শনিবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০১২

পলাশে স্কুল ছাত্রীকে জবাই করে ডাকাতি সহ আরো নিহত ৩

আনোয়ার হোসেন স্বপন, নরসিংদী থেকে ঃ নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল ইউরিয়া সারকারখানার আবাসিক এলাকার ই-২ ব্লকের তৃতীয় তলায় আদিবা (১৩) নামের এক স্কুল ছাত্রীকে জবাই করে এক ডাকাতি সংঘঠিত হয়। গত বৃহঃবার রাত প্রায় সারে ৭ টায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার সরেজমিনে জানাযায়, এই বাসার মালিক মোঃ আলমগির হোসেন একই কারখানায় চাকরী করে এর ফাকে খানেপুর বাজারের বিসমিল্লাহ ফার্মেসী নামে একটি ঔষধের দোকান আছে। তাই তিনি ঘটনার সময় তার দোকানে ছিলেন আর আদিবার মা সাহানা বেগম ডায়বেটিস থাকায় রুটিন অনুযায়ী বাসার বাইরে রাস্তায় হাটাহাটি করেন। ঘোড়াশাল ইউরিয়া সারকারখানা স্কুল এন্ড কলেজের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী আদিবা এসময় একা বাসায় খাবার টেবিলে খাবার খাচ্ছিল। ধারনা করা হচ্ছে এমন সময় ৮/১০ জনের একটি সংঘবদ্ধ চক্র বাসার দরজায় নক করলে ভিতর থেকে আদিবা দরজা খুলে দেয় আর চক্রটি আদিবাকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তাদের বাথরুমে নিয়ে গলায় ছুরি দিয়ে জবাই করে। এসময় বাসা খালি পেয়ে চক্রটি বাসায় থাকা স্বর্ণালংকার, কাপড়-চোপড় সহ মূল্যবান জিনিসপত্র সহ প্রায় ১০ লক্ষ টাকার মালামাল নিয়ে যায়। পরে আদিবার মা বাসায় এসে আদিবাকে ডাকাডাকি করে সাড়া না পেয়ে এবং দরজা খোলা দেখে মনে সন্দেহ জাগে এমন সময় বাসার কাপড়-চোপর এলোমেলো দেখে খোজাখোজি করে তাদের বাথরুমে আদিবার লাশ পেয়ে হাউমাউ করে চিৎকার করতে থাকলে গৃহকর্তা আলমগির বাসায় ছুটে আসে। খবর পেয়ে পলাশ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। এবিষয়ে এই এলাকার লোকজন জানায়, এই কারখানার আবাসিক এলাকায় প্রতি বছর ২/১ জন খুন হচ্ছে কিন্তু কোন প্রতিকার হচ্ছেনা, কোন আসামীকে গ্রেফতার করা হচ্ছেনা, বের হচ্ছেনা এই সকল হত্যা রহস্য, তাই খুনিরা আরো খুন করতে সাহস পাচ্ছে। কারন এই কারখানার ভিতরে যতগুলো খুন হলো তার প্রতিটি খুনেরই কোন রহস্য উৎঘাটন না হওয়ায় খুনিরা পার পেয়ে যাচ্ছেনা অনায়াসে। এই সকল খুনের সাথে কারখানার ভিতরের একটি শক্তিশালী চক্র এই খুনের সাথে জরিত থাকতে পারে বলে জানায় এই এলাকার বাসিন্দরা। কি কারনে এই সকল খুনের রহস্য বের হচ্ছেনা বা আসামী সনাক্ত হচ্ছেনা তার সঠিক উত্তর কেউ দিতে পারেনি। এব্যাপের পলাশ থানার অফিসার ইনচার্জ আতিকুর রহমান খান বলেন, এই কারখানার নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের জন্য নির্দিষ্ট নিরাপত্ত্বাকর্মী রয়েছে। তারাই এই কারখানার নিরাপত্তাটি দেখে থাকে। আর এই এলাকাটি সংরক্ষিত তার ফলে এখানে চাকরী সুত্রে, আত্বীয় সূত্রে বাহির থেকে অনেক লোক বেড়াতে আসে আর একটি অপকর্ম করে পালিয়ে যায়। এবিষয়ে কারখানার সহকারী ব্যবস্থাপক (নিরাপত্তা) এ,কে,এম,তৌফিকুর রহমান বলেন, আমি কারখানায় এসেছি মাত্র কিছুদিন হয় আমার সময়ে কোন অপকর্ম হয়নি। তাছাড়া আমার প্রধান দায়িত্ব হল কারখানার প্রশাসনিক ও উৎপাদন শাখার নিরাপত্তার দায়িত্ব। কারখানায় এসকল আইন শৃংখলার অবনতির বিষয়ে কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আবদুস সালাম খান জানান, কারখানার নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত পরিমানে নিরাপত্তাকর্মী থাকার পর ও এখানে বিভিন্ন এলাকার লোকজনের সমাগম ঘটে তাই সকলকে সনাক্ত করা ্আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়না যার ফলে একটি অপকর্ম করে এখান থেকে পালিয়ে যায় কারন এখানে কারো স্থায়ী ঠিকানা নয়। এই ঘটনার সাথে যদি কারখানার ভিতরের কোন লোক জড়িত থাকে তাহলে প্রমান পাওয়ার সাথে সাথে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এলাকাবাসী আরো জানায়, ইতিপূর্বে একই এলাকায় ইয়াছিন নামের এক যুবককে বাসার ছাদে নিয়ে তার বন্ধুরা হত্যা করে পালিয়ে যায় এবং মিনারা নামের এক মহিলাকে হত্যা করে পালিয়ে যায় হত্যাকারীরা কিন্তু কোন আসামী গ্রেফতার কিংবা