বুধবার, ২১ মার্চ, ২০১২

বান্দরবানে সম্ভাবনাময় অর্থকরী ফসল সমভূমির তুলা চাষ


মোঃ নজরুল ইসলাম (টিটু), বান্দরবান :: বাংলাদেশে দুই প্রজাতির তুলা চাষ হয়ে থাকে, পাহাড়ী তুলা এবং সমভূমির তুলা। পাহাড়ী তুলা পার্বত্যাঞ্চলে জুম চাষে অন্যান্যে ফসলের সাথী ফসল হিসেবে চাষ হয়ে থাকে। জুম চাষীদের মূল অর্থকরী ফসল পাহাড়ী তুলা। সমভূমির তুলা সমতলে যশোর, রংপুর ও ঢাকা অঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় চাষ হয়ে থাকে। পাহাড়ী তুলার আঁশের দৈর্ঘ্য ০.৫ ইঞ্চি। আঁশ খাটো বলে এই তুলা স্পিনিং মিলে সুতা তৈরীর উপযোগি নয়। জুম চাষীরা উৎপাদিত তুলার একটি অংশ নিজেদের জন্য কম্বল, মোটা কাপড় তৈরীর কাজে ব্যবহার করেন। এছাড়া এই তুলার একটি অংশ লেপের তুলা হিসেবে ব্যবহার করা হয় এবং কিছু অংশ বিদেশে রপ্তানি করা হয়। সমভূমির তুলার আঁেশর দৈর্ঘ্য গড়ে ১.১৫ ইঞ্চি। এই তুলা স্পিনিং মিলে সুতা তৈরীর কাজে ব্যবহৃত হয়।

বস্ত্র বাংলাদেশের প্রধান শিল্প পণ্য। অর্থনৈতিক মূল্য সংযোজনের ক্ষেত্রে বস্ত্র শিল্পের অবদান শিল্প খাতের প্রায় ৪০% এবং জাতীয় আয়ের প্রায় ১৩%। দেশে ৩৬৩টি সুতাকলের জন্য বার্ষিক ৪০ লক্ষ বেল (বেল= ৪০০ পাউন্ড) আঁশ তুলার চাহিদা আছে। এ পরিমান তুলা আমদানি করতে বছরে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়। এ বিপুল পরিমান আঁশ তুলার চাহিদা পূরনের জন্য তুলা উন্নয়ণ বোর্ড দেশের সমতল অঞ্চলের পাশাপাশি পার্বত্যাঞ্চলেও সমভূমির তুলা চাষ সম্প্রসারনের উদ্যোগ গ্রহন করেছে।

পার্বত্যাঞ্চলের আবহাওয়া তুলা চাষের উপযোগি। ব্রিটিশ আমলে এই অঞ্চল ‘কার্পাস মহল’ হিসাবে পরিচিত ছিল। এই অঞ্চলে নদী ও প্রচুর ঝিড়ি রয়েছে। নদী ও ঝিড়ির পাড়ের অনুর্বর, বেলে দোঁ- আশ মাটিতে সমভূমির তুলা ভাল হয়। এছাড়া সমভূমির তুলা পাতাঝড়া উদ্ভিদ বিধায় গাছের মোট আয়তনের এক-তৃতীয়াংশ জৈব পদার্থ হিসেবে যোগ হয়। ফলে সমভূমির তুলা চাষ কৃত জমি উর্বরতা লাভ করে। তুলা সংগ্রহের পর পরিত্যাক্ত তুলা গাছ একটি অন্যতম জ্বালানী হিসেবে উত্তম। যেসব এলাকায় সমভূমির তুলা চাষ হয়ে আসছে সেসব এলাকায় পরিত্যক্ত তুলা গাছ একটি অন্যতম জ্বালানী হিসেবে ব্যবহৃত হয়। দেশী উচ্চ ফলনশীল তুলাকানি (৪০%) প্রতি গড়ে ১০ মন ও হাইব্রিড তুলাকানি প্রতিগড়ে ১৪ মন ফলন দিয়ে থাকে। ২০১০-২০১১ ইং মৌসুমে কানি প্রতি ১০ হাজার ৫শত টাকা খরচ করে খরচ বাদ  দিয়ে গড়ে ৬ মাসে তুলা ফসল হতে ২৪ হাজার টাকা আয় করেছে। তুলা পচনশীল দ্রব্য নয়, ফলে দূর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থা বিশিষ্ট এলাকার চাষীদের ফসল উত্তোলনের সাথে সাথে বিক্রয়ের তাড়া থাকেনা। চাষীদের বীজ তুলা বাছাই ও শুকানোর পর কোন এলাকায় মোট উৎপাদন ৫ টনের অধিক হলে বেসরকারী জিনারগণ সরাসরি চাষীর এলাকা হতে ক্রয় করে থাকে। এ ক্ষেত্রে তুলা উন্নয়ন বোর্ডের মাঠ কর্মকর্তাগণ চাষী যাতে সরকার নির্ধারিত ন্যায্যমূল্য পান তা নিশ্চিত করেন। ফলে চাষীগণ তাদের উৎপাদিত বীজ তুলা সহজে বিপনন করতে পারেন। বিগত ৩বছর হতে বান্দরবান জোনে সমভূমির তুলা চাষ হচ্ছে। চলতি মৌসুমে বান্দরবান জোনে ৪০ হেক্টর জমিতে উচ্চফলনশীল প্রচলিত জাত ও ২২ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড তুলা চাষ হয়েছে। বান্দরবান জেলায় নদী ও ঝিড়ির পাড়সহ প্রচুর অনাবাদী জমি রয়েছে যেখানে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় না, সেসব জমি সমভূমির তুলা চাষের আওতায় আনা সম্ভব হলে একদিকে যেমন দেশে বর্তমান আঁশ তুলার ঘাটতি পূরনে সহায়ক হবে, পাশাপাশি এই এলাকার চাষীগণ বিকল্প লাভজনক অর্থকরী ফসলের চাষ করতে পারবেন। এই জন্য প্রয়োজন-

১.       চাষীদের সহজে ও স্বল্প সুদে তুলা চাষের জন্য ঋণের ব্যবস্থা করা।

২.       আধুনিক তুলা চাষ পদ্ধতির বিষয়ে চাষীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।

৩.       তুলা উন্নয়ণ বোর্ডের মাঠ কর্মকর্তা গণের স্বল্পতা নিরসন করা।

৪.       দূর্গম পাহাড়ী এলাকায় মাঠ কর্মকর্তাগণের যাতায়াতের সুবিধার জন্য বাহনের ব্যবস্থা করা।

উপযুক্ত বিষয়গুলো সমাধানে আশু পদক্ষেপ সম্ভব হলে আগামীতে পার্বত্যাঞ্চলে সমভূমির তুলা চাষ অনেক বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যায়।
Ruby