বৃহস্পতিবার, ৫ এপ্রিল, ২০১২

সোনা ফলাতে পাচ্ছেনা গোপালপুরে কৃষকরা

এ কিউ রাসেল, গোপালপুর (টাঙ্গাইল) :: প্রায় ২৮ হাজার মেট্রিকটন খাদ্য উদ্বৃত্ত এলাকা গোপালপুর উপজেলায়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চলতি মৌসুমে বোরো ধানের বাম্পার ফলনের আশা প্রকাশ করলেও ভরা মৌসুমে বিদ্যুতের আকালের কারণে সোনা ফলাতে পাচ্ছেনা গোপালপুরের কৃষকরা। মাঠ পর্যায়ে কর্মরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ ও তদারকি এবং চাষিদের নিবিড় পরিচর্যায় বাড়ন্ত ধানের চারা গুলো বি¯ৃ—র্ণ মাঠজুড়ে ঋতুরাজ বসন্তের বাতাসে দোল খেলেও সেচ সঙ্কটের কারণে উৎপাদন বিপর্যয়ের চরম আতঙ্কে রয়েছে এ অঞ্চলের বোরো চাষিরা। চাষিদের দাবি, ২৪ঘন্টার মধ্যে লো-ভোল্টেজের ২ থেকে আড়াই ঘন্টার বিদ্যুত কোন কাজে না আসলেও বৈদুতিক সেচপাম্প বিকল হওয়ার কাজে আসছে।

গোপালপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. ফরিদুল হাসান স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, উপজেলার ১৫হাজার ৫১০ হেক্টর আবাদি জমির মধ্যে চলতি মৌসুমে উপজেলার ৯৬০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড, ৩ হাজার ৮৮০হেক্টর জমিতে ব্রি ধান-২৮, ৯ হাজার ৪শত হেক্টর জমিতে ব্রি ধান-২৯ সহ মোট ১৪ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষাবাদ হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে কর্মরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের উদ্বুদ্ধ করণের কারণে চাষিরা মৌসুমের শুরুতেই আদর্শ বীজতলা তৈরি করে সঠিক বয়সে সঠিক সময় ও পদ্ধতিতে ধানের চারা জমিতে রোপন করেছে। আর চারা রোপনের সঙ্গে সঙ্গে জমিতে পাচিং করার কাজটিও করেছে প্রায় ১৩হাজার ৭৬২ হেক্টর জমিতে। চাষকৃত জমিতে পরিমাণমত পানি সরবরাহের লক্ষ্যে বিদ্যুত চালিত ২৮টি গভীর ও ২হাজার ৩শতটি অগভীর, ডিজেল চালিত ৩হাজার ৬৫০টি অগভীর এবং ৩টি এলএলপি (পাওয়ার পাম্প) সেচযন্ত্রের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এ ছাড়াও চাষি পর্যায়ে উন্নতমানের ধান, গম, পাট বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্পের আওতায় কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের ধান বীজ উৎপাদনের জন্য চলতি বোরো মৌসুমে ৬০টি প্রদর্শনী প্লট (প্রতিটি জমি ০১ একর আয়তন) বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। তার মতে, বিদ্যুত সঙ্কটের কারণে বোরো চাষিরা জমিতে চাহিদা পরিমাণ সেচ দিতে পাচ্ছে না। বিষয়টি তিনি লিখিত ভাবে ২ এপ্রিল সোমবার ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।

সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মো. হায়দর আলী জানান, পানির অপচয়রোধ ও জমির চাহিদা পরিমাণ পানি সরবরাহের লক্ষ্যে উপজেলার ডিজেল চালিত ৩০টি সেচযন্ত্রের আওতায় ধান চাষে পানি সাশ্রয়ী সেচ পদ্ধতি (এডব্লিউডি)’র মাধ্যমে জমিতে সেচ প্রদান করা হচ্ছে। ইউরিয়া সার অপচয় রোধের লক্ষ্যে এক হাজার ৭৫০হেক্টর জমিতে গুটি ইউরিয়া সার এবং ৩হাজার ৫শত হেক্টর জমিতে ইউরিয়া সাশ্রয়ের লক্ষ্যে লিফ কালার চার্ট (এলসিসি)’র ব্যবহার হচ্ছে নিয়মিত।

