শুক্রবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

ঠাকুরগাঁওয়ে ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টের প্রাদুর্ভাব


আল মাহামুদুল হাসান বাপ্পী, ঠাকুরগাঁও :: ঠাকুরগাঁওয়ে গত ২ দিনে ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত  শিশুর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। হাসপাতালের শয্যা সংকটের কারণে আক্রান্ত শিশুদের অভিভাবকরা শিশুদের নিয়ে চিকিৎসা নিতে এসে  ঠাই নিয়েছেন সদর হাসপাতালের বারান্দা ও খোলা আকাশের নীচে। হাসপাতালে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা দিতে প্রয়োজনীয় লোকবল ও শয্যা সংকটের কারনে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত দুই দিনে ১৮৮ টি শিশু ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ১৪৮টি শিশু ডায়রিয়ায় এবং ৪০টি শিশু শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত। বৃহস্পতিবার রাতে হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে আরও ২৫৭ টি শিশুকে। বহির্বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া শিশুদের মধ্যে অধিকাংশই ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত।
শুক্রবার সকালে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, মাত্র ১৮ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছে ১৮৮টি শিশু। শিশুদের সঙ্গে তাদের আত্মীয়-স্বজন আসায় ওয়ার্ডটিতে তিল ধারনের জায়গা নেই। শয্যা সংকটের কারনে ওয়ার্ডের  মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে অনেক শিশুকে।  অনেকে  শিশু ওয়ার্ডের মেঝেতে জায়গা না পেয়ে  বারান্দায় বিছানা পেতে শিশুর চিকিৎসা নিচ্ছেন। আবার অনেকে বারান্দায় জায়গা না পেয়ে খোলা আকাশের নীচে চিকিৎসা নিচ্ছে। বিছানার সাড়ি শিশু ওয়ার্ডের বারান্দা পেরিয়ে চলে গিয়েছে গাইনি ও প্রসূতি ওয়ার্ডের বারান্দা পর্যন্ত।  ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত শিশুদের কান্না ও অভিভাবকদের চিৎকারে পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠেছে। শয্যা ও জনবল সংকটের কারনে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। 
ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার ধর্ম গড় কাউন্সিল  গ্রামের সোনালী বেগম তার ১১ মাসের ছেলে বাবুকে নিয়ে ডায়রিয়া ইউনিটের পাশে খোলা আকাশের নীচে  বসে আছেন। তিনি জানালেন, বৃহস্পতিবার ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। দ্রুত চিকিৎসার পর অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার উনগাঁও গ্রামের গজেন্দ্র নাথ জানান, তিনি গত সোমবার  ডায়রিয়া আক্রান্ত ১০ মাস বয়সের ছেলেকে নিয়ে চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। তিনি জানান, গত তিন দিন ধরে হাসপাতালের বরান্দায় থেকে ছেলের চিকিৎসা করাচ্ছি। আক্রান্ত শিশুদের অভিভাবক হাসপাতালের ওয়ার্ড, মেঝে, ওয়ার্ডের বারান্দা ও দোতালার সিঁড়ি ঘরে আশ্রয় নিয়ে তাদের শিশুদের চিকিৎসা করাচ্ছেন। শয্যার তুলনায় আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বেশি বলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সরা রোগীর উপযুক্ত সেবা দিতে পারছেন না। ফলে শিশুরাও ভাল সেবা পাচ্ছেনা। এ অবস্থা দেখে অনেক অভিভাবক শিশুদের ক্লিনিকে ভর্তি করে চিকিৎসা করাচ্ছেন।
হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের মেঝেতে বিছানা পেতে ১১মাসের শিশু সুজননের চিকিৎসা করাচ্ছেন পঞ্চগড়ের সোল্টহরি গ্রামের কৃষক আব্দুল হাই। তিনি জানান, গত বুধবার তার ছেলে শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়। অবস্থার অবনতি হলে বৃহস্পতিবার হাসপাতালে নিয়ে আসি। এখানে এসে দেখি ওয়ার্ডের বাইরের বারান্দা পর্যন্ত আক্রান্ত শিশুদের বিছানার লাইন। বাইরের ক্লিনিকে ভর্তি করে চিকিৎসা নেওয়ার মত আর্থিক সচ্ছলতা না থাকার কারনে নিরুপায় হয়ে মেঝেতে আশ্রয় নিয়েছি।
শিশু ওয়ার্ডে কর্তব্যরত বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসক শাহজাহান নেওয়াজ জানান, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারনে শিশুরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। আবার মৌসুমের কারনে ৬ মাসের কম বয়সী শিশুরা ’ব্রাংকুলাইটিস’ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। মূলতঃ ’ব্রাংকুলাইটিস’ নিউমোনিয়ার কারন। তবে ঠিক সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে এবং সঠিক চিকিৎসা দেয়া গেলে সমস্যা হয় না। এই রোগে আক্রান্ত শিশুদের দ্রুত অকি্রাজেন দেবার প্রয়োজন হয়। হাসপাতালে চাহিদা অনুযায়ী অকি্রাজেন মজুদ আছে। 
সিভিল সার্জন আফজাল হোসেন তরফদার জানান, হাসপাতালের চিকিৎসা নিতে আসা আক্রান্ত শিশুর তুলনায় হাসপাতালের শয্যার সংখ্যা অত্যন্ত কম। শিশু ওয়ার্ডে মাত্র ১৮টি শয্যার মাধ্যমে তিন জেলার শিশুদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের হিমশিম খেতে হয়। আক্রান্ত শিশুদের উপযুক্ত সেবা দিতে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের বাড়তি সময় দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। 

Ruby