শুক্রবার, ১৬ মার্চ, ২০১২

দেশ ভাগের পর নওগাঁর ৯৫ ভাগ আদিবাসী জমি হারিয়েছে তারা মনে করত জমি হল প্রাকৃতিক সম্পদ এর উপর মানুষের কৃর্তত্ব থাকা উচিত নয়

মোঃ আককাস আলী, নওগাঁ প্রতিনিধি :: নওগাঁর বির্স্তীন বরেন্দ্র অঞ্চলের জঙ্গল, উচু-নিচু জমি কেটে আদিবাসীরাই আবাদযোগ্য করে তুলেছিল। এরপর বিভিন্ন আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ুকারনে জমি হারিয়ে নওগাঁর আদিবাসীরা ভূমিহীনে পরিনত হয়েছে। অনুসন্ধানে দেখে গেছে, ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের পর থেকে এ পর্যন্ত ৯৫ভাগ আদিবাসী তাদের জমি হারিয়েছে। অবশিষ্ট যে ৫ ভাগ আদিবাসীদের নিজস্ব জমি আছে তারাও জমি হারানোর আতংকের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। এমনকি আদিবাসী গোরস্থানগুলো দখলদারের কবল থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। নওগাঁর আদিবাসীদের জমি বিভিন্ন কৌশলে দখল করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। ১৯৫০ সালে রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজাতন্ত্র আইনে নিজ নিজ নামে জমি রেকর্ডের সুযোগ সৃষ্টি হলেও সাংস্কৃতিক কারনে আদিবাসীরা তা করিেন। কেননা আদিবাসীরা মনে করত জমি হল প্রাকৃতিক সম্পদ। এর উপর মানুষের কর্তৃত্ব াকা উচিত নয়। এ চিন্তা চেতনা থেকে আদিবাসীরা তাদের নিজেদের নামে জমি রেকর্ড করে নিয়েছে। এখান থেকেই আদিবাসীদের ভুমি হারানো শুরু। ১৯৪৭ সালে দেশভাগ ও ১৯৭১সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন অন্যানের মত প্রায় অধিকাংশ আদিবাসীরাই বেঁচে াকার আশায় ভারতে পাড়ি জমায়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তারা বাড়ী ফিরে এসে আর জায়গা-জমি ফেরত পায়নি। তাদের জমি দখল করে নেওয়া হয়েছে। আদিাসীরা সংখ্যালঘু হওয়ার কারনে তারা কোন প্রতিবাদ করতে পারেনি। অনেকেই মনের দুঃখে আবার ভারতে পাড়ি জমিয়েছে। আবার অনেকেই নিজের জমিতে দিন মজুর হিসেবে তাদের তাদের জীবন নতুন করে শুরু করেছে। মুক্তিযুদ্ধের পর যে সব আদিবাসী আর ফিরে আসেনি তাদের জমি সমাজের প্রভাবশালীরা দখল করেছে এবং এক সময় তাদের নামে রেকর্ড নিয়েছে। ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহন ও প্রজাতন্ত্র আইনে ৯৭ ধারা অনুযায়ী আদিবাসী কর্তৃক আদিবাসীদের জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের অনুমোদন নেয়ার নীতিমালা াকলেও আদিবাসীদের চিহিৃত করণ বিষয়ে সুনিদিষ্ট ঘোষনা না াকায় তা কার্যকর হচ্ছে না। এ বিষয়টিই এখন প্রতারনার ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রায় ৪৫টি আদিবাসী সম্প্রদায় বাস করলেও ৯৭ ধারায় মাত্র ৮টি সম্প্রদায়ের কথা বলা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই উক্ত ৮টি সম্প্রদায় ছাড়া অবশিষ্ট সম্প্রদায়গুলোকে সরকারী কর্মকর্তারা আদিবাসী হিসেবে আমলে নিচ্ছে না। আবার যে সকল সম্প্রদায়ের নাম আইনে উলে¬খ আছে তাদের সস্পত্তি ক্রয়ের ক্ষেত্রে ও জেলা প্রশাসকের অনুমতির ঝামেলা এড়ানোর জন্য কৌশলের আশ্রয় নেয়া হচ্ছে। উরাও পদবীধারীদের সরদার উপাধি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন কর্মকর্তার সামনে উপস্থাপন করা হচ্ছে। ফলে আদিবাসীদের জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে অনুমতির ঝামেলা ক্রেতাদের পোহাতে হচ্ছে না। আদিবাসীরা যেহেতু বিভিন্ন কারনে তাদের জমি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে তা বুঝেই হোক আর না বুঝেই হোক এ বিষয়ে তারা কোন ভুমিকা রাখছে না। অনেক ক্ষেত্রেই আদিবাসীদের শিখিয়ে দেওয়া কথা বলিয়ে ও ভয় দেখিয়ে দলিলে বেশী জমি রেজিস্ট্রি করে নিয়ে তাদের সাথে প্রতারনা করা হয়। আদিবাসীদের জমি দখলের ক্ষেত্রে সচারাচর যা করা হয় তা হলো কাগজ পত্রের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাদের ভিটে মাটি হতে উচ্ছেদ করা। আদিবানীরা সহজ-সরল ও নিরক্ষর হওয়ার কারনে অফিস আদালতে তাদের যোগাযোগ কম এবং কাগজপত্র বিষয়ে উদাসীন। দীর্ঘ দিন ধরে খাজনা পরিশোধ না করার কারনে সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী তাদের জমি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়ে যায়। আর এ সুযোগ কাজে লাগায় সমাজের এক শ্রেণীর সুযোগ সন্ধানী চতুরবাজেরা।
Ruby