময়ের বন্ধুদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এ আয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘এর আগে আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে ১৯৯৮ সালের ৭ মার্চ জাতীয় সংসদের উত্তর প্লাজায় দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা দিয়েছিল। এবার ক্ষমতায় এসে প্রথমে শ্রীমতি ইন্ধিরা গান্ধীকে স্বাধীনতা সম্মাননা দেওয়া হয়। এবার মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে সাহায্য করেছেন এমন ৫৬১ জনের নামের তালিকা আমরা করি। সেখান থেকে ৫৩৫ জনের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়েছে। আজকের অনুষ্ঠানে উপস্থিত রয়েছেন ৭৬ জন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক বিদেশি সাংবাদিক জীবনবাজি রেখে যুদ্ধের সংবাদ প্রকাশ করেছেন। এ কারণে অনেকে তাদের নিজ দেশে জেল খেটেছেন আবার অনেকের চাকরি গেছে। অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে আহতদের সেবা করে সুস্থ করে তুলেছেন।’

প্রধানমন্ত্রী নিজে ও দেশবাসীর পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন সম্মানিত বিদেশি বন্ধুদের প্রতি। সেই সঙ্গে তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘ভারতের নারান্দা, অনন্তপুর, আগরতলায় শরাণার্থী শিবিরে অনেক বিদেশি এসেছিলেন, আমাদের সাহায্য করেছিলেন। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে সাহায্য করেছিলেন। সে ঋণ আমরা শোধ করতে পারবো না।’

তিনি বলেন, ‘১৯৫২ সালে মাতৃভাষার জন্যে আমরা লড়াই করেছি। ’৫২ সালের ভাষা আন্দোলনকে বিশ্ব মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমরা বিশ্বশান্তিতে বিশ্বাসী। তাই ১৯৮৮ সাল থেকে জাতিসংঘের শান্তি মিশনে নিয়মিত সৈন্য পাঠাচ্ছে বাংলাদেশ।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. দীপু মনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্যে আজ বন্ধুত্ব উদযাপনের দিন। আজ আমরা উপলব্ধি করছি ৪১ বছর আগে কিভাবে বিদেশিরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করেছিল।’ বিদেশি অতিথিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা রচনা করেছেন ইতিহাস। তাই আজকের দিনটি ঐতিহাসিক বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ দিন।’
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এবি তাজুল ইসলাম বিদেশি অতিথিদের উদ্দেশে বলেন, ‘এ ধরনের আয়োজনের ফলে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সঙ্গে পরিচয় থাকবে সম্মানিত বিদেশি বন্ধুদের।’
বিদেশি অতিথি মুক্তিযুদ্ধের সময় বিট্রিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলা মাইকেল বনের বক্তব্যে বাংলাদেশের প্রতি গভীর ভালবাসা ফুটে ওঠে। বিশেষ এ দিনটিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মিজানুর রহমান।
উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধের সময় সহযোগিতা ও বিশেষ অবদানের জন্য গত ২৫ জুলাই ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে (মরণোত্তর) ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ দেয়া হয়। ইন্দিরা গান্ধীর পুত্রবধূ সোনিয়া গান্ধী তার হয়ে এ পুরস্কার গ্রহণ করেন। (জিটিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)

Ruby