বৃহস্পতিবার, ৫ এপ্রিল, ২০১২

বান্দরবানের ৩ টি উপজেলার ২৭টি ইটভাটায় পুঁড়ছে জ্বালানী কাঠ হাইকোর্টের রুল জারীর সত্ত্বেও নিরব প্রশাসন

মোঃ নজরুল ইসলাম (টিটু), বান্দরবান :: বান্দরবান পার্বত্য জেলার আলীকদম, লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি এই ৩টি উপজেলার মোট ২৭টি ইটভাটায় আইন অমান্য করে অবাধে জ্বালানী কাঠ পোঁড়ানো হচ্ছে। এলাকার জন প্রতিনিধিসহ মৌজা প্রধান হেডম্যানদের অভিযোগ স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট সরকারী কর্মকর্তাদের আয়ত্ব করে লাইসেন্স বিহীন অবৈধ ইটভাটা পরিচালনা ও অবাধে জ্বালানী কাঠ পোঁড়ানো হচ্ছে। পরিবেশের ক্ষতি করছে এমন অবৈধ ইটভাটা স্থাপনা ও বন্ধের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করে এলাকার জনসাধারণ। ইটভাটার অনুমতি পত্র, লাইসেন্স প্রদান কারী কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসনের নথিপত্রে তথ্য মতে ৩টি উপজেলার মধ্যে ছাগল খাইয়া মৌজার লামায় লাইসেন্স প্রাপ্ত ১টি ইটভাটা রয়েছে। অন্য ২৬টি ইটভাটা লাইসেন্স বিহীন অবৈধভাবে চলছে। লাইসেন্স বিহীন ইটভাটাগুলো থেকে সরকার হারাচ্ছে কয়েক লক্ষ টাকা রাজস্ব। ইটভাটাগুলোতে মান সম্পন্ন ইট তৈরী ক্ষেত্রে নেই কোন বিএসটিআই অনুমোদন ও ছাড়পত্র। পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ও তদারকী ছাড়া চলছে সকল ইটভাটা। স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতা ও নিরব ভূমিকায় অবৈধ ইটভাটাগুলোতে ইট পোড়ানো আইন ও নিতীমালা অনুস্মরণ করে চলছেনা। অবৈধ ইটভাটাগুলো অপসারনের নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্টের রুল জারী করা হলেও স্থানীয় প্রশাসন রয়েছে নিরব।

              ইটভাটাগুলো পরিদর্শনে দেখা যায়, কোন ইটভাটা ইট পোড়ানো আইন ও নীতিমালা মেনে চলছে না। পাহাড় কেটে ইটভাটা তৈরী করা হয়েছে। জমির উপরের অংশ উর্বর মাটি ও পাহাড় কেটে ইট তৈরীর মাটি সংগ্রহ করা হয়েছে। ইট পুড়ানোর জন্য কয়লার পরিবর্তে পুড়ছে জ্বালানী কাঠ। অনেক ইটভাটায় ১২০ফুট পাঁকা চিমনী পরিবর্তে কম উচ্চতার ড্রামের কাচা চিমনী ব্যবহার করছে। অনেক ইটভাটা সরকারী বনায়নের ২০০ থেকে ৫০০ গজের কাছে ও লোকালয়ে স্থাপন করা হয়েছে। শিশু শ্রম আইন অমান্য করে প্রত্যক ইট ভাটায় রয়েছে শিশু শ্রমিক যাদের বয়স ১৫বছরের নীচে। আলীকদমের ২টি, লামার ২২টি ও নাক্ষ্যংছড়ির ৩টিসহ ২৭টি অবৈধ ইটভাটায় ভয়াবহ অবস্থায় ও অবাধে কাঠ পোড়ানোর চিত্র দেখা গেছে। প্রতিটি ১টি চিমনি বিশিষ্ট ইটভাটায় প্রতিদিন ৫শত মন কাঠ পোড়ানো হয় বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইটভাটার এক শ্রমিক জানান। লামার ফাইতং ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফখরুল ইসলাম ও ইটভাটার মালিক খোরশেদ আলমসহ অন্যান্য মালিকরা ইটভাটায় কাঠ পোড়ানোর বিষয়টি স্বীকার করেছেন। ইটভাটায় জ্বালানী কাঠ পোড়ানোর ক্ষেত্রে বন বিভাগ ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের হাত করে কাজ করতে হয় বলে জানান।

              লামার ফাইতং ইউপি চেয়ারম্যান শামসুল আলম ও আলীকদম ইউপি চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন বলেন, সকল ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে জ্বালানী কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করায় অবৈধ ইটভাটা গুলোতে বেপরোয়া জ্বালানী কাঠ পোড়ানোর সুযোগ পাচ্ছে।

              সাম্প্রতিক সময়ে গত ১৫ই মার্চ বৃহস্পতিবার দেশের ১১ জেলায় অনুনোমোদিত ও অবৈধ ইটভাটা স্থাপনা অপসারণ এবং এর কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ প্রদান করে হাইকোর্টে রুল জারী করা হয়েছে। বিচারপতি মির্জা হোসেন হায়দার ও বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রিট আবেদনের শুনানির পর অবৈধ ইটভাটা অপসারণের নির্দেশ প্রদান করে এ রুল জারী করেন। জানা যায় প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার এ প্রকাশিত ১২টি প্রতিবেদন উপর ভিত্তি করে গত ১২ই ফেব্রুয়ারী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেনসহ পাচঁ আইনজীবী এ রিট আবেদনটি করেন। ##
Ruby