কোন হত্যা রহস্য বের হয়নি। এব্যাপারে কারখানার সিবিএর সভাপতি সামসুল আলম মাষ্টার জানান, এর ভিতরে যে খুন গুলো হচ্ছে তা প্রতিটি ভিন্ন রকম আর এই হত্যার সাথে বাহিরের বেশী লোক জড়িত থাকতে পাওে, ভিতরের হয়তো দু একজন তাদের পরিচিত থাকতে পারে। তবে এর সাথে পেশাদারী একটি খুনি চক্র কাজ করতে পারে বলে অনেকের সন্দেহ। অতিতে কি হয়েছে বলতে পারবনা তবে এই খুনের সাথে যে কোন লোকই জড়িত থাকনা কেন তাদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানাচ্ছি যার ফলে আর ভবিষ্যতে এরকম ঘটনা কেউ ঘটানোর সাহস না পায়। এব্যপারে পলাশ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা নং ১৭ তারিখ ২৭.০১.২০১২। এই ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে পাশ্ববর্তী বাসার শাহ কামাল নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পলাশ থানা পুলিশ, কামালের স্থায়ী বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগড়ে। তার পিতার নামে সফি উদ্দিন। কামাল তার ফুফা সিরাজ উদ্দিনের বাসায় থেকে পলাশের প্রাণ কোম্পনীতে চাকরী করে।
এছাড়া একই উপজেলার চরসিন্দুর ইউনিয়নের মালিতা গ্রামে এক গ্রহবধূকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখার খবর পাওয়া গেছে। গত বৃহঃবার রাত প্রায় ১১ টায় এ ঘটনা ঘটে। পলাশ থানা সুত্রে জানাযায়, মালিতা গ্রামের মিয়াঁচানের ছেলে রিপনের সাথে সাত বছর পূর্বে বিয়ে হয় পাশ্ববর্তী শিবপুর উপজেলার সাধারচর গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের মেয়ে নুরজাহান বেগমের। বিয়ের পর তাদের সংসারে একটি ছেলে সন্তান জন্ম নেয়। এরই মধ্যে রিপন ৩ বছর হয় মালয়শিয়া চলে যায় আর সেখানে গিয়ে স্ত্রী নুরজাহানের সাথে যোগাযোগ ও রক্ষা করে যায় নিয়মিত। নুরজাহানের শ্বাশুরী রহিমা বেগম জানান, নুরজাহান রাতে আমার সাথেই থাকে আর ঘটনার দিন রাত প্রায় ১০ টা পর্যন্ত টেরিভিশন দেখে। রাত বেশী হয়ে গেলে আমি ঘুমিয়ে পরি রাত যখন প্রায় ১২টা বাজে তখন নুরজাহানের ছোট ছেলে মাকে না পেয়ে কান্নাকাটি শুরু করলে শ্বাশুরী খোজাখোজি করে দেখে ঘরের সেলিং ফ্যানে ওড়না দিয়ে লাশ ঝুলে আছে। পরিবারের পক্ষ থেকে তিনি আরো জানান, রিপন বিদেশ চলে যাওয়ার পর একই এলাকার সোনা মিয়ার ছেলে নূর মোহাম্মদ এর সাথে মোবাইলে প্রেমের সম্পর্ক ঘরে উঠে এবং কয়েকবার এ নিয়ে ধন্ধ হয়েছিল। আর ঘটনার রাতে নুরজাহানের লাশের পাশে একটি মোবাইল পাওয়া যায় আর সে মোবাইলটি নুরজাহানের নয় বলে জানালেন পরিবারের লোকজন। অপড় দিকে নুরজাহানের বাবা তোফাজ্জল হোসেন জানায়, আমার মেয়ে নুরজাহান আত্ত্বহত্যা করার কোন লক্ষন নেই তাকে কেউ মেরে ফেলেছে আর মেরে ঘরের ফ্যানে ঝুলিয়ে রেখেছে। তাছাড়া নুরজাহানের শ্বাশুরী তার ভাসুরের সাথে না থেকে নুরজাহানের পরিবারে থেকে খাওয়া দাওয়া করে বলে নুরজাহানকে একাদিকবার মারধর করে। এবিষয়ে পলাশ থানা পুলিশ তড়িগরি করে নুরজাহানের শ্বশুর বাড়ির লোকজনের কৌশলে লাশটি ময়না তদন্ত ছাড়াই একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করে যার নং ১ আরিখ ২৭.০১.২০১২। এব্যপারে পুলিশ জানায়, লাশ ময়না তদন্ত করে কোন প্রমান পাওয়া গেলে হত্যা মামলা হতে পারে।
এদিকে গতকাল শুক্রবার সকাল প্রায় ৯ টায় পলাশ বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় ট্রলির নিচে চাপা পরে এক কিশোর নিহত হয়েছে। জানাযায়, আলমগীর হোসেন (৭) নামে এক শিশু রাস্তার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বেপরোয়া গতিতে চালিয়ে আসা একটি খালি ট্রলি তার স্থানচ্যুৎ হয়ে পাশ দিয়ে যাওয়া আলমগিরের উপড়ে তুলে দেয়। এসময়  আহত অবস্থায় আলমগিরকে পলাশ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তৃপক্ষ তাকে মৃত বলে ঘোষনা করে। আলমগিরের বাবা পূর্ব পলাশ দড়িহাওলা পাড়ায় ভাড়া বাসায় থেকে এলাকায় দিন মজুরের কাজ করে। তাদের স্থায়ী বাড়ি পাশ্ববর্তী কালিগঞ্জ সাওরাইদ এলাকায়। এব্যাপারো এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি। জনতা ট্রলির ড্রাইভারকে আটক করে পলাশ থনা পুলিশের কাছে দিয়েছে।

Ruby