তিনি আরো জানান, উপজেলার ১৯টি সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা (আইপিএম) ক্লাবকে সক্রিয় করে পরিবেশ ঠিক রাখা ও ফসল উৎপাদন খরচ কমানোর উদ্দেশ্যে ফসলের জমিতে আইপিএম পদ্ধতিতে ফসলের রোগ বালাই ও পোকা-মাকড় দমনের কর্মসূচী চলমান রয়েছে। এছাড়াও চলতি বোরো মৌসুমে ধান ফসলের ৪টি এবং সবজি ফসলের ২টি কৃষক মাঠ স্কুলের কার্যক্রম চলছে।

হাদিরা ইউনিয়নের ভাদুরীরচর ব্লকের মামুদপুর গ্রামের বোরো চাষি ওয়াজকরণী তালুকদার (২৯) জানান, তার প্রায় ৫৫বিঘা আবাদি জমি রয়েছে। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে এসব জমিতে প্রতি বছর তিনি সোনা উৎপাদন করে থাকেন। কিন্তু ভরা মৌসুমে বিদ্যুতের আকালের কারণে সোনা উৎপাদন (বোরো ফলন) এর বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। মৌসুমের শুরুতে বিদ্যুত সরবরাহ আশানুরুপ থাকলেও বর্তমানে বিদ্যুতের ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। তার জমি গুলো চালিত সেচপাম্পের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু বিদ্যুতের বিপর্যয়ের কারণে তিনি সেখানে আরো একটি ডিজেল চালিত সেচপাম্প স্থাপন করেছেন। কিন্তু বিদ্যুত সরবরাহ উন্নতি না হলে এ অঞ্চলে আশানুরুপ বোরো উৎপাদন হবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন এ চাষি।

ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুত সমিতি-১ এর গোপালপুর জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. দেলোয়ার হোসেন মিঞা জানান, গোপালপুর উপজেলা, ঘাটাইল উপজেলার একাংশ ও ভূঞাপুর উপজেলার একাংশ নিয়ে গোপালপুর জোনাল অফিসের আওতাধীন অঞ্চলে ১২৫টি গভীর ও ৩হাজার ৯৩২টি অগভীর সেচযন্ত্র রয়েছে। আর পিক আওয়ারে অর্থাৎ বিকেল ৫টা হতে রাত ১১টা পযর্ন্ত বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ১৪.৫ মেগাওয়াট তিনটি ফিডার হতে গড়ে বিদ্যুত পাওয়া যাচ্ছে ২ মেগাওয়াডের মতো। আর অফ-পিক আওয়ারে চাহিদা ৮ মেগাওয়াট। এসময় গড়ে দেড় থেকে ২ মেগাওয়াট বিদ্যুত পাওয়া যাচ্ছে। তবে এসব বিদ্যুত বোরো ধানের সেচ যন্ত্র চালানোর জন্য বিশেষ গুরুত্ব সহকারে সরবরাহ করা হচ্ছে।

ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুত সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার মো. আব্দুর রাজ্জাক খান জানান, সারা দেশেই বিদ্যুত সঙ্কট রয়েছে। গোপালপুর উপজেলায় কোন সাব-ষ্টেশন না থাকায় পরিস্থিতি আরো খারাপ।

গোপালপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইউনুছ ইসলাম তালুকদার ঠাণ্ডু জানান, গোপালপুর উপজেলায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫ এমভিএ একটি সাব-ষ্টেশন  নিমার্ণ হচ্ছে। এটি হলেই এ অঞ্চলের বিদ্যুত পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হবে।

 
Ruby