সোমবার, ১৯ মার্চ, ২০১২

ঠাকুরগাঁওয়ে এক শ্রমিক নেতা প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি :: এক সময়ে সহকর্মীদের উন্নয়নে নেতৃত্ব দিয়েছি। এখন আর লজ্জায় কারো কাছে হাঁত পাততে পারিনা। অন্যের বাড়িতে দিন মজুরীর কাজও করতে পারিনা। তারপরও বেঁচে থাকার জন্য ও ওষুধ কেনার জন্য অর্থের প্রয়োজন। তাই উপায়ন্তর না দেখে কর্মসৃজন কর্মসূচির কাজ পাওয়ার জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে ৫ বার গিয়েছি। ইউপি সদস্যের কাছে ঘুরেছি ৩ মাস। সমাজ সেবা অফিসের মাঠ কর্মীর পিছনে ধর্না দিয়েছি ১ বছর। তারপরও কারো কোন সহযোগিতা পায়নি। দীর্ঘ ৪ বছর ধরে প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত দবিরুল ইসলাম উপরোক্ত অভিব্যক্তি ব্যক্ত করে বেঁচে থাকার আকুতি জানালেন।

দবিরুল ইসলাম (৪৯) এর বাড়ি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কুজিশহর গ্রামে। এক সময় তিনি রুহিয়া ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তার নেতৃত্বে রিক্সা ভ্যান শ্রমিকদের উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হতো। তার ডাকে সারা দিত প্রশাসন সহ খেটে খাওয়া শ্রমিকরা। এ অবস্থায় ২০০৮ সালের ২৮ জানুয়ারী তিনি প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত হন। দীর্ঘদিন তিনি শয্যাসায়ী থাকার পর এখন কোন মতে হাটা চলা করতে পারেন। ২ ছেলে ও এক মেয়ে এবং স্ত্রী নিয়ে তার সংসার। একমাত্র কন্যাকে বিয়ে দিয়েছেন। বড় ছেলে আশা অফিসে বাবুচির কাজ করে পিতার চিকিৎসার খরচ চালায়। অপর ছেলে দশম শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। স্ত্রী ও স্কুল পড়–য়া সন্তানকে নিয়ে তিনি মানবেতর জীবন যাপন করছেন। কাজের অভাবে এক বেলা খাদ্য জুটে তো আরেক বেলা অনাহারে থাকতে হয়। রোগাক্রান্ত এ মানুষটি কাজ করতে চাইলেও স্থানীয় লোকজন তাকে কাজে নেয়না। অন্যের বাড়িতে দিনমজুরী করতে তিনি নিজেও লজ্জা পান। কিন্তু পেটের তাগিদে তিনি স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল মোতালেব এর কাছে দীর্ঘ ৩ মাস যাবত ঘুরছেন। কিন্তু ওই মেম্বার তার সহযোগিতায় সারা দেয়নি। তিনি আক্ষেপ করে জানান, সারা গ্রামে আমিই একমাত্র পঙ্গু, তারপরও জনপ্রতিনিধিরা আমার দিকে সুদৃষ্টি দিচ্ছে না। তিনি আরো জানান, কর্মসৃজন কর্মসূচির মাটির কাজ করার জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম বাবুর কাছে ৫ বার গিয়েছি। প্রতিবারেই তিনি আমার নাম ডায়েরি ভুক্ত করে নেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন প্রকার কাজের নিশ্চয়তা পাইনি। তিনি আরো জানান, প্রতিবন্ধি হিসেবে সরকারি সহযোগিতার আশায় সমাজসেবা অফিসের মাঠ কর্মী পাইলটের কাছে দীর্ঘ ১ বছর ধর্ণা দিয়েছি। তিনিও কোন সহযোগিতা করতে পারেননি। এ অবস্থায় না খেয়ে মরা ছাড়া আমার কোন উপায় নেই জানালেন তিনি।

এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম বাবু জানান, দবিরুল ইসলামের বিষয়টি আমি ব্যক্তিগতভাবে জানি। তিনি আসলেই অসহায়। তাই তার অভাবের কথা ভেবে তার পরিবারের একজনের নাম কর্মসৃজন তালিকায় দেওয়া হয়েছে। কাজ শুরু হলে তিনি উপকৃত হবেন।
Ruby