বুধবার, ২১ মার্চ, ২০১২

বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে ভোগান্তির শিকার ঠাকুরগাঁওয়ের বোরো চাষিরা

আল মাহামুদুল হাসান বাপ্পী, ঠাকুরগাঁও :: চলছে ইরি-বোরো চাষাবাদের ভরা মৌসুম। সারে, ভেজাল, কীটনাশকের মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুতের ঘনঘন লোডশেডিং, কৃষি শ্রমিকের মজুরী বৃদ্ধি, মাটির উর্বরতা শক্তি হ্রাস ইত্যাদি সমস্যার সাথে নতুন করে যোগ হয়েছে সেচ পানির মূল্যবৃদ্ধি। পানির মূল্যবৃদ্ধির ফলে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে এলাকার কৃষকেরা। ইরি-বোরো চাষের অন্যতম প্রধান উপকরণ পানি। কিন্তু সেই পানিও আর পানির দরে নইে, গতবারের তুলনায় দাম বেড়েছে ২-৩ গুণ।

স্থানীয় কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ঠাকুরগাঁও জেলায় ৬৭ হাজার ৫৫৪ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান রোপনে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। ইতোমধ্যে জেলায় বিআর-২৯ জাতের ধান ৫৭ হাজার ৪২৫ হেক্টর জমিতে রোপন করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার ৮৫ ভাগ জমিতে ইরি বোরো রোপন করা হলেও বিআর-২৮ ও হাইব্রীড জাতের ধান রোপন অব্যাহত রয়েছে। কৃষি বিভাগের মতে, এ বছর লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে বেশি জমিতে ইরি-বোরো রোপন করা হবে। বাজারে সার কীটনাশকে ভেজাল ও মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্যুতের লোডশেডিং, কৃষি কাজে শ্রমিকের (কামলা) মজুরী বৃদ্ধি ইত্যাদি সমস্যায় প্রায় হাঁপিয়ে ওঠে এ জেলার কৃষকেরা। নানামূখি সমস্যা মোকাবেলা করেও তারা ইরি বোরো রোপন করেছেন। সব কিছুর পর নতুন সমস্যা দেখা দিয়েছে ক্ষেতে সেচ পানির মূল্য নিয়ে। ঋতুচক্রে এখন চৈত্র মাস। আকাশে বৃষ্টির কোন আভাস নে॥ি নদী-নালা, খাল-বিল পানি শূণ্য। ইতোমধ্যে সবল সবল হয়ে উঠছে ইরি বোরো চারা। ক্ষেতকে বাঁচাতে কৃষকরা এখন ছুটছেন গভীর-অগভীর পাম্প ও শ্যালোমেশিন মালিকদের কাছে। আর এতে একশ্রেণির পাম্প ও শ্যালোমেশিন মালিক বিদ্যুৎ এবং তেলের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে গত বছরের তুলনায় প্রায় ২-৩ গুন অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে কৃষকদের কাছ থেকে। তার পারও ভোগান্তির শেষ নেই এ উপজেলার কৃষকদের। লোডশেডিং আর সিরিয়ালের ফাদে পড়ে অনেককে রাত পার করতে হচ্ছে ক্ষেতে।

সরেজমিনে দেখা যায়, গত বছর প্রতি ঘন্টা সেচের মূল্য ছিল ৪০ থেকে ৬০ টাকা এখন তা ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। আবার কোন কোন এলাকায় ঘন্টার পরিবর্তে মৌসুম চুক্তি প্রথা এক্ষেত্রে বিঘাকে (৩০ শতক) একক হিসেবে ধলা হয়। গত মৌসুমে এলাকাভেদে প্রতি বিঘা জমির সেচ চুক্তি ছিল ৭’শ টাকা থেকে সাড়ে ৮’শ টাকা। এখন তা ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২’শ টাকা। তবে পানির মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে পাম্প ও শ্যালোমেশিন মালিকরা দায়ী করছেন জ্বালানী তেল ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিকে।

কলেজ পাড়ার এলাকার কৃষক আদম আলী বলেন, এখন খরা মৌসুম, এ মৌসুমে সার কীটনাশকের তুলনায় ক্ষেতে পানির প্রয়োজন বেশি। তিনি তার ক্ষেতে এ পর্যন্ত ৮ বার সেচ দিয়েছেন। গতবার ঘন্টা প্রতি ৪০ হতে ৫০ টাকা দরে পানি কিনে ছিলেন কিন্তু এবার হচ্ছে ১৪০ টাকা দরে। তাছাড়া পানি পেতে সিরিয়ালের ভোগান্তির কথাও জানান তিনি।

একই অবস্থা রায়পুর ইউনিয়নেও। ওই ইউনিয়নের কৃষক তোফায়েল হোসেন পানির মূল্যবৃদ্ধির কথা স্বীকার করেন। তিনি বিদ্যুৎ চালিত অগভীর পাম্প থেকে জমিতে সেচ দিচ্ছেন। গত ৮’শ টাকার মৌসুম চুক্তি দিলেও এবার দিতে হবে ১ হাজার ১’শ টাকা। লোডশেডিংয়ের কারণে সেচ দিতে বিড়ম্বনার শিকার হন বলে অভিযোগ করেন।

সদর উপজেলা আকচা এলাকার কৃষক মাজেদুর রহমান মাদানি অভিযোগ করেন। এছাড়াও কলেজপাড়া, রায়পুর, আকচা ও পৌর এলাকার একাধিক কৃষক ইরি বোরো চাষে পানির অতিরিক্ত মূল্যকে অন্যতম সমস্য হিসেবে দেখছেন। তারা পানির মূল্য নির্ধারণে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এদিকে কৃষকদের অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেন গভীর ও অগভীর পাম্প এবং শ্যালো মেশিমের একাধিক মালিক। তারা বিদ্যুতের ঘনঘন লোডশেডিং ও জ্বালানী তেলের মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করছেন। তবে পানি পেতে সিরিয়াল ভোগান্তির বিষয়টি অতিরিক্ত চাহিদার কারণে হচ্ছে বলে জানান, দেহন এলাকার কৃষক বসির।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বেলায়েত হোসেন জানান, কৃষকদের কাছে ইরি বোরো ক্ষেতে সেচের পানির অতিরিক্ত মূল্য নেওয়ার বিষয়টি শুনেছি। কিন্তু সেচের পানি বন্টন নিয়ে সরকারী কোন নীতীমালা না থাকায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে কৃষকেরা সচেতন হলে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।

 
Ruby